গোয়েবেলসের বাক্স / The Idiot Box

ছেলেমেয়েগুলো আজও রাস্তায় বসে, প্যানেলে নাম থাকতেও তাদের একজনেরও চাকরি হয়নি। বিচারপতির কলমের গুতোয় পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরি গেলেও, তার কোনো শাস্তি এখনো হয়নি, কারণ বেআইনি ভাবে উপার্জন করে টাকা ফেরানোকে শাস্তি বলা যায় না। তারপরে জানা গেলো বীরভূমের কেষ্ট কন্যা টেট পরীক্ষা না দিয়েই বাড়িতে বসেই সরকারী বেতন পেতেন, উনি স্কুলে পড়াতে না গেলেও, স্কুলের হাজিরা খাতা চলে আসত তার বাড়ি। কেষ্ট পরিবারের আপাতত ব্যাঙ্কে নগদ স্থায়ী আমানতের পরিমাণ হল ১৭ কোটি টাকা। বনমন্ত্রীকন্যা আবার চাকরি না পেয়ে, শুধু টিউশন করেই নাকি তিন বছরে তিন কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা ছেড়েই দিলাম, উনি কি করেছেন তা সবাই জেনেও প্রায় ভুলতে যাওয়ার পথে, কারণ একজন টেলিভিশন জুড়ে কেষ্টকীর্তি এবং নবতম সংযোজন “নতুন তৃণমূল”। দিনে দিনে সংবাদের এত উন্নয়ন হলেও, প্যানেলে নাম ওঠা ছেলেমেয়েগুলো আজও রোদ্দুরে পুড়ছে। আজও নাকি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে এনাদের ৬ জনের প্রতিনিধি দলের ইতিবাচক সদর্থক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কবে চাকরি হবে, তা কেউ জানে না। আদালত বলে দিয়েছে এসএসসি বা টেট পরীক্ষায় পাশ করা চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ পেতে কোন আইনি বাধা নেই। যারা আন্দোলন করছে তাদের দাবি, পরীক্ষায় পাশ করা ন্যায্য যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিতে হবে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী বলছেন সমস্যার জট ছাড়াচ্ছি। কোন সমস্যা বা কিসের জট!

সংবাদমাধ্যমের তরফে কোন পাল্টা প্রশ্ন নেই! কেন নেই! তা কি শুধুই টিআরপি’র খোঁজ! নাকি সরকারী বিজ্ঞাপনের লোভ! শাসকের চোখ রাঙানির সামনে মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে ফেলা!

এভাবে আমাদের চোখের সামনে এত্ত বড় দেশের প্রায় সবকটা প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমের এভাবে কেন্দ্র অথবা রাজ্যস্তরের শাসকের সামনে নতিস্বীকার করে নেওয়া খুবই পীড়াদায়ক এবং সমাজের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকারক! কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বাম দলগুলির কাছে যারা এক সময় সর্বত্র শ্রেণীশত্রু খুঁজে বেড়াতেন, তারা আজ এই মিডিয়া নামক নতুন গজিয়ে ওঠা সমাজশত্রুদের বিরুদ্ধে কি কোন আন্দোলনের কথা ভাবছেন!

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস বাংলার খুঁটিনাটিতে যেহেতু সেইসব খবরের খোঁজ খবর ও বিশ্লেষণ করি যা মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম জনসমক্ষে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে না, তাই আমরা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি, ঠিক কিভাবে এই সংবাদমাধ্যম এই রাজ্যের বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তিকে একটি প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত করেছে। এর পিছনে তাদের কি উদ্দেশ্য আমরা জানি না, কিন্তু উদাহরণ গুলো এক এক করে পড়লেই বুঝতে পারবেন, আমরা যা বলছি তার মধ্যে এতটুকু অতিরঞ্জিত ব্যাপার নেই।

১) কয়েকদিন আগে সুজন চক্রবর্তীর সাংবাদিক সম্মেলনে জানা গেল আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নাকি দু খানা প্যান কার্ড

  • কোন টিভি চ্যানেল দেখিয়েছে বা বলেছে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে?
  • কোন খবরের কাগজ পরের দিন ছেপেছে?
  • কোন প্রথমসারির নিউজ পোর্টাল খবর করেছে?

২) গতকাল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কার্যত লাল সুনামি দেখা গেছে বামেদের দুটি মিছিলে। পূর্ব মেদিনীপুরের মিছিলটিতে ছিলেন সুজন চক্রবর্ত্তী ও নিরঞ্জন সিহি। পশ্চিম মেদিনীপুরের মিছিলটিতে ছিলেন মহম্মদ সেলিম এবং সুশান্ত ঘোষ।

  • কোন টিভি চ্যানেল দেখিয়েছে সেভাবে যেভাবে তৃণমূল বা বিজেপির মিটিং-মিছিল কভার করে ?
  • কোন খবরের কাগজ আজ ছেপেছে?
  • কোন প্রথমসারির নিউজ পোর্টাল খবর করেছে?

৩) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি দুবাইতে! চোখের চিকিৎসার অছিলায় কয়লা মাফিয়া বিনয় মিশ্রের সাথে মিটিং করতেই ওনার দুবাই যাত্রা। দাবি করছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

  • কোন টিভি চ্যানেল দেখিয়েছে সেভাবে?
  • কোন খবরের কাগজ ছেপেছে?
  • কোন প্রথমসারির নিউজ পোর্টাল খবর করেছে?

এই সবকটি প্রশ্নের উত্তর হল, “না”।

অথচ, এইসব সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাই সকাল বিকেল যা ক্রমাগত আওড়ে যান তা হল বামেরা কোথায়? রাস্তায় দেখাই যায় না.. ইত্যাদি। মানে একদিকে এনারা বামেদের রাজনৈতিক কর্মসূচী সেভাবে দেখান না, অন্যদিকে ক্রমাগত বলে যান বামেরা শূন্য, কোথাও নেই। নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে সমস্ত সংবাদমাধ্যম এই প্রচারটাই দুর্দান্তভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা গোয়েবেলস থিওরি মেনে এভাবেই একটা মিথ্যেকে বারবার বলে, সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে দিচ্ছে। আর দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এতে অনেক বাম কর্মী-সমর্থক সেটা বিশ্বাস করে ফেলছে এবং প্রভাবিত হয়ে পড়ছে। মনোবল হারিয়ে তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে বা বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছে। আর ভোটবাক্সে বামেরা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে!

তবে এই সংবাদমাধ্যম শুধু বামেদেরকেই নয়, রাজ্যের শিল্প ও কর্মসংস্থানের সমস্যা, দৈনন্দিনকার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকদের ফসলের দাম না পাওয়া, সারের কালোবাজারি, পরিযায়ী শ্রমিকের ভিনরাজ্যে গমন, রাজ্যের একের পর এক সরকারী স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, শিক্ষার মত সার্বজনীন বিষয়কে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্দশা ইত্যাদি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়, যা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে তা নিয়ে এদের কোন মাথাব্যাথা নেই!

এরা খালি রাজনৈতিক কেচ্ছা-খেউর আর টিআরপি খোঁজে। আর এসবের মধ্যেই জনমানসকে মজিয়ে রেখে জীবনের জলন্ত সমস্যাগুলো থেকে নজর হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কাজেই শ্রেনীশত্রু পরে চিনবেন কমরেড!

আগে সমাজশত্রু, আসল ভিলেনদের চিনুন।

এরপর সংবাদমাধ্যম বামেরা কোথায় টিপ্পনী কাটলে পাল্টা প্রশ্ন করা হোক, নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম কোথায়!

কারণ সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন করার কাজটা জনসাধারণের থেকে, কোন স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের পক্ষে করা সোজা।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস