স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যহানি / Primary health centers in Coochbehar
মেদিনীপুরে পায়ে চোট, চিন্তা নেই, সাড়ে বারো নম্বর অ্যাভেলেভেল আছে কলকাতায়। বীরভূমে বুকে ব্যথা, চিন্তা নেই উডবার্ন আছে তো কলকাতায়। নাহ্, এই সুবিধা আপনার জন্যে নয়, হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও সেই সুবিধা নেই আপনার। আর যদি আপনি কোচবিহার জেলার গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আপনার জন্যে সাধারণ সরকারী স্বাস্থ্য পরিষেবাটাই প্রায় নেই বললে চলে।
কোচবিহার জেলার গ্রামীণ মানুষ তাদের নিকটবর্তী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপরই অনেক নির্ভরশীল। জেলার প্রান্তিক মানুষেরা এইসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওষুধের ওপর ভরসা করে থাকেন। কিন্তু একের পর এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
শেষ কয়েক মাসে দেশজুড়ে ওষুধের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলায় সমস্যায় পড়েছেন কোচবিহার জেলার প্রান্তিক মানুষেরা। তার ওপর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দামেও আগুন লেগেছে। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কিনতে পারছেন না। পারিবারের কেউ অসুস্থ হলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী কোচবিহার জেলায় ৩১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই শূন্যপদের আধিক্য। এমনকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বহু চিকিৎসকের পদও ফাঁকা। ফলস্বরূপ কোচবিহারের গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান এই মুহূর্তে তলানিতে। কতটা তলানিতে, তা আপনারাই দেখে নিন।
১) কোচবিহার-১ ব্লকের পুঁটিমারি ফুলেশ্বরী ও চিলকিরহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ বন্ধ!
২) মাথাভাঙ্গা-২ ব্লকের পারডুবি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ বন্ধ, চিকিৎসকহীন। সেখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট-স্বাস্থ্যকর্মীরা।
৩) ক্ষেতি ফুলবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
৪) হলদিবাড়ির আঙুলদেখা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসকের অভাবে অন্তর্বিভাগ প্রায় দুই বছর থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
৫) শীতলকুচির ছোট শালবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে।
৬) দিনহাটা-১ ব্লকের ওকরাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক নেই, ফার্মাসিস্ট দিয়ে কোনওরকমে বহির্বিভাগ চালানো হচ্ছে।
৭) সিতাই ব্লকের অবস্থা আরও খারাপ, ব্রহ্মোত্তরচাতরা গ্রাম পঞ্চায়েতের নাকারজান এবং আদাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পেটলা-আদাবাড়ি গ্রামে দুটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতেও কোনও চিকিৎসক ও নার্স নেই, অন্তর্বিভাগ-বহির্বিভাগ কার্যত সবই পুরোপুরি বন্ধ। পেটলা-আদাবাড়িতে একজন ফার্মাসিস্ট রোগীদের ওষুধ দেন।
৮) তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের দেওচড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে অন্তর্বিভাগ বন্ধ, বহির্বিভাগ চলছে কোনরকমে।
একে কোচবিহার জেলার স্বাস্থ্যব্যবস্থার স্বাস্থ্যহানি ছাড়া আর কি বা বলা যায়, আপনারাই বলুন।
তবে কোচবিহার জেলার এক প্রভাবশালী বিধায়কের জন্মদিনে “রুপোর মুকুট” পড়ার প্রতিবেদন আপনারা প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে ঘটা করে প্রকাশ করায় জানতে পারলেও, কোচবিহারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই বেহাল দশার খবর আপনি দেশের এবং রাজ্যের কোনো প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে পাবেন না, কারণ এই খবরটি হয়তো শাসকের দৃষ্টিতে “পজিটিভ” নয়।
Comments are closed.