সন্দেশখালি ভিডিও’র পিঠে-সন্দেশ / The Cake

এই মুহুর্তে সন্দেশখালির যে ভিডিও বাজারে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা দেখিয়ে দাবী করা হচ্ছে, সন্দেশখালির মা-বোনদের ধর্ষনের যে ঘটনা সামনে আনা হয়েছে তা আদতে ‘সাজানো ঘটনা’! বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র সহ যে সমস্ত একঝাঁক মহিলারা নিজেরা ধর্ষিত হয়েছেন বলে দাবী করেছেন, সেটা মিথ্যে। মাত্র দু-তিনহাজার টাকার বিনিময়ে তাদেরকে দিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে ও পুলিশের খাতায় এই মিথ্যে অভিযোগ করানো হয়েছে। আর এই ফেক সাজানো ঘটনার মূল হোতা বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

কেন্দ্রে বিজেপির সরকার CBI তদন্ত করবে কি সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিও নিয়ে? বিজেপির তরফে এই ভিডিও নিয়ে থানায় FIRও আদৌ করা হয়েছে কি! নাকি বিজেপির ‘শক্তিস্বরূপা’দের আসল ‘স্বরূপ’ উন্মোচিত হয়ে যাবে, তাই দলের তরফে তদন্তের দাবি করে ভোট বাজারে হাওয়া গরম করলেও বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি কিসুই করবে না!

পাশাপাশি রাজ্য সরকার ও তার পুলিশও চাইলে সন্দেশখালির যে ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে তার সত্যতা যাচাই করতে পারে। ভিডিওটা আসল না ফেক তার ফরেনসিক পরীক্ষা করতে ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় লাগবার কথা নয়। অধীর চৌধুরীর ‘তৃণমূলের থেকে বিজেপিকে ভোট দেওয়া ভালো’ ভাষণ সমন্বিত যে ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছিল, সেটা যে ফেক ও অসম্পূর্ণ তা যাচাই করতে রাজ্য পুলিশের কিন্তু দুদিন সময় লেগেছিল! তাই আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস আশাবাদী এই মুহুর্তে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ পুলিশ প্রশাসন সন্দেশখালির মা-বোনদের সম্মান রক্ষার্থে সদর্থক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এমন কোন পদক্ষেপ দুই তরফেই নেওয়া হচ্ছে না দেখে আমরা কিছুটা হলেও অবাক।

তৃণমূল ও বিজেপি, এই দুই যুযুধান পক্ষ একে অপরকে মিডিয়াকে ডেকে কামান দেগে যাচ্ছে, অথচ তাদের পরিচালিত রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার কাজের কাজটা করছে না। কেন? তবে কি তারা চাইছে না, ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করতে? কারণ ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করতে পরীক্ষা করা হলে, যেমন যে কোন এক পক্ষের জয় হবে, তেমনই বিবদমান অপরপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা এই ভোট বাজারে একদম তলানিতে এসে ঠেকবে। দুই সরকার কি সেই অবস্থাটা এই মুহুর্তে এড়িয়ে যেতে চাইছে?

আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের মনে হয়েছে যদি দেখা যায় ভিডিওটা ফেক, তাহলে তৃণমূল দলের ও তাদের তথাকথিত সেনাপতি’র ভাবমূর্তি জোর ধাক্কা খাবে। জনমানসে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে চলে যাবে। আর যদি উল্টোটা হয়, মানে এই ভিডিওর সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে কিন্তু তৃণমূলের জমি হাঙর বাহিনী বিগত এক দশকের ওপর সন্দেশখালি জুড়ে যে মৌরসীপাট্টা জমিয়ে গরীবের জমি-বাড়ি কেড়েছে তা ধামা চাপা পড়ে যেতে পারে, কারণ বিজেপির তরফে জনগণেশের নজর কিন্তু সন্দেশখালির শাজাহানবাহিনীর জমি লুঠ থেকে ‘রাত-বিরেতের পিঠে উৎসব’এ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর তাই আমরা আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, সন্দেশখালির শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ ছিল আদিবাসীদের থেকে বলপূর্বক একরের পর একর জমি-পুকুর হাতিয়ে নেওয়ার যা এই গরীব আদিবাসীরা বাম আমলে বর্গা আইনের বলে পাট্টা হিসেবে পেয়েছিল।

আর বামেদের কথা যখন এসেই গেল, তখন এই মুহুর্তে তারা শূন্য হলেও তাদের বক্তব্যটাও এখানে জুড়ে দেওয়া জরুরি। কারণ আমরা নিরপেক্ষ। তাদের দাবী হলো তৃণমূলী শাহজাহানদের দেদার জমি লুঠকে আড়াল করতেই বঙ্গ বিজেপি নেমেছিল ধর্ষনের ফেক সাজানো ঘটনা নিয়ে হিন্দু-মুসলিম ন্যারেটিভ তৈরি করতে! কারণ তৃণমূলের বিরুদ্ধে জমি হাতানোর অভিযোগ যে সময়কালের সেই সময় বর্তমান বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও তৃণমূল করতেন। বামেদের তরফে এক মঞ্চে শাহজাহান ও শুভেন্দুর ছবিও ভাইরাল করা হয়েছিল। আর সেদিক থেকে নজর ঘোরাতে হিন্দু-মুসলিম ন্যারেটিভ’ এর মত একটা জোরালো হাতিয়ার দরকার ছিল।

কাদের দাবী সঠিক, কতটা যুক্তি সঙ্গত সে বিচার করবেন পাঠকেরা।

কিন্তু প্রশ্নগুলো উঠছেই এবং ধেয়ে যাচ্ছে তৃণমূল-বিজেপি মূলতঃ দুই দলের দিকে, কারণ এই দুই দল বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা চাইলেই সময় নষ্ট না করে এই ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করতে পদক্ষেপ নিতে পারে।

তাই আমাদের দাবী অযথা বাজার গরম না করে সন্দেশখালি ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করে অবিলম্বে তা জনসমক্ষে আনা হোক। ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাক। রাজ্যবাসী সত্যিটা জেনে ইভিএম এ বোতাম টিপতে যাক।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস