প্যাড ওম্যান / Pad Woman

“প্যাড ম্যান” সিনেমা মানেই অক্ষয় কুমার আর রাধিকা আপ্তে! অরুণাচলম মুরুগানাথন কে আমরা কজনই বা চিনি। অথচ এনার জীবনী নিয়েই ‘প্যাড ম্যান’ সিনেমাটা যার চরিত্রে অভিনয় করে ‘সুপারস্টার’ অক্ষয় কুমার দেদার হাততালি পান।

তা কে এই অরুণাচলম মুরুগানাথন? তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোরের বাসিন্দা এক গরীব স্বামী যিনি নিজের স্ত্রী-এর রজঃস্বলা সময়কালে স্যানিটারি প্যাডের বিকল্প হিসেবে অ-স্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন কাপড় /কাগজের ব্যবহার দেখে আঁতকে ওঠেন এবং এই অবস্থা থেকে গরীব নিম্নবিত্ত ঘরের মা-বোনদের মুক্তি দিতে কম খরছে সুলভ স্যানিটারি প্যাড বানিয়ে দেশকে তাক লাগিয়ে দেন। এমনকি তার জন্য আইআইটি মাদ্রাজের সহযোগিতায় তিনি একটি স্যানিটারি প্যাড বানানোর কম দামি যন্ত্র পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছেন। এই মুহুর্তে আমাদের দেশের তেইশটা রাজ্যের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে সেই যন্ত্র যার সাহায্যে গ্রামের মহিলারাই বিভিন্ন স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্যে তাদের প্রয়োজনীয় স্যানিটারি প্যাড তৈরি ও বিক্রি করেন।

আমরা এক-দু লাইনে লিখলাম ঠিকই, কিন্তু কাজটা ছিল ভীষণ কঠিন। আর সেই বিষয়বস্তুর ওপরেই ‘প্যাড ম্যান’ আস্ত সিনেমাটা বানানো! আর এমন একজন গুণী-কৃতি মানুষকে খুঁজে বার করে ২০১৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেও কুর্নিশ!

কিন্তু শুধু কম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন করলেই হয় না, তা ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা গড়ে উঠলে তবেই গ্রামে গ্রামে স্ব-নির্ভরগোষ্ঠী গড়ে তুলে ন্যাপকিন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। আর তারই ফলশ্রুতিতে গাঁ-গঞ্জের ঘরে ঘরে প্রত্যেক মহিলাদের কাছে সুলভে কম খরচে ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়া যাবে, নচেৎ নয়। আর সেই সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটা করে থাকেন গা-গঞ্জের কিছু অনাম্নী মহিলা। এমনকি সুলভে ন্যাপকিন তৈরির জন্য স্ব-নির্ভরগোষ্ঠী গড়ে তুলতেও এনারা অগ্রণী ভূমিকা নেন। কাজেই গ্রামের গরীব মহিলাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ন্যাপকিনের ব্যবহার চালু করতে ও চালু রাখতে এই ‘প্যাড ওম্যান’দের লড়াইটাও কম প্রশংসাযোগ্য নয়।

আর আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে এমনই এক ‘প্যাড ওম্যান’এর সন্ধান দিল সিপিআই(এম)। নাম সোনামণি টুডু (মুর্মু)।

সাইকোলজিতে MA পাশ করা এই আদিবাসী তরুণী ছাত্রাবস্থা থেকেই নানাবিধ সামাজিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত। তারমধ্যে রয়েছে গ্রামের মহিলাদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজও। হ্যাঁ, ইনি হলেন বাংলার জঙ্গলমহল থেকে উঠে আসা একজন অনাম্নী আদিবাসী “প্যাড ওম্যান”। আর এমনই এক লড়াকু নারীকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়তে পাঠিয়ে তার সামাজিক লড়াইকে আলোকবৃত্তে এনে ফেলেছে রাজ্য সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। কাজেই অল্প হলেও তাদেরও প্রশংসা প্রাপ্য।

অবশ্য এই সোনামণি টুডুর আরও একটা পরিচয় আছে। বাংলা, হিন্দী ও সাঁওতালী ভাষায় তুখোর বক্তৃতা করতে পারা এই মেয়েটি DYFI এর পুরুলিয়া জেলা কমিটির সদস্য, অর্থ্যাৎ ইনি “ক্যাপ্টেন” মীনাক্ষী মুখার্জ্জীর সহযোদ্ধা! কাজেই আগামীদিনে নির্বাচনী প্রচারে আমরা ‘সোনামণি-মীনাক্ষী’ যুগলবন্দী’র সাক্ষী হতেই পারি।

কিন্তু আপাতত আমরা চাই, ‘ফিল্মস্টার’দের আটচালা বাড়ির উঠোনে পাত পেড়ে ভাত খাওয়ার ফুটেজের পাশে ‘লাল ঝান্ডা’ কাঁধে জঙ্গল মহলের এক আদিবাসী ‘অনাম্নী’ প্যাড ওম্যানের ছবিও থাক। নীচে লেখা থাক তার নামটাও। সোনামণি টুডু (মুর্মু)।

আমরা চাই ভোট আসুক, ভোট যাক, সোনামণি টুডুরা আসুক, সোনামণি টুডু’রা থাক।

আজ এটুকুই। আপনারাও সঙ্গে থাকুন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস