‘মূষিক’ মালসাট / Who Are They?

পর্বত মূষিক প্রসব করল, নাকি উইপোকার ঢিবিকে অ-‘নিরপেক্ষ’ পক্ষপাতদুষ্ট বঙ্গ সংবাদমাধ্যম ‘পর্বত’ বানিয়েছিল, তা নিয়ে আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের ধন্দ কাটছে না। ‘বাগাড়ম্বর’কে ‘বাঘা’র গর্জন বানিয়ে টিআরপি হাসিলের কৌশল অবলম্বন করে, বঙ্গবাসীর চিন্তাভাবনাকে বিপথে চালিত করতে আপাতসফল ‘বঙ্গমিডিয়া’ কি তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে একটু বেশিই ‘স্টেপ-আউট’ করে ফেললো, তাও এই মুহুর্তে লাখ টাকার প্রশ্ন।! আর এসবই আমাদের মনে হচ্ছে সাম্প্রতিক অতীতে বঙ্গ রাজনীতির সর্বাধিক আলোচিত দুই রাজনৈতিক চরিত্রকে ঘিরে। এদের একজনের নাম অভিজিৎ গাঙ্গুলী। আর অন্যজন হলেন নওশাদ সিদ্দিকি।

প্রথমজন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে, রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপি জয়েন করে ঘোষণা করেছিলেন যে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ‘তালপাতার সেপাই’ তথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে ‘লাখ -লাখ’ ভোটে হারাবেন।

আর দ্বিতীয়জনও বিগত নভেম্বরে রীতিমত ‘কসম’ খাওয়ার মত হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে, তিনিও নাকি ডায়মন্ডহারাবার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ঐ অভিষেক বন্দ্যোপাধায়কেই হারিয়ে ‘পরাজিত এমপি’ বানিয়ে তাঁকে কালীঘাটে ফেরত পাঠাবেন। যদিও অভিজিৎ বাবুর মত নওশাদ কত ‘লাখ’ ভোটে ‘ভাইপো’বাবুকে হারাবেন সেটা খোলসা করেননি।

কিন্তু এসবই যে আসলে মিডিয়ার ফুটেজ খাওয়ার মরিয়া প্রয়াস ছিল, তা আজ দিনের আলোর মত পরিষ্কার। কারণ কেউই শেষ পর্যন্ত ডায়মন্ডহারবার থেকে ভোটে লড়লেন না। অভিজিৎ গাঙ্গুলী শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ালেন এই মুহুর্তে বঙ্গ বিজেপির সর্বময় হত্তাকত্তা শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির পাশে তমলুকে। মানে বিজেপির তরফে বার্তা স্পষ্ট। অভিজিৎ গাঙ্গুলীর ‘ভাবমূর্তি’ এমন কিছু না যা দিয়ে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে ‘তালপাতার সেপাই’কে হারানো যাবে! ‘লাখ-লাখ’ ভোটে হারানো তো দূরঅস্ত! ইনফ্যাক্ট এখনও বঙ্গ বিজেপি ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে লড়াই দিতে পারে এমন যোগ্য ‘প্রার্থী’ও খুঁজে পায়নি। ‘গরু খোঁজা’র মত খোঁজা চলছে। আর এরই সাথে আরও যে সত্যিটা সামনে চলে এসেছে, তা হলো শুধু ডায়মন্ডহারাবার কেন, অভিজিৎ গাঙ্গুলীর জন্য ‘নিশ্চিত’ আসনের খোঁজে অধিকারী দূর্গ ছাড়া আর কোন আসনেই বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভরসা করতে পারেননি। মানে আইনের আদালতে যাঁকে ‘ভগবান’ বানানো হয়েছিল, সেই তাঁকে জনতার আদালতে পাশ করতে ভরসা করতে হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীর ওপর। কাজেই তিনি যে নারদ স্টিং কাণ্ডে ঐ শুভেন্দু অধিকারীকে কাগজে মুড়ে টাকা খেতে দেখতে পাবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

আর নওশাদ সিদ্দিকি! তিনিও গতকাল জানিয়ে দিলেন ‘না, তিনি ডায়মন্ডহারবার থেকে লড়ছেন না’। ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি ও তাঁর দলের লোকজন এই পশ্চাদসরণের পেছনে মৃদুস্বরে যে সমস্ত যুক্তি খাড়া করছেন, তাতে যে আইএসএফ’কে নভেম্বর মাসে বাঘের গুহা বলে মনে করেছিল অনেকে, সেটাই এপ্রিলে এসে ইঁদুরের গর্তে পর্যবষিত হতে চলেছে।

আর এনাদের ‘হালুম’ ডাক শুনে এদেরকে বাঘ ভেবে বসা বঙ্গবাসীও বিলক্ষণ মালুম করতে পারছেন ‘যাহা গর্জন করে তাহা বাঘ নয়!’ এখন বাঘছাল বাজারে ভাড়ায় কিনতে পাওয়া যায় এবং সেটা গায়ে চড়িয়ে বঙ্গ মিডিয়ার দৌলতে যে কেউ বাঘ সাজতে পারে। আর এদের জন্যই ‘তালপাতার সেপাই’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অপ্রতিরোধ্য দোর্দন্ডপ্রতাপ সেনাপতি বনে যান।

অথচ গভীরে ভেবে দেখলে সবাই আমাদের সাথে একমত হবেন, প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় রাজনীতিতে ডায়মন্ডহারবার রাজ্যের বিয়াল্লিশটা লোকসভা আসনের মধ্যে একটা আসন মাত্র। অথচ ঐ একটা আসনকে ‘মল্লভূমি’ বানিয়ে মিডিয়াতে অহেতুক ‘হ্যান করেঙ্গা-ত্যান করেঙ্গা’ বাতেলাবাজি করে শেষ মুহুর্তে সরে এসে এভাবে নিজেদের অক্ষমতাকে সামনে এনে বাকি একচল্লিশটা আসনেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকেই ঘুরিয়ে অ্যাডভান্টেজ পাইয়ে দেওয়া হলো না তো! ‘মারি তো গণ্ডার, লুঠিতো ভাণ্ডার’ করতে গিয়ে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান ইত্যাদি মূল অ্যাজেন্ডা থেকে ভুল অ্যাজেন্ডায় মানুষের নজর ঘুরে গেলো না তো! তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরের আখেরে ক্ষতি হয়ে গেল কি না বা হলেও কতটা ক্ষতি হলো তা জানা যাবে ৪ঠা জুন! কিন্তু তাহলেও যেটা বলতে আমাদের বাধা নেই তা হলো এমন রাজনৈতিক অবিমিশ্রকারিতা ইদানীংকালে বাম রাজনীতির অলিন্দ ছাড়া খুব একটা চোখে পড়েনি।

আর বামেদের অবিমৃষ্যকারিতার কথা যখন এসেই গেলো, তখন সবশেষে অভিজিৎ গাঙ্গুলী ও নওসাদকে নিয়ে বঙ্গমিডিয়ার ভাষায় ‘ফুটকি’বামেদের আদেখলাপনা সম্পর্কে ফুটনোটের মত দু-চারলাইন না লিখলেই নয়। প্রথমে আসি বাম কর্মী সমর্থকদের কাছে। বইমেলাতে ‘গণশক্তি’ বা ‘যুবশক্তি’র স্টলে গিয়ে ‘দাস ক্যাপিটাল’ বা ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’-এর পাতা ওল্টালেই কেউ বামপন্থী হয় না। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা জরুরি, যাঁর নিজেকে চন্দ্রবোড়া সাপের মত বিষাক্ত সরীসৃপ হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে, সেই তিনি মার্ক্স-সাভারকার-গান্ধী-গডসে নিয়ে কি ভাবছেন সেটাও আদৌ এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর আলিমুদ্দিন স্ট্রীটকেও বুঝতে হবে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী বৃহত্তর জোট গড়তে গিয়ে নিজের দলের পতাকা নামিয়ে রেখে অন্য দলকে মাথায় তুলে নাচানাচি করাটাকে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ করা বলে। এটা এখনই না বুঝলে প্রতিবারই শেষ মুহুর্তে এসে তরী ডুববে এবং ‘আঙ্গুর ফল টক’এর মতো কে কার হাতের তামাক খাচ্ছে তা গন্ধ শুঁকে বার করতে গিয়ে অযথা কাল বিলম্ব হবে। তাই ধর্মীয় ‘জলসা’ পার্টি আর কম্যুনিস্ট পার্টি যে এক জিনিস নয়, এই সহজ সরল সত্যটা বোঝা জরুরি। জলসা পার্টি পয়সা আর আমন্ত্রনের অপেক্ষায় থাকে, পেলেই ছুটবে। তাই বাম শিবিরের তরফে যাঁরা বলছেন, নওশাদের এই ভোল বদলানোটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এটা সেটিং, তাদেরকে আমাদের পাল্টা প্রশ্ন এমন সেটিংবাজ লোকজনের সাথে আপনাদের এত মাখামাখি হয় কি করে ?

তবে আমাদের বিনীত অনুরোধ এ প্রশ্নের উত্তর পরে খুঁজবেন, তার আগে নিজেদের বাকি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করুন। আপনাদের কর্মী সমর্থকরা অপেক্ষা করছে।

আজ এ পর্যন্তই!

আমরা ঠিক লিখেছি কি না কমেন্ট বক্সে লিখুন। মতামত দিন।

আমরা জানি, আজকের এই প্রতিবেদনটা পড়ে অনেকেই রাইজ অফ ভয়েসেসকে বলবেন ‘চটি-চাটা’! এর আগে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন পড়ে অনেকেই বলেছেন আমরা চাড্ডি আইটি সেল। আবার ইনসাফ যাত্রা নিয়ে প্রতিবেদন লিখে আমরা হয়েছি ‘সেকু-মাকু’ মীনাক্ষীদের দালাল। তাই অভিধান থেকে বাছাবাছা বিশেষণ কষ্ট করে তুলে আনার আগে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিই, এসব সমালোচনায় আমাদের কিসসু যায় আসে না।

তবে হ্যাঁ, যুক্তিগ্রাহ্য গঠনমূলক সমালোচনার কাঙাল আমরা। কাজেই সমালোচনা হোক। গালিগালাজ-খিস্তি নয়।

সবাই ভালো থাকুন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://www.anandabazar.com/elections/lok-sabha-election-2024/abhijit-ganguly-attacks-abhishek-banerjee-in-the-press-conference-regarding-his-political-leap-to-bjp-dgtl/cid/1500868
b) https://zeenews.india.com/bengali/kolkata/naushad-siddiqu-to-contest-against-abhishek-banerjee-in-loksabha-election_494367.html
c) https://bangla.hindustantimes.com/elections/lok-sabha-elections/naushad-siddique-will-not-contest-from-diamond-harbour-seat-31712238759015.html
d) https://www.livemint.com/elections/lok-sabha-polls-2024-bjp-fields-ex-calcutta-hc-judge-abhijit-gangopadhyay-from-west-bengals-tamluk-11711297129178.html