‘ইনসাফ’-মাছের চোখ / #Insaaf

সংগঠন এবং মতাদর্শের ভূমিকা ব্যক্তির চেয়ে বেশী নিঃসন্দেহে। তবে শুধুমাত্র সংগঠন এবং মতাদর্শের উপস্থিতিই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট, এমন ভাবনা নিতান্তই যান্ত্রিক।

বেশী না, বিগত শতাব্দীর প্রথম দশকের জার্মানি এবং রাশিয়ার তুল্যমূল্য দৃষ্টান্তই মনে করা যাক। রাশিয়ার তুলনায় ঢের বেশী শক্তিশালী সংগঠন, ঢের বেশী সাংগঠনিক – মতাদর্শগত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সেখানকার সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিপ্লব তো করতে পারেইনি, উল্টে শাসকের লেজুড়ে পরিণত হয়েছিলো, শুধুমাত্র অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। উল্টো দিকে রাশিয়া, লেনিনের নেতৃত্ব.. ফলাফল আমরা সবাই জানি। ব্যক্তি বা নেতা বা নেতৃত্ব যাই বলা হোক, তার ভূমিকা মোটেই কম না। উড়িয়ে দেওয়ার মতন তো নয়ই। লেনিনের “ক্যাপ্টেন্সি” ব্যতীত রাশিয়ায় বিপ্লব দূরূহ ছিল। এটা বাস্তব। ঠিক যেমন, একজন ফিদেল ব্যতীত কিউবায় বিপ্লবও অসম্ভব ছিলো।

এই যে এতটা পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটলাম তা কি কেবল চোদ্দতলার ফ্রিশফ্রাই খাব বলে! না! কারণ সমাজ মাধ্যমে #ডেকেছেক্যাপ্টেন জনপ্রিয়তা লাভ করায়, হঠাৎই এক শ্রেণীর সংবাদমাধ্যম ও কিছু মানুষের কপালে ভ্রুকুটির বলিরেখা! বামেদের হল টা কি! বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে সিপিএমের হল টা কি! অথচ এরা বামেদের কর্মসূচি বাদ দিন, দলের পুরো নামটা ‘সিপিআই(এম)’ ঠিক করে লেখেন না বা উচ্চারণ করেন না, কারণ ‘আই’ বা ‘ইন্ডিয়াটা’ নাম থেকে কেটে বাদ দিয়ে দিলে বেশ মুখরোচক বিদেশি চীনের দালাল বলে গাল পেড়ে নাম করা যায়! আর এইসব বীরপুঙ্গবদের জন্যই এত পুরানো কাসুন্দির আয়োজন।

আর কাসুন্দি যখন দিয়েছি তখন বাকি মেনকোর্সটাও হয়ে যাক। স্পষ্ট করে বলতে চাই, মীনাক্ষী মুখার্জিকে আমার ক্যাপ্টেন ভাবতে ভালোলাগে। যে নেত্রী পথযুদ্ধের মাঝে বারবার নিজে আক্রান্ত হয়েও ঢাল হয়ে দাঁড়ান আক্রান্ত সহযোদ্ধাদের লাঠি, টিয়ারশেল থেকে বাঁচাতে, তিনি অবশ্যই ক্যাপ্টেন। যিনি একডাকে নন্দীগ্রামের মত কঠিন নির্বাচনী যুদ্ধে নেমে পড়েন এবং ‘হয় তৃণমূল-নয় বিজেপি’ বাইনারির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিটা নির্বাচক মণ্ডলীর দরজায় পায়ে হেঁটে কড়া নাড়তে পারেন তিনি তো আসল পদাতিক, অধিনায়ক! যদিও আমি জানি, মীনাক্ষী আদৌ নিজেকে ক্যাপ্টেন বলে মনেই করেন না। আর, এইটাই তো সুযোগ্য ক্যাপ্টেনের বৈশিষ্ট্য।

আপাতত মীনাক্ষীদের লক্ষ বাংলার মানুষের জন্য স্বৈরাচারী শাসকের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে ইনসাফ ছিনিয়ে আনা। ‘ইনসাফ’ই হল মাছের চোখ। মীনাক্ষীর। মীনাক্ষীদের। আর বিগত এক দশকের ওপর ইনসাফ না পাওয়া বাংলার চোখও মীনাক্ষীর দিকে, মীনাক্ষীদের দিকে।

আর তাই ক্যাপ্টেন ডাকতেই জনসমুদ্র তৈরি। এরপর কলকাতার বুকে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়।

ধন্যবাদান্তে
বৃষ্ণি চট্টোপাধ্যায়

পুনশ্চ: ঘটনাচক্রে মীনাক্ষী শব্দের আক্ষরিক অর্থ মাছের মত চোখ।