আজ ক্যাপ্টেন ডেকেছিল / Captain’s Call

ডেকেছে ক্যাপ্টেন!

তা যাদের ডেকেছে তারা বুঝুক গে যাক, আমার কি!

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস। মানুষের ভয়েস তুলে ধরা আমাদের কাজ। কোন দলের ক্যাপ্টেন/ভাইস-ক্যাপ্টেন কেন হাঁক পাড়ছে তাতে আমাদের কি! এসব সোশ্যাল মিডিয়ার হুজুককে খুব একটা পাত্তা দিইনি।

যদিও গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপারটা কানে আসছিল। শুনছিলাম ধর্মতলায় নাকি ‘ইনসাফ সভা’ হবে।

আনিস-বরুন-মইদুল-স্বপন-সুদীপ্তদের হত্যার ইনসাফ চাওয়া হবে। সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে তার ইনসাফ দাবী করা হবে।

তা কে করবে ইনসাফ সভা?

উত্তর পেলাম বামেরা নাকি করবে!

উত্তরটা আপনাদের অনেকে, মূলতঃ যাঁরা টিভি দেখে আর কাগজ পড়ে নিজেদের দিগ্বজ পন্ডিত ভাবেন, নিজের কানকেই বিশ্বাস করাতে পারবেন না! যে দলকে ইদানীং কেউ কেউ শূন্যপন্থীও বলছে, তারা কি না ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করবে! একি মাননীয়ার ২১শে জুলাই নাকি! যত্তসব হুজ্জোতি! এই ছিল বহু মানুষের প্রাথমিক অভিব্যক্তি!

আমি যদিও আজ সকাল থেকে অন্য একটা বিষয়ের ওপর লেখা নিয়ে পাঁয়তাড়া কষছিলাম, তবুও আমার চোখ-কান খোলা ছিল। তাই এটা জানা ছিল, বামেদের একটা রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়েছে বাংলার কিছু পকেটে, যদিও তা নিয়ে খুব একটা লেখালেখি করবার পরিসর পাইনি।

বিধানসভা-লোকসভা ভোটে শূন্য পাওয়া একটা দলকে কাঁহাতক পাত্তা দেওয়া যায়, এই ভেবে এড়িয়ে গেছি। তাতে যদিও আমার বামপন্থী সহকর্মীরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছি।

কিন্তু আজ ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুরবেলার পর থেকে আর বামেদের এড়িয়ে যাওয়া হয়ত সম্ভব হবে না । কারণ এই ‘ইনসাফ সভা’ উপলক্ষে কার্যত পুরো ধর্মতলা চত্বর আজ দুপুরের পর থেকে চলে যায় বাম কর্মী সমর্থকদের দখলে। যাকে এক কথায় বলা যায় জনসমুদ্র। তাও আবার এই সমাবেশের আয়োজক সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্ট ছিল না, আয়োজক ডিওয়াইএফআই আর এসএফআই। তাতেও এই জনজোয়ার এদ্দিন ধরে হয়ে চলা মাননীয়ার যে কোন ২১ শে জুলাইয়ের শহীদ দিবসকেও অনায়াসে টক্কর দেবে।

আর মেজাজ! মঞ্চের নেতাদের সাথে তাল মিলিয়ে গলা চড়িয়েছে জনতা! এর জন্য কিছুটা হলেও পুলিশ প্রশাসন দায়ী! এরাই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বামেদেরকে সভা করতে অনুমতি দিচ্ছিল না। শেষমেশ কাল রাতে স্থির হয় সভা হবে ওয়াই চ্যানেলে! যদিও সেভাবে দেখলে ওয়াই চ্যানেল আর ভিক্টোরিয়া হাউস পাশাপাশি দুটো রাস্তায়। কাজেই পুলিশ প্রশাসনের তরফে অনুমতি না দেওয়ার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকতে পারে না। তার ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ একটা ছিলই। আর ভিড়ের চাপে যখন শেষমুহুর্তে ওয়াই চ্যানেলের মঞ্চ থেকে নেতৃত্ব জানিয়ে দিল সভা হবে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের রাস্তাতেই অস্থায়ী মঞ্চে, তখন জনতার আবেগে আগুন লেগে গেল। উচ্চতারে বাঁধা সেই মেজাজটাই রইল সভার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। কালো মেঘে ঢাকা মুখভার আকাশ বা ঝিরঝিরে বৃষ্টি তাকে দমাতে পারলো না।

অস্থায়ী মঞ্চ মানে হল একটা মঞ্চ বাঁধা চারচাকার শকট। মেরেকেটে ৩-৪ জন একসাথে দাঁড়াতে পারবে। সে মঞ্চে নেই স্টার/সুপারস্টারদের ভিড়। নেই মাননীয়া ও তার চাটুকার পারিষদ বর্গ।

কিন্তু আছে এক ক্যাপ্টেন। আর আছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক উত্তাল ‘লাল’ জনসমুদ্র। ঢেউয়ের আওয়াজ জানিয়ে দিল ‘এই সেই মেয়ে’।

কল্লোলিনী আজ মীনাক্ষীময়! মীনাক্ষীদের।

হ্যাঁ। এটাই সত্যি। রীতিমত ধারে ও ভারে টক্কর দিয়ে মাননীয়ার ২১ শে জুলাইয়ের পাশে মীনাক্ষীদের ২০ শে সেপ্টেম্বর লেখা হয়ে গেল।

সে ইতিহাস লিখে ফেললো লাল জনতা। সোচ্চারে জানান দিল ক্যাপ্টেন ডাকলে এমন ইতিহাস আগামীদিনেও লেখা হবে।

ধন্যবাদান্তে
সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়