‘ধর্মাবতার! এটা সেটিং!’ / Just-Ish AG

রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছিল রোববার দুপুর থেকে। কারণ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আগাম অবসর নিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসতে চলেছেন।

এমনকি বাজারে প্রবলভাবে এখবরও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে তিনি আগামী বৃহস্পতিবার বারাসাতে বিজেপির যে সভা হওয়ার কথা আছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেবেন। শুধু তাই নয়, আরও একধাপ এগিয়ে এও বলে দেওয়া হলো যে, তিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে তমলুক থেকে বিজেপির টিকিটে নির্বাচন লড়বেন এবং জয়ী হয়ে আগামী মোদি মন্ত্রীসভায় দেশের আইনমন্ত্রী হবেন।

‘যা রটে তার কিছুটা তো বটে’ই প্রবাদকে সত্যি প্রমাণিত করে আজ মঙ্গলবার আদালতে ইস্তফা দিয়ে উনি বিজেপিতে জয়েন করবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এরপর মোদিজীর উপস্থিতিতে তার জয়েনিং ফর্ম্যালিটিটা যে সত্যিই নিতান্তই ফর্ম্যালিটি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের আপাদ মস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত থেকে বাঁচতে অবলীলায় বিজেপিতে জয়েন করতে পেরেছে, সেখানে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মত একজনকে পাওয়া বঙ্গ বিজেপির কাছে অনেকটা ‘হাতে চাঁদ পাওয়ার’ মত। কারণ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শাসক দল তৃণমূলের দুর্নীতি উন্মোচনে এবং জড়িত দোষীদের শাস্তি ও গ্রেপ্তারিতে যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ফলে জনমানসে তার ভাবমূর্তি যে যথেষ্ট উজ্জ্বল তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ফলে জনপ্রিয়তাও প্রশ্নাতীত। আর তাই এমন একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে দলে পেয়ে বঙ্গ বিজেপি যে উল্লসিত হবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

গত দুদিন ধরে প্রথম সারির বঙ্গ মিডিয়া হাউজগুলোর বিজেপিপন্থী অংশটা এবং বিভিন্ন বিজেপিপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপি জয়েন করবার ‘স্কুপ’টাকে রীতিমত খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছিলেন। কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর করা পরপর দুটো জনসভাতে রাজ্যজুড়ে যতটা উন্মাদনা হবে বলে আশা করা হয়েছিল, সেটা যে হয়নি, তা যে কোন ঘোর বিজেপি সমর্থকও স্বীকার করবেন। উলটে রাজ ভবনে ‘মোদি -দিদি’র অরাজনৈতিক গপ্পো যে সেটিং বিতর্ককেই প্রবলভাবে ফের উসকে দিয়েছিল তাও বাস্তব। এমন পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়া যে বঙ্গ বিজেপিকে নতুন অক্সিজেন দিল তাতে সন্দেহ নেই।

কিন্তু মীনাক্ষীদের ইনসাফ যাত্রার গণ উন্মাদনা দেখার পরও আমরা বামেদের ভোট কত বাড়লো বা আগামী লোকসভা নির্বাচনে কটা আসন বামেরা পেতে পারে, তা নিয়ে যেমন কোন ভবিষ্যতবাণী রাইজ অফ ভয়েসেস করেনি, ঠিক তেমনই এক্ষেত্রেও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি জয়েন করবার ফলে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট শতাংশ কত হতে চলেছে বা কটা আসন পেতে চলেছে সে ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। তবে হ্যাঁ, বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে তার আগামী রাজনৈতিক জীবনের জন্য রাইজ অফ ভয়েসেসের তরফে শুভেচ্ছা। আর বঙ্গ বিজেপিকেও অভিনন্দন বহু চেষ্টার পর একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির বঙ্গ সন্তানকে দলে পাওয়ার জন্য। একদল বিজেপি পন্থী রাজনৈতিক অত্যুতসাহীর মতে ইনি অনায়াসে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ‘মুখ’ হতে পারেন এবং যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে বিজেপি রাজ্যে সরকারও গঠন করতে পারে! কিন্তু আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস এসবের মধ্যে ঢুকছি না। এমনকি এসব হবেই কি না, আমরা জানিও না। তার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের নজর থাকবে আগামীতে।

কিন্তু তাবলে আমরা বর্তমান থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। আসলে আমাদের চোখ আটকে গেছে একটা ঘটনাক্রমে যাকে ইদানীং ক্রোনোলজি বলা হচ্ছে ।

ঠিক একপক্ষ কাল আগের কথা। ১৭ই ফ্রেব্রুয়ারি জানা গিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যকে। শুক্রবার এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। সেখানেই জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি অপসারণ করেছেন বিল্বদলকে। সেই নির্দেশ দ্রুতই কার্যকর করা হবে। কে এই বিল্বদল ভট্টাচার্য? ইনি কলকাতা হাই কোর্টে সিবিআইয়ের আইনজীবী। প্রাথমিক, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করেন। এই সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই যত রিপোর্ট দেয়, তা আইনজীবী বিল্বদলই আদালতে পেশ করেন। মানে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যাবতীয় খুঁটিনাটি ছিল আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যের নখদর্পনে। ইনি সেই আইনজীবী যিনি লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে তদন্তের সওয়াল করতে গিয়ে আদালতে ফেলুদা ও সোনার কেল্লার উপমা টেনেছিলেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গোপনীয়তা খর্ব হচ্ছে জানিয়ে, কলকাতা হাইকোর্টে রক্ষাকবচ চেয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে সময় তাঁর আবেদনের বিরোধিতা করেছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী বিল্বদল। এছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দিচ্ছে ইডি। হেফাজতে তাঁর উপর অত্যাচার করা হয়েছে । এই অভিযোগ তুলে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত এবং হেস্টিংস থানায় চিঠি লেখেন কুন্তল। সেই চিঠি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করে সওয়াল করেছিলেন বিল্বদল। সেই তাকে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব সরিয়ে দিলে কার সুবিধা হয়, সেটা বুঝতে বিরাট বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার পড়ে না। স্পষ্টতই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতেই এবং আদালত কক্ষে তাদের দুজনকে স্বস্তি দিতেই যে দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের এই পদক্ষেপ, তা নিয়ে সংশয় থাকবার কথা নয়। এমনকি সে সময় এই পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপি দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ যে হয়েছিল তা আমরা জানি। স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রতিবাদে দিল্লীতে বিজেপির কর্ম সমিতির মিটিং বয়কট করেন। তিনি দিল্লীতে না গিয়ে কলকাতায় বসেছিলেন। কিন্তু তাতেও মুখরক্ষা হয়নি। বিল্বদল গেছেন। বিশিষ্ট ‘বিজেপি’পন্থী ইউটিউবার সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময় দিদি-মোদি ‘সেটিং’ নিয়ে দু-কলম লিখেও ফেলেন তার ফেসবুক পাতার দেওয়ালে যা ভাইরালও হয়।

এবার কাট-টু!

আজ ৫ই মার্চ। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নানাবিধ দুর্নীতি নিয়ে এবং বিশেষতঃ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলাগুলিতে সব থেকে বেশি সরব কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার কর্মজীবনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ মাস আগেই স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে বিজেপিতে জয়েন করলেন। অর্থাৎ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাগুলো থেকে সরানোর মত যে আবেদন নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক মনু সিংভি/ কপিল সিব্বালদের মত আইনজীবীদের ভাড়া করে বারংবার আদালতের এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চ ছুটে বেড়াচ্ছিলেন, যাচ্ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে, সেই কাজটা পাকাপোক্ত ভাবে করে দিলেন দিল্লি থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাকে আগাম অবসর করিয়ে দলে টেনে নিয়ে আদালত কক্ষ থেকেই হঠিয়েই দিলেন, যাতে আর কিছুতেই কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছায়াও না পড়ে। কোনভাবেই যাতে উনি তৃণমূল সরকারকে আর কোন মামলাতে বিড়ম্বনাতে ফেলতে না পারেন, তার একদম পাকাপাকি বন্দোবস্ত। আর সেইসঙ্গে তৃণমূলীদের হাতে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করবার মোক্ষম রাজনৈতিক অস্ত্রটাও তুলে দিলেন। তারা এবার বলতেই পারবে যে বিচারক গঙ্গোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার বিরোধী রায়গুলো সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মানুষ এমনিতে আদালত-আইন কানুন অত বোঝেও না আর বুঝতে চায়ও না। আর এরপর ইডি-সিবিআই যে গতিতে তদন্ত করছে তাতে রাঘব-বোয়ালরা কেউই ধরা পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। কাজেই যত তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা বাড়বে ততই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়গুলো যে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সেই ভাবনাতেই জনমানসে সিলমোহর পড়তে থাকবে।

তাহলে দুটো ঘটনাক্রমকে এক সাথে জুড়লে কি দাঁড়ালো। আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যের পর, বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে আদালত থেকে রাজনৈতিক টোপ দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আদতে অভিযুক্তদের আদালত কক্ষে এবং জনমানসে অক্সিজেন দেওয়ার কাজ করলো বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা আসলে কৌশলে আড়াল করতে চাইছে আসল ক্রিমিনালদের বা খুব সংক্ষেপে মমতা -অভিষেক সহ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাদের পরিবারবর্গকে। হ্যাঁ, এবার আমরাও বলতে বাধ্য হচ্ছি স্পষ্ট সেটিং।

আর আমাদের ভাবতে অবাক লাগছে এটা দেখে যে, যে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়দের কাছে বিল্বদল ভট্টাচার্যের অপসারণ “সেটিং” বলে মনে হয়েছিল, সেই তাদের কাছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদানকে ‘স্মার্ট’ মুভ বলে মনে হচ্ছে! তবে কি বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের দেখে আপনারা এদ্দিন যে দিবারাত্র চোখের জল ফেলে এসেছেন, তা শুধুই রাজনৈতিক ডিভিডেন্ডের জন্য! দুর্নীতির তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলেও অসুবিধা নেই, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ভাঙিয়ে কিছু এক্সট্রা ভোট বা আসন পেলেই আপনারা খুশি! আর তাই “সেটিং” বিতর্ক লুকিয়ে তৃণমূল দলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত বিচারপতিকে আদালত বিচারব্যবস্থা থেকে সরিয়ে দিয়ে তার থেকে রাজনৈতিক ডিভডেন্ড আদায়কে আপনাদের “স্মার্ট” পলিটিকাল মুভ বলে মনে হচ্ছে! আর বামেরা বা কংগ্রেস এই ছল চাতুরিটা করতে পারলো না, বলে তারা আনস্মার্ট!

প্রশ্নটা কিন্তু উঠছেই।

সবশেষে, বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী কারোর কাছে ইন্দ্রজাল কমিক্সের অরণ্যদেব, কারোর কাছে ভগবান। কিন্তু আমাদের কাছে উনি রক্ত মাংসের মানুষ। আর দশচক্রে ভগবানও ভূত হয়…. সেখানে মানুষ তো নিমিত্ত মাত্র। তাই ওনাকে সাবধান করে দেওয়াটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। হাজার হোক, বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় ওনার সাহসী নির্ভীক আদেশগুলো রাজ্যের আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, যা আমাদের মত আম জনতাকে বিচারব্যবস্থায় আস্থা রাখতে বিশ্বাস জুগিয়েছে। কাজেই এই সাবধান বাণীটা অনেকটা ঋণ শোধের মত।

আসলে ইতিমধ্যেই একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে উনি নিজের ভাবমূর্তিতে কিছুটা হলেও কালি লাগিয়ে ফেলেছেন। তিনি কথায় কথায় নারদ স্টিং অপারেশন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলে বসেছেন, ঐ নারদ ভিডিও ফুটেজে তৃণমূল নেতা সৌগত রায়কে ঘুষ নিতে দেখা গেছে ঠিকই, কিন্তু তিনি সেটা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, দলের প্রয়োজনে নিয়েছেন। কাজেই উনি লোক খারাপ নন। আর বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী কাগজে মুড়ে কিছু একটা নিয়েছেন দেখা গেলেও, ঠিক কি নিয়েছেন সেটা দেখা যায়নি। মানে কাগজের মধ্যে টাকাই যে ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কাজেই শুভেন্দুকে ঘুষখোর দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না। যদিও ভিডিও ফুটেজের কথোপকথনে পরিষ্কার শোনা গেছে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারীও অসাবধানতাবশতঃ স্বীকার করেছেন যে, নারদা কান্ড হলো তার বিরুদ্ধে ওঠা একমাত্র প্রমাণিত অভিযোগ। এমনকি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই সূত্রেও দাবী করা হয় সবাই ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। ফলে মাননীয় ধর্মাবতার, নারদ স্টিং ভিডিও ফুটেজগুলো আপনি ঠিক করে দেখেছেন কি না বা তার পরবর্তী ঘটনাক্রম আপনি ঠিকাঠাক পর্যবেক্ষণ করেছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই! আর যিনি চোখের সামনে থাকা ভিডিও ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখতে অক্ষম সেই তিনি তার পেছনে হয়ে যাওয়া ‘সেটিং’ এর খেলাটা দেখতে পাবেন এমন আশা করাটা মুর্খামির সামিল। তাই আমরা বলতে চাই ধর্মাবতার, আপনি আসলে কিছুই দেখেননি। খেলাটা হয়েছে আপনার পেছনে। আপনি জানতে পারেননি। আর তাই চৌর্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ আপনি ঘোষণা করেছেন, তার ওপরও পড়ে গেল বড় জিজ্ঞাসা চিহ্ন!

আর এই প্রতিবেদন লেখার কাজ যখন শেষ, চলে যাচ্ছে অনলাইন পাবলিশিং এর জন্য, তখন মোবাইলে মেসেজের অ্যালার্ট এলো আর তাতে ক্লিক করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো “নারদাকান্ড একটা চক্রান্ত! তৃণমূলের নেতারা সকলেই তার শিকার! রায় দিলেন পদ্মমুখী প্রাক্তন বিচারপতি!” মানে কলকাতা হাইকোর্টের একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিজেপিতে জয়েনের ইচ্ছা প্রকাশ করেই বিজেপির দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মরিয়া হয়ে বাঁচাতে গিয়ে, কার্যত তৃণমূলের এক ডজন নেতা-মন্ত্রীকে ক্লিনচিট দিয়ে ফেললেন! মনে হলো এই প্রথম ১৪৪ ধারা একটা কাজের কাজ করলো। বিপ্লবী মাস্টার দা’র চরণ ছুঁয়ে কাউকে মুচলেকা’বীর সাভারকারের ক্যাম্পে জাম্প মারতে দিল না! সেরকম কিছু ঘটলে ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু হতো!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/bilwadal-bhattacharya-removes-from-position-of-deputy-solicitor-general-of-india-dgtl/cid/1496811
b) https://www.anandabazar.com/elections/lok-sabha-election-2024/will-bjp-field-calcutta-high-court-judge-abhijit-gangopadhyay-in-tamluk-in-lok-sabha-election-2024-dgtl/cid/1500478
c) https://youtu.be/84Kr5gThnuM?si=CKhv65yTTVNVZw4w