বড়লোকের বিটি লো / Papa Ki Pari

বড়লোকের মেয়ে!

কেন বলছি তা পারিবারিক টাকা-পয়সা, বিষয়-সম্পত্তির বহর দেখলেই বুঝতে পারবেন। শুধু ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতেই বাবা-মেয়ের রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

এছাড়া বাপ-মেয়ের নামে ঠিক কতগুলো জমি-জমা, বাড়ি-ফ্ল্যাট আছে তার হিসেব কষা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। আমার তো এতগুলো জামা-প্যান্ট নেই, এদের যতগুলো জমি-জমার কাগজ বা খামার বাড়ি, ফ্ল্যাট বাড়ির হদিস পাওয়া যাচ্ছে।

মেয়ে পেশায় একাধারে চালকলের ডিরেক্টর এবং সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা! অভিযোগ, পড়াতে স্কুলে প্রায় যেতেন না বললেই চলে! যদিও হাজিরা খাতায় কিন্তু জ্বলজ্বল করছে উপস্থিতির স্বাক্ষর। জনশ্রুতি, হাজিরা খাতা নিজে অটোগ্রাফ নিতে শিক্ষিকার দুয়ারে যেত। আরও অভিযোগ, মেয়ে নাকি সরকারী পরীক্ষা না দিয়েই সরকারী স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছেন। সেও প্রায় দশবছর হতে চলল। কি কাণ্ড বলে, লজ্জা দিতে বা পেতে চাই না! এসবই এখন বিচারাধীন এবং তদন্ত সাপেক্ষ।

আমাদের প্রশ্নটা অন্য। এত কোটি কোটি টাকার বিপুল স্থাবর ও অস্থাবর বিষয় সম্পত্তি এলো কোথা থেকে!

বাবার তো দু বছর আগে প্যান কার্ডই ছিল না। মানে নিতান্তই গরীব ছিলেন। ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার বালাই ছিল না। রিটার্ন ফাইলও করতে হত না। অধুনা প্রয়াত মা ছিলেন গৃহবধূ! তবে কি সব সম্পত্তির উৎস, এই স্কুল শিক্ষিকা কাম চালকল ডিরেক্টর মেয়ে।

একজন শিক্ষিকার আর কত রোজগার! মাত্র দশ বছর গাঁ-গঞ্জের স্কুলে পড়িয়ে, এত টাকা রোজগার করা কি আদৌ সম্ভব! কোথা থেকেই বা এল বিস্তীর্ণ জমি জুড়ে গড়ে ওঠা চালকল নির্মাণের টাকা। বাবা তো গরীব! প্যান কার্ড ছিল না। আর মা তো গৃহবধূ! সিবিআই/ইডির মত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো হন্যে হয়ে খুঁজছে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর! বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করছে। সেখানে আমরা হলাম গিয়ে হেঁদিপেঁচি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম! আমাদের সেই পরিকাঠামো কোথায় যে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো!

কিন্তু এক্ষেত্রে মনে হচ্ছে উত্তরটা খুঁজে পেয়েছি। একটা আবছা নক্সা চোখের সামনে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে আর আমরা ফেলুদার কায়দায় পকেট হাতড়ে চারমিনার ধরাবো ভাবছি। কিন্তু তার আগে আপনাদের সাথে সেই উত্তরটা ভাগ করে নিতে চাই। আসলে আমাদের নজর থাকে বাংলার প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত, সেইসব পজিটিভ খবরে যেগুলোকে একটু উলটে পালটে নেড়ে চেড়ে দেখলেই অনেক ক্ষেত্রে এইসব দুরূহ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। আর এবারও তাই হয়েছে।

কাট ১

শুরু করতে চাই কয়েকটা পজিটিভ উক্তি দিয়ে।

মজা হচ্ছে এসব উক্তির জনপ্রিয়তা এতটাই যে উক্তি শেষে মহামানব /মহামানবীদের নাম লেখবার দরকার পড়ে না।

“গ্রাম বাংলার মা বোনদের বলছি, আপনাদের ছেলেমেয়েদের বলুন, মন দিয়ে তৃণমূলটা করতে তাহলেই দেখবেন কিছু না কিছু একটা ঠিক হয়ে যাবে!”

“মিনিমাম খান, ম্যাক্সিমাম খাবেন না। কম খেলে তো আমি কিছু বলি না।”

“৭৫% খান। ২৫% পার্টি ফাণ্ডে দিন।”

“চাকরিটা তো তৃণমূলের ছেলেমেয়েরাই পাবে। কখন পাবে কিভাবে পাবে সেটা বলবো না।”

কাট ২

বাবা মন দিয়ে তৃণমূলটা করলো। তার মেয়ে তো হাজার হোক, তৃণমুলের মেয়েই হচ্ছে নাকি! কাজেই চাকরিটা তো সে পাবেই। তা সে পরীক্ষা দিক, আর না দিক। কিভাবে পাবে এসবই বাঁ হাতের খেলা! “হবে” বলছি না, কারণ হয়ে গেছে ২০১২ সালে।

কি জানি, বাবা হয়ত ৭৫% খেয়েছেন, ২৫% পাঠিয়েছেন। কাজেই কেউ কিছু বলেনি। মাননীয়ার ভাষায় মিনিমাম খেয়েছেন। ম্যাক্সিমাম খাননি। যদিও ৭৫% ম্যাক্সিমাম না হয়ে কি করে, মিনিমাম হয় “এপাং ওপাং ঝপাং” করে যে জিজ্ঞেস করে ফেলবো সে মুরোদ নেই। যাইহোক কিন্তু এদিকে অন্য বিপত্তি। আগেই বলেছি বাবা হদ্দ গরীব। প্যান কার্ড নেই। কাজেই সেই ৭৫% “ব্যোম ভোলে ” করে নিজেরই মা-মরা মেয়েকে দিয়ে দিলে অন্যায়ের কি আছে। কারণ সব “তৃণমুলের ছেলেমেয়েরা” ই নাকি এমনটা পেয়ে থাকে!

কিন্তু “বড়লোকের বিটি লো” হেডিং দিয়ে ফেলেছি কাজেই আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখব “বিটি” তেই। এমন কয়েকজন তৃণমূল করা বড়লোক “বিটি” র উদাহরণ সামনে রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আমরা সত্যি বলছি কি না!

যেমন – বাজারে ঘুরছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মেয়ে ৩ বছরে টিউশন করে ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৯৩ টাকা জমিয়েছেন। খবরটি সমাজ মাধ্যমে এই মুহুর্তে ভাইরাল। যদিও আমরা সত্যতা যাচাই করতে পারিনি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পরিবারের তরফেও কোন প্রতিবাদ বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। ফলে অনেকেই ভাবছেন ঘটনাটি সত্যি। কিন্তু টাকার পরিমাণ দেখে “কাদেরকে পড়াতেন” নাকি “কতজনকে পড়াতেন” কোন প্রশ্নটা সঠিক হবে আমরা জানি না। কারণ হতেই তো পারে, উনি একজন সুদীপ্ত সেন বা গৌতম কুণ্ডুর মত খদ্দের থুড়ি “বাপ-মা”য়েদের বখাটে ছেলেমেয়েকে পড়িয়ে বাংলাকে উদ্ধার করছেন।

আবার প্রাক্তন তৃণমূল মহাসচিব এবং শিক্ষামন্ত্রী এবং অধুনা দল থেকে সাসপেন্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের “বিটি” ও তার স্বামীর নামেও নাকি রয়েছে বিপুল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি। এর মধ্যে রয়েছে পিংলার মত অজ-পাড়া-গাঁয়ে গজিয়ে ওঠা বিশাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। স্কুলটি ব-কলমে নাকি দেখশোনা করেন জামাইয়ের জনৈক এক মামা, যিনি ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা। এ বিষয়টা নিয়েও এখন তদন্ত চলছে। পার্থ বাবু জেলবন্দী।

কাজেই বুঝতেই পারছেন তৃণমুলের “বিটি লো”দের পয়সা একটু থাকবেই। মানে তৃণমূল করলে “বড়লোকের বিটি” হওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা!
আপনি তৃণমূল জয়েন করুন। মন দিয়ে করুন। একটা কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

অবশ্য দুঃখের বিষয় হল ইদানীং জেলও হচ্ছে! কেউ কেউ আবার জুতোও ছুঁড়ে মারছেন অথবা গগনভেদী টিপ্পনীও বুক বাজিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছেন।

লেখা শেষ। এবার চারমিনারটা ধরাই।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

পুনশ্চঃ সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তবে পয়সা খাওয়া অতটাও ক্ষতিকর নয়। সবই বিচারাধীন ও তদন্তসাপেক্ষ।

তথ্যসূত্র:
a) https://bengali.abplive.com/district/cbi-now-puts-focus-on-the-properties-in-the-name-of-sukanya-mandal-daughter-of-anubrata-mandal-while-investigating-cattle-smuggling-case-912576/amp
b) https://tv9bangla.com/kolkata/anubrata-mondal-6-separate-lands-in-his-name-in-bolpur-now-anuvratas-daughter-sukanya-in-cbi-scanner-au22-629077.html
c) https://www.thewall.in/news/anubrata-mondal-didnt-have-pan-card-even-2-years-ago-but-his-daughter-was-director-of-companies/
d) https://eisamay.com/west-bengal-news/24pargana-news/home-in-baruipur-is-belongs-to-daughter-of-partha-chatterjee-says-local-tmc-leader/articleshow/93186138.cms