ঘ্যাচাং ফুঁ / Fate Of Bengal

ঘ্যাচাং ফুঁ, খাব তোকে!

চিটফান্ড কান্ডেও এমনটা হয়েছিল! চিটফান্ড সংস্থাগুলিকে সামনে রেখে যে সমস্ত নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদরা দেদার পয়সা কামিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বিগেস্ট বেনিফিসিয়ারির কালীঘাট না কোথায় যেন, বাড়িটা ঠিক মনে পড়ছে না কিম্বা সেই সমস্ত শিল্পী-বুদ্ধিজীবীর দল যারা চিটফান্ডের পয়সায় পকেট ভরে শিল্প-সাহিত্য চচ্চায় মজে ছিলেন, এনারা সবাই এখন বহাল তবিয়তে আমার আপনার নাকের ডগায় সসম্মানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ঘ্যাচাং ফু যা হওয়ার হয়েছে সুদীপ্ত সেন আর গৌতম কুণ্ডুর মত কিছু অসৎ ফড়ের (এনাদেরকে ব্যবসায়ী সচেতন ভাবেই বলা হল না)। এখনও সেটাই হচ্ছে।

পাড়ায় পাড়ায় পুকুরচুরি, গাছ চুরি, জঙ্গল চুরি, মাঠ চুরি, গাঁ-গঞ্জের দিকে পাহাড় চুরি, নদীর চরের বালি-পাথর চুরি কিম্বা কাটমানি, তোলাবাজি, কয়লা পাচার, গরু পাচার অথবা সরকারী চাকরি চুরির তালিকাটা দীর্ঘ। আর এসব কিছুর থেকে ৭৫ আর ২৫ এর অনুপাতে কমিশন খেয়ে সেই পয়সায় খাস দক্ষিণ কলকাতার বুকে ৩৫ টা প্লট হাতানো হয়ে গেছে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রান্তে স্বনামে কিম্বা বেনামে টাকা পয়সা বিষয়-সম্পত্তিও মজুত করা হয়ে গেছে বিস্তর। আজ পরিবারের এক এক জন সমাজসেবা করেই কোটিপতি, এমনটা নির্বাচনী হলফনামায় জানিয়ে দিয়েও জনসমর্থন যে এতটুকুও টাল খায়নি, এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলিতে। শিল্প-সাহিত্যের রিট্রিভারশিপ ট্রিপটাও কমপ্লিট হয়ে গেল গত সপ্তাহে। কাজেই এবার একটু সততার রিট্রিভারশিপটা হয়ে যাক। ফল-মিষ্টি হাতে পেয়ে খুশি হয়ে সুদূর কেশিয়ারির থেকে কুলগুরু তেমন বার্তাই পাঠিয়েছেন।

তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন লেবু বেশি কচলালে তেঁতো হয়ে যায়। ছিবড়ে লেবুর টুকরোগুলোকে এবার ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলবার পালা। কাজেই স্থূলকায় কিম্বা শীর্ণ, সব মাপের নেতাদের নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরে যাতায়াত শুরু হয়ে গেছে। অলরেডি চিটফান্ড কান্ডে জেলখাটা মুখপাত্র গতকাল গাওনা গেয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, দু-একজন অসৎ দুর্নীতিপরায়ণ নেতার জন্যে নাকি পুরো দলটাকে চোর বলে দেগে দেওয়া যায় না। বশংবদ মিডিয়াও আড়ালে আবডালে সেইমত কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছে। এপাং ওপাং ঝপাং করে কখন যে তৃণমূল স্তরের চুরি-জোচ্চুরি থেকে পালের গোদাটিকে তারা আলাদা করে দেবে আমরা হয়ত টেরটিও পাব না। ‘শান্তিনিকেতন’ নিবাসী হীরের টুকরো যুবনেতার বাঘিনী পিসি বলে কথা ! হাজার হোক তেনার বাড়িটা কিন্তু টালির আর পায়ে কিন্তু হাওয়াই নীল সাদা চপ্পল! কাজেই এনাদের ভালোর জন্য যে কাউকে বলি দেওয়া যায়।

বলিপ্রদত্ত একজন অবশ্য “সুভাষ ঘরে ফেরে নাই” এর কায়দায় উধাও হওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এভাবে লুকিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। তারচেয়ে বরং ফুল বদলে রং পালটে ফেললে, চ্যাটাং চ্যাটাং বাগড়ম্বর নিয়ে বুক ফুলিয়ে সনাতনী সাধুর বেশে ঘুরে বেড়ানোটা এ বংলায় ইদানীং অনেক বেশি সহজ হয়েছে। এ সম্পর্কে বিশদে জানতে হলে অবশ্য আমাদেরকে দক্ষিণ কলকাতার শান্তিনিকেতন ফেলে মেদিনীপুরের শান্তিকুঞ্জের দিকে তাকাতে হবে। সারদা-নারদার বেনিফিশিয়ারি হয়েও এই যে সিবিআই এবাড়ির ছেলেটাকে ভুলেও নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায় না, তার কারণ আপাতত তিনি “পালের গোদা”র আঁচল ছেড়ে কুলগুরুর কোলে উঠে পড়েছেন। কাজেই ওনার বাপ সাংবাদিকদের ডেকে “এ বাড়িতে নেতাজী সুভাষের পদধূলি পড়েছিল” কথাটা বুক বাজিয়ে বলবার “অধিকারী” হবেন বৈকি। যদিও পাকেচক্রে কোনদিন যদি নিজাম প্যালেস থেকে ডাক এসে যায় সেক্ষেত্রে ওনার সুপুত্র যে নেতাজীর কায়দায় উধাও হওয়ার চেষ্টা করবেন না, এমনটা উনি নিজেও হলফ করে বলতে পারবেন না। এক সময় যে বাড়ির গ্যারেজে সাইকেল আর মোটরসাইকেল রাখা থাকত, সেবাড়ির উঠোনে এখন এসইউভির ছড়াছড়ি! তারই কোন একটায় চেপে বসে “ধাঁ” হয়ে গেলেই হল! অদূরেই বাংলা-ঊড়িষ্যা সীমানা যা পেরোলেই সেই পবিত্র তীর্থভূমি যেখানে যুযুধান গোষ্ঠীর অভিযুক্ত নেতারা কুলগুরুর নির্দেশে “ইন্দ্রলুপ্ত” নেতাকে মধ্যমণি করে পাত পেড়ে সৌজন্য বিনিময় করে থাকেন।

এখন যে রাজ্যে শিক্ষামন্ত্রকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া দুর্নীতির প্রামাণ্য নথি পাহারা দিতে দপ্তরের সদর কার্যালয়ে সেনা বাহিনী নামাতে হয় সেরাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা ধোঁকাবাজ ৪২০ হবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু আমাদের করণীয় কি! আমরা কি পারব এই সমস্ত ধান্দাবাজ চোর-চিটিংবাজ নেতাদের ভোটবাক্সে ঘ্যাচাং ফুঁ করে দিতে? আমরা কি পারব ভোটের দিন দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি রুখে দিয়ে বুথে বুথে লাইন দিয়ে প্রতিটি ইভিএম মেশিন থেকে এই ঘ্যাচাং ফুঁ আওয়াজ তুলতে?

আমাদের মনে রাখতে হবে আগামী প্রতিটি নির্বাচনের দিন আর নিছক মামুলি ছুটির দিন থাকছে না। ওই দিনটা হল, বাংলা যাতে চোর-জোচ্চোরের বাংলা হয়ে না যায়, সেটা নিশ্চিত করবার দিন। “যারা কুকর্ম করে তাদের ভালোবাসি না” এটা পালের গোদা সমেত সব্বাইকে কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দেওয়ার দিন। আর এটা যদি না পারি তাহলে বেফালতু মিম বানিয়ে বাজারে ছড়িয়ে গাদাগাদা লাইক কুড়িয়ে লাভ নেই। কারণ এভাবে কুড়িয়ে বাড়িয়ে জীবন চলে না।