এবার গাছ পালাচ্ছে
বাংলার খুঁটিনাটির আগের কিস্তিতেই আমরা বাংলা জুড়ে “মাঠ পালানো” নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলাম। সেখানে আমরা এও জানিয়েছিলাম এটা পাড়ায় পাড়ায় পুকুর বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ পক্রিয়ারই একটা নিরবিচ্ছিন্ন অংশ যাকে ইংরাজীতে বলে এক্সটেনশন এবং কেন সেটা যুক্তি সহকারে তুলেও ধরেছিলাম। পাশাপাশি আরও লিখেছিলাম এই “পুকুর চুরি” বা “মাঠ পালানো” টা রোগ না রোগের উপসর্গ তা আলাদা করে বলা মুশকিল। কারণ আমাদের অনেকেরই তখন মনে হয়েছিল নগরায়নের মত গালভরা শব্দের আড়ালে রাজ্যের শাসকদলের অনুপ্রেরণায় পাড়ায় পাড়ায় অলিতে গলিতে প্রোমোটিং আর সিন্ডিকেটরাজের দাপাদাপিটাই আসল রোগ আর এই পুকুরচুরি বা মাঠ পালানোটা সেই রোগের উপসর্গ। কিন্তু অনেকের মত ছিল আমাদের অত্যধিক আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে খেলার মাঠ বা জলাশয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেভাবে জনসচেতনতা গড়ে ওঠে নি। ফলে এগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি। এটাই আসল রোগ। শাসকের দাপাদাপি আগেও ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কাজেই আত্মকেন্দ্রিকতার থেকে বেরিয়ে জনপরিসরের চিন্তা না করতে পারলে এই ধরণের অ-কাজ কু-কাজ আটকানো মুশকিল। আর রাইজ অফ ভয়েসেস এই বিতর্কের মধ্যে না ঢুকে শুধু বলতে চেয়েছে রোগ বা রোগের উপসর্গ যাই হোক আগে জানতে হবে বা প্রচার করতে হবে রোগটা হয়েছে বা একটা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে যার রোগ নির্ণয় হওয়া জরুরি। কারণ মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমগুলিতে চট করে এই ধরণের খবর নিয়ে লাফালাফি করতে দেখা যাচ্ছে না। ভেতরের পাতার এককোণে বা দুমিনিটে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চাশটি খবরের একটি বানিয়ে নাম মাত্র উল্লেখে হাতধুয়ে ফেলা হচ্ছে।
এই যেমন আজকের “গাছ পালানো” র খবরটা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব ২০২১-২২ সালের বন সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেন। প্রতি দুই বছর অন্তর এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এর সেই রিপোর্টেই “গাছ পালানো”র খবরটি ধরা পড়েছে। বাংলার এক-দুটি ইংরেজী সংবাদপত্র ছাড়া কোন প্রথমশ্রেণীর সংবাদপত্রেই এই খবর ছাপা হয় নি। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি যে কোন বাংলা সংবাদপত্রেই এই নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ নেই। এমন কি সেই বাংলা সংবাদপত্র গুলিও এই খবরটা এড়িয়ে গেছে যাদের ইংরাজী সংস্করণে এই রিপোর্টের খবর কিছুটা হলেও গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছে। আর যেখানে ছাপা হয়েছে সেখানে শুধুই বলা হয়েছে গত দুবছরে ভারতে বনাঞ্চলের পরিমাণ বা সবুজায়ন (১ হেক্টরের কম বৃক্ষ আবৃত অঞ্চল) বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই মুহুর্তে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকা বৃক্ষরাজি আবৃত এলাকা বা বনাঞ্চল। শতাংশের হিসেবে ২৪.৬২% যা দুবছর আগে ছিল ২৪.৫৬%। আরও বলা হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, ওড়িশা, কর্নাটক এবং ঝাড়খন্ডে বৃক্ষরাজি আবৃত এলাকা বা বনাঞ্চলের পরিমাণ গত দুবছরে সবথেকে বেশি বেড়েছে।
কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটি তথ্য উঠে এসেছে এই রিপোর্টে যা কেবলমাত্র একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সেটি হল দেশের শহরাঞ্চল গুলিতে সবুজ সমারোহের বাস্তব অবস্থাটা ঠিক কিরকম! আর সেখানেই উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত একদশকে মানে ২০১১ থেকে ২০২১ এর মধ্যেকার দশ বছর সময়ে যেখানে দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই বা হায়দ্রাবাদের মত শহরগুলিতে সবুজায়ন বেড়েছে যথাক্রমে ১১%,৯%,২৬% এবং ১৫% সেখানে আমাদের কলকাতাতে কমেছে ৩০%। মানে আমাদের কলকাতা শহরে গত এক দশকে দেদার গাছ কাটা হয়েছে যার ফলে ১% বা ২% নয়, এক্কেবারে ৩০% সবুজাবৃত এলাকা কমে গেছে। আর এই এতটা কমে যাওয়া সরকার তথা শাসকদলের অনুপ্রেরণা ছাড়া সম্ভব নয় সেকথা কারোর অজানা নয়!
আর ঠিক এতটা পড়ে যারা “বেগম” বলে গাল পাড়বেন বলে তাল ঠুকছেন, তাদের জানিয়ে দিই আরেকটি শহরের কথা। আহমেদাবাদ। সেখানে গত একদশকে সবুজাবৃত এলাকা কমেছে ৪৮%। মানে শুধু দিদির রাজ্যের রাজধানী নয়, মোদীর রাজ্যের রাজধানীতে আরও দ্রুত হারে গাছকাটা চলছে! আর এই জন্যেই কি বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এই ইস্যুতে এমন প্লেটোনিক নীরবতা! দিদি-মোদীর গাছকাটার গপ্পো যতটা পারা যায় লুকিয়ে রেখে ঢেকে খবর করা!
জানতে চায় বাংলা !
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://timesofindia.indiatimes.com/india/indias-green-cover-rises-touches-nearly-one-fourth-of-geographical-area-report/articleshow/88885967.cms
b) https://www.downtoearth.org.in/news/forests/forest-survey-report-2021-11-states-have-lost-forest-cover-21-have-lost-good-forests-81107
c) https://indianexpress.com/article/india/since-2019-loss-in-dense-forests-higher-than-gain-in-net-cover-7722106/
Comments are closed.