আবার মাঠ পালাচ্ছে / Stealing the field again
ইদানীং বাংলাজুড়ে একটা নতুন রোগের আবির্ভাব হয়েছে। “মাঠ পালানো” রোগ।
মানে আপনি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মর্নিংওয়াক করতে গিয়ে দেখলেন আপনার পাড়ার খেলার মাঠটা পালিয়ে যাচ্ছে। ইঁট-বালি-স্টোনচিপস ইত্যাদি ইমারতি সরঞ্জাম ডাঁই হচ্ছে সেখানে। কি ব্যাপার খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারলেন একদম পুরসভা অথবা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের তরফে নোটিস জারি করে সেখানে কোন ক্রীড়াকেন্দ্র বা যুব আবাস বা অন্যকিছু গড়ে উঠতে চলেছে। মানে রীতিমত সরকারের হাত ধরেই আস্ত মাঠটা ছুটে পালাচ্ছে। শুধু শর্ত একটাই। মাঠটা একটু বড় হতে হবে যাতে গাজর ঝোলাবার পরও কিছুটা জমি পড়ে থাকে, লুকোন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য।
হাওড়ার ডুমুরজলার পর এবার বীরভূমের রামপুরহাট।
সত্যি বলতে কি এই “মাঠ পালনো” টা রোগ না রোগের উপসর্গ আলাদা করে চেনা মুশকিল। পাড়ার পুকুর ডোবা বুজিয়ে যখন শাসক দলের দাদা-দিদিদের মদতে দেদার প্রোমোটিং হচ্ছিল তখন আমি আপনি নন-পলিটিকাল ছিলাম। ঐ “সাতে-পাঁচে থাকি না” টাইপ। বরং বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভেবেছি এই পুকুরটা আমার কোন কাজে আসে! সাপখোপ পোকামাকড়ের ডিপো। মশার আড্ডা। পুরসভা সাতজন্মে পরিষ্কার করে না। ব্যবহার হয় বলতে পিছনের বস্তির মেয়ে-বউ গুলো জামা-কাপড় কাচে-বাসন মাজে। আর মাঝেমধ্যে ওদের বাচ্চা-ছেলেমেয়ে গুলো জলে নেমে হুটোপাটি করে! তারজন্য বাড়ির পাশে একটা এঁদো পুকুর রেখে দেওয়ার কোন মানে হয় না। বরং কাউন্সিলরের ডানহাত যদি পুকুরটা বুজিয়ে একটা আবাসন বা দোকান-পাট কিছু বানায় তাহলে ভালই হবে। আবার কেউ কেউ ভেবেছেন এসব ফালতু পার্টি-পলিটিক্সে জড়িয়ে ঝুট-ঝামেলা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। চুপ থাকাই ভালো।
অনেকে আবার এরই মধ্যে দাদা-দিদিদের ধরে সামান্য দিয়ে-থুয়ে ঐ প্রকল্পতেই ইমারতি দ্রব্যের বরাত জোগার করে দুপয়সা পকেটস্থ করবার তাল ঠুকেছেন। কিন্তু কেউই তখন বুঝতে পারেনি পুকুর-ডোবা বোজানো হয়ে গেলে, পাড়ার অন্যান্য খালিজমি, এমনকি খেলার মাঠ যেখানে নিজেদের ছেলেমেয়েরাই বিকেলেবেলা বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘন্টা খানেক বল পেটায় দৌড়ঝাঁপ করে তাতেও হাত পড়বে !
পুকুর-জলাজমি বোজানো সম্পূর্ণ বেআইনি। তাই সেসময় কাউন্সিলর নিজে না এসে, এগিয়ে দিয়েছিল তার ডানহাতকে। কিন্তু পাড়ার খেলার মাঠ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারী জমি। তাই রীতিমত সরকারী দপ্তরের নোটিস জারি করে স্বয়ং কাউন্সিলর হাজির খেলার মাঠটিকে এলাকার “উন্নয়ন যজ্ঞে” আহুতি দিতে। এটাই হওয়ার ছিল। এটাই হয়ে থাকে।
আর তাই আমরা যখন হাওড়ার ডুমুরজলা মাঠের পালানো নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম এই “বাংলার খুঁটিনাটি” তে তখন যারা ভেবেছিলেন “ওটা হাওড়ার ডুমুরজলার সমস্যা ওরা দেখুক! আমার কি!” তাদেরকে জানিয়ে রাখি এবারে পালা পড়েছে বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বিখ্যাত সেচপল্লির খেলার মাঠটির। গাছ-গাছালিতে ঘেরা বেশ বড়মাপের মাঠ। স্থানীয়দের খেলাধুলা-শরীরচর্চার প্রাণকেন্দ্র । সকাল ও সান্ধ্যভ্রমণের জন্য মাঠের চারপাশে আছে আলাদা ওয়াকিং ট্র্যাক। প্রায় কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে- মাঝবয়সীদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে এখানে। এছাড়াও এলাকার বয়স্ক মানুষদের সকাল-বিকেলের আড্ডাস্থল হল এই মাঠ। আর সেই মাঠ ধ্বংস করেই হঠাৎ সরকারী ফরমানে গড়ে উঠতে চলছে “পর্যটন নিবাস।” স্থানীয়দের অভিযোগ আসলে এটি একটি হোটেল। তাও আবার বেসরকারি মালিকানাধীন।
স্বভাবতই রামপুরহাট ইরিগেশন কলোনীর এই মাঠ বাঁচাতে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ -প্রতিরোধ! এলাকার ছেলেমেয়েরা বামপন্থী যুব সংগঠনের ব্যানারে করেছে গণসাক্ষর অভিযান! গত ৩০ শে ডিসেম্বর হয়েছে গণ কনভেনশন! গণস্বাক্ষর সহ স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে রামপুরহাট মহকুমা শাসকের
অফিসে। এলাকার মানুষের তরফে জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত পর্যটন নিবাসের উদ্যোগ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ আন্দোলন চলবে। আরও বিশদে জানতে তথ্যসূত্রে ক্লিক করে এই সংক্রান্ত খবর পড়ে নিতে পারেন।
আমাদের প্রশ্ন যারা মোদীর সরকারী সংস্থার বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করেন, চটকদার ট্যুইট করে হাততালি কুড়োন, তারা ঠিক কোন যুক্তিতে দিদির সরকারী জমি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সময় চুপ মেরে যান, জানতে ইচ্ছে করে!
আমাদের অনুরোধ চুপ থাকবেন না। মুখ খুলুন! নইলে পরের মাঠটা আপনার পাড়ার হয়ে যেতে পারে! আর আমরা চাই না “আবার একটা মাঠ পালাচ্ছে” প্রতিবেদন লিখতে।
আর মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম গুলির কাছে আমাদের অনুরোধ, রাজনৈতিক দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আর ট্যুইটার হ্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে না থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা ঘণ্টার পর ঘন্টা খেউড় না চালিয়ে আপনারাও সরজেমিনে এই ধরণের খবর গুলো খতিয়ে দেখে মানুষের সামনে তুলে ধরলে ভাল হয়।
নতুন বছরে আসুন আমরা নতুন করে শুরু করি। সবুজরক্ষার শপথ নি।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2021-12-26/202112252151524.jpg&category=0&date=2021-12-26&button=
b) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2021-12-31/202112302221179.jpg&category=0&date=2021-12-31&button=
Comments are closed.