দুয়ারে পুস্করিনী / Waterlogging Problem in Kolkata

আপনি কি জানেন, আমাদের কলকাতা শহরে প্রতিদিন গড়ে কম বেশি একটা করে পুকুর চুরি যায়। নব্বইয়ের দশকে, কলকাতা শহরে মোট জলাভূমির সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৭০০। পরিবেশ আন্দোলনকারীদের মতে, বাম আমলের শেষ দিকে সেই সংখ্যাটা ছিল ৭২০০। এরপর ২০১০ সালে কলকাতা কর্পোরেশনে ক্ষমতায় আসে বর্তমান শাসক দল, তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়ায় ৩৯০০। আর এখন, সেটা এসে ঠেকেছে ৩৫০০ তে।

পরিবেশবিদদের মতে, গত এক দশকে কলকাতার বুক থেকে কম বেশি ৩৫০০-৪০০০ টি জলাশয় উবে গেছে কর্পুরের মত। মানে গত দশ বছরে প্রতি বছর ৩৫০-৪০০ টি জলাশয় বা প্রতিদিন কমবেশি একটি জলাশয় হারিয়ে যায় কলকাতা শহর থেকে। আর সে সব বুজিয়ে জায়গায় জায়গায় গজিয়ে ওঠে কংক্রিটের জঙ্গল। বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ব্যবস্থার মূলে শাসকশ্রেণীর মদতে চলা বে-আইনি প্রমোটারি ও সিন্ডিকেটরাজের দাপট। ফলস্বরূপ, কমে আসছে জল নিকাশি ব্যবস্থার পরিসর। তাই আজকাল, বৃষ্টি হলেই শহর “বানভাসি”। “আমাদের ভেনিস”, “দুয়ারে জল”, “দুয়ারে নৌকা” ইত্যাদি শিরোনামে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম/পোস্টের ছড়াছড়ি। আর এসব জেনে বুঝেও পূর্ব কলকাতা জলাভূমির চৌবাগা অঞ্চলে আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা খরচ করে ১০ বিঘা জলাজমির ওপর ‘পরিবেশ বান্ধব’ ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট তৈরি করতে চলেছে স্বয়ং কলকাতা কর্পোরেশন! মানে যাকে বলে মরার ওপর খাড়ার ঘা!

চৌবাগা অঞ্চলে যে জলা-জমির ওপর ম্যাস্টিক প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে, সেটি পূর্ব কলকাতা জলাভূমির আওতায় হলেও, গত ৫০ বছরের ওপর সেখানে চাষ-আবাদ চলছে। কিন্তু বিগত এক দশকে শহরের সর্বত্র উপর্যুপরি পুকুর/ডোবা বুজিয়ে প্রমোটারি শুরু হওয়ায়, শহরের জলাধারণ ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে কমে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেই ইদানিং জল উপচে চলে আসছে এই ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে। ফলে চাষ-আবাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর এমনটা চলতেই থাকবে। প্রশাসনের উচিৎ চাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে, জমি অধিগ্রহণ করে, সেখানে নিকাশি ব্যবস্থার সাথে যুক্ত জলাশয়ের বন্দোবস্ত করা, যাতে শহরের জমা জল সহজে জলাশয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু পুরসভার সে সবে যথেষ্ট আগ্রহ চোখে পড়ে না। এতে স্থানীয় কৃষিজীবী মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে, সাথে কলকাতা ও শহরতলির জল জমার সমস্যাও মিটছে না।

এরপরও জল জমার জন্য বৃষ্টিকে দায়ী করবেন?

সবশেষে জানিয়ে রাখি, এই জমি কব্জা করে যে প্ল্যান্ট বানানোর উদ্যোগ কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে চাষিরা রুখে দাঁড়িয়েছে। এই খবরটা মূলস্রোতের মিডিয়াগুলি বেমালুম চেপে গেছে। হয়তো পুরসভা নির্বাচন আসন্ন বলে।

তথ্যসূত্র:
a) http://dhunt.in/cUN34?ss=wsp&s=wa
b) https://thefederal.com/…/water-bodies-across-kolkata…/
c) http://ganashakti.com/bengali/kolkata
d) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2021-11-30/202111292339547.jpg
e) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2021-12-01/202111302339303.jpg&category=0&date=2021-12-01&button=