কৃষক আন্দোলনের ইতিকথা / Indian Farmers’ Protest

প্রথম মূল্যায়ন হচ্ছে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে যে কৃষক আন্দোলন চলছে ভারতবর্ষে এর কতগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথম হচ্ছে, ভারতবর্ষের ইতিহাসে এত দীর্ঘ কোনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়নি যেখানে প্রায় ৯০ কোটি ভারতবাসীর জীবন-জীবিকার দাবি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। কোনও রাজ্যে এই রকম দীর্ঘ কোনও আন্দোলন হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এত বড় আন্দোলন কখনওই হয়নি।

দ্বিতীয় মূল্যায়ন হচ্ছে, এই আন্দোলনে প্রায় ৫০০ সংগঠন আছে। এখানে বাম, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সব ধরনের মতবাদ আছে এবং তারা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে একটি কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর ভিত্তিতে মূলত চারটি দাবি নিয়ে। প্রত্যেকের নিজস্ব দাবি আছে, আলাদা সংগঠন আছে, আলাদা সংবিধান আছে। তারা নিজস্ব অস্তিত্ব রেখেও এখানে এসেছে কতগুলো নির্দিষ্ট দাবি নিয়ে এবং এই চার দফা দাবিকে সমর্থন জানিয়েই আন্দোলন চালাচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এক বছর হয়ে গেল কিন্তু এই ৫০০ সংগঠনের মধ্যে কোনও মতভেদ হয়নি। একটি খুব সাধারণ আন্দোলনে দেখবেন যে পাঁচটি দশটি সংগঠন একসাথে চলতে পারে না। এখানে কিন্তু ৫০০ টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ আছে এবং যে দাবি নিয়ে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন এখনও সেই দাবি নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

তৃতীয় হচ্ছে যে, এত বড় আন্দোলন যার ওপরে এত আক্রমণ হচ্ছে, এত প্ররোচনা হচ্ছে কিন্তু এই আন্দোলন এখনও অব্দি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। স্বাধীনতার পরে এত দীর্ঘ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আজ পর্যন্ত হয়নি। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবো, অশান্তি হলে পরে বিজেপি জিতবে, শান্তিপূর্ণ হলে আমরা জিতব। অশান্তি হলে ওরা আন্দোলনটিকে ভেঙে দেওয়ার সুযোগ পাবে তো সেই সুযোগ আমরা দিতে রাজি নই। যে কারণে এক বছর হতে চললো, এই আন্দোলন এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।

চতুর্থ হচ্ছে, এই আন্দোলনের পেছনে এত বিশাল সংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে যা অতীতে আমরা কোনও আন্দোলনে পাইনি। শ্রমিক সংগঠন, ১০টি কেন্দ্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন তারা প্রথম দিন থেকে আমাদের সমর্থন করছে। এছাড়া ছাত্র-যুব, মহিলা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা মানুষেরা আমাদের ক্রমাগত সমর্থন জানাচ্ছেন। আমাদের দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক দেশের জনগণ এবং সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়রা এই আন্দোলনকে ক্রমাগত সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং প্রায় ৫ থেকে ৬টি দেশের পার্লামেন্টে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পার্লামেন্টে এই নিয়ে আলোচনা হয়নি, হলেও সেই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু অভূতপূর্ব ভাবে বিদেশের কিছু কিছু পার্লামেন্টে আমাদের দেশের এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই আন্দোলনের যে বৈশিষ্ট্য সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, সেটা হচ্ছে এই আন্দোলন শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য নয় এবং এই আন্দোলনের যে দাবি সেই দাবিগুলিও শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য নয়, কৃষকদের পাশাপাশি এই দাবিগুলি সমস্ত অংশের মানুষের জন্য। যেমন ধরুন রেশন ব্যবস্থা। এই তিনটি কৃষি আইনের ফলে আমাদের দেশের যে রেশন ব্যবস্থা তা সম্পূর্ণভাবে কালোবাজারিদের হাতে চলে যাবে। এতে করে আপামর যারা রয়েছেন তাদের প্রচন্ড সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। খেয়াল করে দেখবেন, যে আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষ রেশন ব্যবস্থার ওপরে নির্ভরশীল সুতরাং সিস্টেমটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও আমাদের এই আন্দোলন।

আমরা বলছি যে, কৃষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। এই কারণে বাকি অংশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা এই আন্দোলনের অন্যান্য দাবিগুলোর পাশাপাশি একটি অন্যতম দাবি। সুতরাং এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বহুমুখী যা এক বছর ধরে চলছে, সেই জন্যই আমরা বলছি যে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সাতশোর কাছাকাছি কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন এই আন্দোলনে বলা ভালো শহীদ হয়েছেন। কখনো শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রা কখনো ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে আবার কখনও লাগাতার ১৫ দিন বর্ষার মধ্যে তারা বসে আছেন। এবং কৃষকদের মধ্যে দৃঢ় মনোভাব – এটাই হচ্ছে মূল শক্তি। আমরা এ আন্দোলন চালাতে পারতাম না যদি না তাদের মনোবল থাকতো। তারা বার বার করে বলছেন যে ৭০০ জন মারা গেছেন, যদি আরও হাজার জন মারা যান যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন ছেড়ে যাবো না। আন্দোলনকারীদের এই যে দৃঢ়তা সেটাও এই ৫০০ সংগঠনের নেতৃত্বকে এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। সেজন্য সব দিক থেকে মিলিয়ে এ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলেছেন, “ভারতবর্ষের কৃষক আন্দোলন আগামী দিনে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটি পথ দেখাবে।” এইভাবেই এই আন্দোলন চলছে।

এ আন্দোলনের একটি নেগেটিভ দিক রয়েছে সেটা হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে যখনই কোন আন্দোলন হয় নির্বাচিত সরকার আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করে তাদের কথা শোনে এবং সেই সমস্যা নিরাময় করার চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের দেশের সরকার সেই পথে হাঁটেনি। আমরা প্রথম দিন থেকেই আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, আমাদের সমস্যা হয়েছে এবং আমরা সেটা সরকারের সাথে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছিলাম। প্রথমদিকে সরকার কয়েক বার আলোচনা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই সব ব্যর্থ হয়েছে, তারপর থেকে সাত-আট মাস যাবত কোন আলোচনা নেই। সরকার চাইছে যে আন্দোলন করতে করতে কৃষকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ুক, এদের মধ্যে যে একতা রয়েছে তা ভেঙে পড়ুক। এটা হচ্ছে সরকারের ষড়যন্ত্রের একটি রূপ। এই ষড়যন্ত্র আমাদের কৃষকেরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং আরো বেশি শক্তি দিয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ক্রমাগত বিভিন্ন জায়গায় এই আন্দোলনের পরিধি বেড়ে চলেছে। এগুলো হচ্ছে এই আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য।
আমাদের দেশের মানুষেরা এই দীর্ঘতম গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন তার আরেকটি কারণও রয়েছে। সেটা হচ্ছে তারা বুঝতে পারছেন যে, যদি এই আন্দোলনকে সফল না করা হয়, তাহলে আগামী দিনে কোনও গণ আন্দোলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সেইজন্যই সাধারণ মানুষ আন্দোলনের পজিটিভ দিকগুলোকে বুঝে নিয়ে এই আন্দোলনকে ক্রমাগত সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের এই বিশেষ দিকগুলিকে নিয়েই আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি গত এক বছর ধরে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরাও নিজেদের কাছেই উদাহরণ স্থাপন করছি যে কিভাবে এত দীর্ঘদিন একটি আন্দোলনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়, কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে কোন জায়গায়গুলিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত কোন বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আলোচনা করা উচিত, সেগুলো আমরাও শিখছি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং অবশ্যই আমাদের অভিজ্ঞতাও তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের কিছু না কিছু কর্মকান্ড করে যেতে হচ্ছে যাতে করে মিডিয়া এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। এভাবেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

আসলে কোন একটি আন্দোলনকে বিচার করার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে তুমি কীরকম ভাবে দেখবে। এই আন্দোলনটি দুটি ধারায় হচ্ছে। একটি হচ্ছে ৬টি রাজ্য এবং সেখানকার কৃষকরা এসে দিল্লিকে ঘিরে বসে আছে, এটি আন্দোলনের মুখ্য রূপ। এরকম নয় যে হাজার হাজার লোক সারাক্ষণ বসে আছে; আসছে, যাচ্ছে, কেউ কিছুদিন থাকছে তারপর বাকিরা এসে থাকছে, এরকম ভাবে চলছে। সংখ্যাটা কখনও দশ হাজার, কখনও কুড়ি হাজার, পঞ্চাশ হাজার। এইভাবে তারা আন্দোলনটিকে চালাচ্ছে এবং এটিই আন্দোলনের মুখ্য রূপ।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে গিয়ে এই আন্দোলনে যেমন ছটা রাজ্য এসকেএম এর ডাকে দিল্লিকে অবরোধ করে বসে আছে সেই সময়ই আরো ১৫-১৬টি রাজ্য তারা এসকেএমের প্রত্যেকটি কলে সাড়া দিচ্ছে। দুটো ধারায় আন্দোলনটি হচ্ছে আজকে ভারতবর্ষে। অসুবিধা কিছু আছে যেমন ট্রেন চলছে না। হাজার-হাজার লাখ-লাখ লোক দূর থেকে আসতে পারবেন না, তো তাঁরা তাঁদের রাজ্যে আন্দোলন করছেন। ভারতবর্ষের প্রায় চল্লিশ কোটি লোক ভারত বনধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় কিন্তু শুধুমাত্র ভারত বনধ হচ্ছে না। যখন রেল রোকো হচ্ছে তখন কিন্তু সাতশো-আটশো জায়গায় রেল রোকো হচ্ছে। পাঞ্জাব হরিয়ানা মিলে ৫০টি জায়গা হতে পারে। পাঞ্জাব হরিয়ানা এই আন্দোলনের মুখ্য কেন্দ্রবিন্দু, তাঁরা সামনের সারিতে আছেন। কিন্তু এই আন্দোলনটি শুধুমাত্র পাঞ্জাবের আন্দোলন এটি একটি ক্যালকুলেটেড ক্যাম্পেইন। এটা ভারতবর্ষের আন্দোলন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ভারতবর্ষের সমস্ত কৃষক দ্বারা সংগঠিত আন্দোলন।

কিন্তু আন্দোলনের যে বিকাশ তা ইউনিফর্ম হয় না কারণ আপনি এক হাজার বছরের ইতিহাস দেখুন। ভারতবর্ষের কোনও আন্দোলনই ইউনিফর্ম নয়। প্রথম হচ্ছে যে, আক্রমণের ধারাটি কী তার ওপর নির্ভর করে আক্রমণ কাকে বেশি প্রভাবিত করেছে এবং কাকে কম প্রভাবিত করছে। আজকে এই যে এমএসপি যদি তুলে দেয় এবং তিনটে আইন যদি পাশ হয়, তাহলে একেবারে প্রথমেই পাঞ্জা্‌ব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এই সমস্ত জায়গার কৃষকেরা কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়ে যাবেন, কারণ সরকারি মান্ডি উঠে গেলে প্রাইভেট মান্ডির কাছে তাঁরা কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। তাঁরা ইমিডিয়েট আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে। আর দূরে যারা আছেন তাঁরা জানেন এই আইন কার্যকরী হলে যেহেতু তাঁদের কোনো সরকারি মান্ডি নেই, তাঁরা এমনিতেই পাঁচশো হাজার টাকায় সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তো এই মিনিমাম সাপোর্টটুকু তিনটে রাজ্য ছাড়া আর কেউই সেভাবে পায়না। ১৮৬৮ টাকা ধানের দাম ঠিক করে দিচ্ছে সিএসকে, তবে এই দামটিও ঠিক নয়। এটাও খরচের চেয়ে অনেক কম। তবুও এটা সরকার ঠিক করে দিচ্ছে। কিন্তু যেখানে ক্রেতাও রেজিষ্টার্ড এবং বিক্রেতাও রেজিষ্টার্ড অর্থাৎ সরকারি মান্ডি, সেখানে যখন আপনাকে ফসল কিনতে হবে তখন ওই দামেই কিনতে হবে। এর কমে কিনতে পারবেন না। কিন্তু এর বাইরে যখন কেউ কিনবে তখন এই যে মিনিমাম রেট রয়েছে তার কোনো মূল্য থাকবে না এবং ভারতবর্ষের কোনও জায়গায় কোনও কৃষক ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার বেশি পাচ্ছেন না। অতএব ভারতবর্ষের প্রায় ৮০% কৃষক এই ঘোষিত দাম পাচ্ছেন না। আমরা মনে করি না এটা ন্যায্য দাম, তারপরেও যেটা সরকার ঘোষণা করছে ৮০ ভাগ কৃষক সেটা পাচ্ছেন না। সেই জন্য যারা পাচ্ছেন তাদের ইমিডিয়েটলি হারাতে হচ্ছে, তাঁদের এক রকমর রিঅ্যাকশন। আর যাঁদের মান্ডি নেই তাঁরা জানেনও না কি হারাচ্ছেন বা কী তাঁদের মূল সমস্যা, তাঁরা জানেন এটা হলে তাঁদের ভালো হবে, সুতরাং তাঁদের এক রকম রিঅ্যাকশন। কারণ স্বামীনাথন কমিটি বলেছিল এই মান্ডি সিস্টেমটাকে প্রসারিত করা, আরও আড়াই লক্ষ মান্ডি তৈরি করা। অন্তত প্রতি ৯ কিলোমিটারে একটি করে মান্ডি থাকবে। তার মানে যাতে লোকজন মালটা নিয়ে যেতে পারে। ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত তো আর মাল নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, গোটা ভারতে যদি আড়াই লক্ষ মান্ডি তৈরি হয় এবং সেটা প্রতি ৯ কিলোমিটার অন্তর হয় তাহলে সেই মান্ডিতে যখন কৃষক বিক্রি করতে যাবেন এবং সরকার দামটা নির্ধারিত করে দেবে তখন সেখানে দামটা যাইহোক অন্তত সেই দামটা পাবে। যেহেতু মান্ডি নেই এবং তারা ওপেন বাজারে গিয়ে বিক্রি করছে এবং সেখানে সেই বারোশো থেকে পনেরশো টাকার বেশি পাচ্ছেন না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় লস। সেজন্যই এক রকম রিঅ্যাকশন হবে না। তোমার মাথায় এখনই লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তুমি যা রিঅ্যাকশন দেবে, এক মাস বাদে যার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হবে দুজনের রিঅ্যাকশন কিন্তু একই রকম হবে না। তারা বুঝতে পারছে যে তাদের বিপদ রয়েছে, তিনটে আইন লাগু হলে তাঁদের বিপদ আছে। কিন্তু সেই বিপদের ইমিডিয়েট রিঅ্যাকশন কী এবং লঙ টার্ম রিঅ্যাকশন কী তার উপরে নির্ভর করবে আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া। রিঅ্যাকশন হচ্ছে। যখন জেল ভরো হচ্ছে তখন কৃষকরা জেলে যাচ্ছেন, যখন সারা ভারতে বনধ হচ্ছে, তখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এতে অংশগ্রহণ করছেন। দুটো ফর্মে আন্দোলন হচ্ছে। এই দুটো ফর্মকে বাদ দিয়ে, আমাদের কথাবার্তাকে ভুল দিকে ব্যাখ্যা করে একধরণের প্রচার চালাচ্ছে মিডিয়া। সরকার নিজে বলছে যে এটি পাঞ্জাবের আন্দোলন, এই সমস্ত কথা বলে আন্দোলনের যে সামগ্রিক চরিত্র তাকে নষ্ট করে দেওয়ার এবং আন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ক্রমাগত।

২৫ বছরে নিও-লিবেরাল পলিসি গ্রহণ করার ফলে প্র্যাকটিক্যালি ট্রেড ইউনিয়নগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ এই নয়া উদারবাদ নীতির মূল কথাই হচ্ছে পার্মানেন্ট ওয়ার্কার নেই। ৯০ শতাংশ হচ্ছে গিয়ে টেম্পোরারি এবং ক্যাজুয়াল ওয়ার্কার। এই ক্যাজুয়েলরা কখনই সংগঠিত আন্দোলন করে উঠতে পারে না। কাল কাজে আসবে এবং কালই বলে দেবে যে তুমি এসো না। তার কোন অধিকার নেই এবং যেটুকু ছিল, সেটুকু চারটে লেবার কোড করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেজন্যই ট্রেড ইউনিয়ন ডাক দিলেও আগে যেরকম পার্মানেন্ট ওয়ার্কাররা আন্দোলন করতে আসতে পারতো, এই ক্যাজুয়েল ওয়ার্কাররা সেটা করতে পারছে না। ভরসাও হয় না, আর করতেও পারবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে কৃষকরা যেরকম মাসের-পর-মাস এক জায়গায় বসে থাকতে পারে, শ্রমিকদের পক্ষে তাদের কোম্পানির বা ফ্যাক্টরির কাজ ছেড়ে, রুজিরুটি রোজগার ছেড়ে এসে এতো লম্বা আন্দোলন করা সম্ভব নয়। সেজন্যই আন্দোলনের চরিত্র আলাদা। এই সমস্যাগুলো আছে। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন প্রচন্ডভাবে গোটা বিশ্বেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। নিও-লিবারেল পলিসির মতলবই হচ্ছে, কোনও সংগঠিত শিল্প থাকবে না, সবটাই হয়ে যাবে আনঅর্গানাইজড সেক্টর। আনঅর্গানাইজড সেক্টর হয়ে গেলে তার কোন গ্যারান্টি থাকবে না, চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকবে না, তার কোনও অধিকার থাকবে না, কাজের ঘন্টা থাকবে না, তাকে যখন ইচ্ছে বলে দেওয়া যাবে, যখন ইচ্ছে ছুটি দিয়ে বাদ দেওয়া যাবে এবং চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া যাবে। এটাই হচ্ছে নিও লিবারাল পলিসির মূলমন্ত্র। এটাই গোটা পৃথিবীতে প্রায় ৩০ বছর ধরে কার্যকর করা হয়েছে এবং এখনও তার চেষ্টা চলছে। যার ফলে গোটা পৃথিবীতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেছে এবং ক্ষমতাকে আঘাত করার শক্তি চলে গেছে। এটা হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের মূল সমস্যা। এখন আক্রমণ হতে হতে এবং মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ও তারা যদি বিদ্রোহ করে তাহলে একটা আলাদা রূপ নিতে পারে। কিন্তু ডেমোক্রেটিক পদ্ধতিতে আন্দোলন চালানো আজকের দিনে ওয়ার্কারদের পক্ষে খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাছাড়াও সমস্ত পাবলিক সেক্টরগুলোকে বিক্রি করে দেওয়ার যে পলিসি শুরু হয়েছে, তাতে এবার সবকিছু যদি প্রাইভেটের কাছে চলে যায় তাতেই ওয়ার্কারদের যে রাইটসগুলো ছিল সেই গ্যারান্টেড রাইটসগুলো আর কারোর থাকছে না অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অনিশ্চয়তার বাতাবরণে তাদের পক্ষে একটি জোরালো আন্দোলন দাঁড় করানো খুবই কঠিন। তারা চেষ্টা করছে; কিন্তু কৃষক আন্দোলনের যে চেহারা, শ্রমিক আন্দোলন সেই রূপ নিতে পারবে না। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, আমাদের অস্ত্বিত্বের সংকট দেখা দিচ্ছে এবং এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে হবে, হয় ওরা বাঁচবে নয় আমরা বাঁচবো এবং এই ভাবনা থেকে যদি একটি বিপ্লবী বাঁক নেওয়া যায় এবং শ্রমিকেরা যদি রাস্তায় নেমে আসে, তবেই তা সম্ভব।

যেমন ধরুন আমাদের কৃষক আন্দোলন ভারতবর্ষের প্রথম কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলন। এর আগে কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হতো টাটা মুর্দাবাদ, বিড়লা মুর্দাবাদ কিন্তু কখনোই সরাসরি কর্পোরেটকে কে আঘাত করা হয়নি, ঘেরাও বা ধর্ণা করা হয়নি। কিন্তু কৃষকরা এই জিও সিম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া, কিংবা রিলায়েন্সের যে স্টোরগুলো রয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া, অর্থাৎ সরাসরি কর্পোরেটকে কে আঘাত করা সেটা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম কৃষকরাই করেছে। অন্য কোনও অংশ কিন্তু কর্পোরেটদের সরাসরি আঘাত করতে পারেনি।

আমরা প্রথম দিন থেকেই একটি মূল বিষয় কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, সেটা হচ্ছে এই তিনটি আইন কার্যকরী হলে ভবিষ্যতে কৃষকদের বাঁচার কোনও সুযোগ থাকবে না। এবং ভারতীয় সরকার কৃষক ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে কর্পোরেট ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে। কৃষি ব্যবস্থা থেকে কৃষকরা চলে যাবেন সেই জায়গাটি দখল করবে কর্পোরেট এবং পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থার সাথে জড়িত সমস্ত জিনিসকে কর্পোরেটের আওতায় নিয়ে আসবে। যেমন উৎপাদন, বন্টন, পরিবহন, বিক্রি, স্টোরেজ এইসব কিছুতেই দখল নেবে কর্পোরেট। কৃষকরা তাদের সব কিছুই হারাবে। সেই জন্যই কৃষকদের ওপর যে আক্রমণ এবং তা দীর্ঘস্থায়ী তা আমরা কৃষকদের বোঝাতে শুরু করি এবং তারা তা বুঝতেও পারে। গ্রাম অঞ্চলের কৃষকেরাও এই তিনটি আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। হয়তো আমি যে ভাষায় এখন বলছি তিনি এই ভাষায় বলতে পারেন না, কিন্তু তাঁরা সব বুঝতে পারছেন যে এই তিনটি আইনের মধ্যে অনেক জটিলতা রয়েছে যা তাদের জন্য ক্ষতিকারক। এবং আস্তে আস্তে সবকিছু আম্বানি-আদানির কাছে চলে যাবে। কৃষকরা তার নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবে।কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আমাদের মধ্যে এখনও আছে কিন্তু সেটা ছোট চাষীদের মধ্যে। তোমার পাঁচ বিঘে জমি আছে তুমি কলকাতায় কাজ করো, তুমি তোমার গ্রামের কাউকে সেটা দিলে, যে চাষ করো। কিন্তু সরকার যে কন্ট্রাক্ট আইন আনছে সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কর্পোরেটের সঙ্গে কৃষকের কন্ট্রাক্ট। এবং সেখানে যখন আম্বানি-আদানির সঙ্গে পাঁচ বিঘে কিংবা পাঁচ হেক্টর জমির কন্ট্রাক্ট সই হবে, তখন কিন্তু কখনোই পাঁচ হেক্টর জমির কৃষকের স্বার্থ দেখা হবে না। যার হাতে ক্ষমতা রয়েছে তার সাথেই সমঝোতা করতে হবে। কৃষকের স্বার্থে আদানি-আম্বানি কখনও কন্ট্র্যাক্ট নেবে না, তাদের শর্তেই কৃষকদের চলতে হবে।
কৃষি ব্যবস্থায় প্রতি বছরই খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির কারণে কৃষকদের মাঝারি থেকে বড়ো ক্ষতি হয়। কিন্তু এরা এই অবস্থা থেকে বেরোতে পারে। কর্পোরেটদের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে তখন আম্বানি-আদানিরাই এইসব জমি অল্প দামে কিনে নেবে। ধীরেধীরে সমস্ত জমি কর্পোরেটরাই নিয়ে নেবে। আপনারা গুজরাটেই দেখুন, পেপসি-কোকাকোলা কোম্পানি কৃষকদের সঙ্গে কী করেছে। তারা আপনাকে শর্ত দেবে যে, আপনি টমেটো উৎপাদন করবেন, কিন্তু অন্য কাউকে বিক্রি করতে পারবেন না। এবার কোনও সময় বৃষ্টির কারণে ধরুন টমেটোর রঙ পালটে গেল কিংবা গায়ে হালকা দাগ হলো, তখন কিন্তু তারা আপনার মাল সম্পূর্ণভাবে রিজেক্ট করে দেবে। এবং তাতে আপনার কোনো লাভ হলো না, সারা বছরের পরিশ্রম মাটিতে যাবে। সুতরাং শর্ত যখন চাপানো হবে তখন শর্ত কর্পোরেটের লাভের পক্ষ নিয়েই কথা বলবে এবং এতে করে সাধারণ কৃষক সেই শর্তের সামনে দাঁড়াতে পারবে না।

বামপন্থী আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে যে, একটি বড়ো আক্রমণকে যদি আমরা ঠেকাতে পারি এবং বহুল অর্থে যদি কর্পোরেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে জমিদার এবং ধনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শক্তিশালীরা যতো দুর্বল হবে, শোষকদের মধ্যে যারা ছোট শাসক আছে তাদেরও শক্তি বাড়বে না। সুতরাং আন্দোলন করে যদি আমরা কর্পোরেটদের বেকায়দায় ফেলতে পারি তাহলে কৃষকদের মধ্যে যারা ধনী জমিদার যারা প্রধানত এক্সপ্লয়টার তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা দুর্বল হবে। তারা তো বরাবরই কর্পোরেটদের সঙ্গে সমঝোতা করেই চলে। তারা চায় না খতম হয়ে যাক কর্পোরেট। কিন্তু এই আন্দোলনে তারাও অংশগ্রহণ করেছে, তার কারণ তারাও এই মুহূর্তে এই তিনটি কৃষি আইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করবে। সেজন্যই এই আন্দোলনে তারাও আছে। কিন্তু মাঝারি চাষী, ভাগ চাষী, গরিব চাষী সবাই তাঁদের বিপদটা আঁচ করেছে এবং বিরাট সংখ্যায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।আমরা ভাবছি যে যদি সরকারকে আমরা বাধ্য করতে পারি যে কৃষকদের ফসল কেনার যদি একটা গ্যারান্টি দেওয়া হয় তবেই কৃষক বাঁচবে। নয়তো কৃষককে বাঁচানো যাবে না। সেই কারণেই কৃষকরা এত মরিয়া হয়ে উঠেছে। ডু অর ডাই-এর লড়াই। মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি) যদি না দেওয়া হয় তাহলে কৃষকদের চলবে না। এখন যা দাম দেওয়া হয় এই দাম খরচের আশেপাশেও যায় না। অনেক কম টাকা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার যা দাম দেয় তার চেয়ে কুড়ি শতাংশ কম দাম এরা দেয়। চাষ করতে যা খরচ হয় তার চেয়ে অনেক কম তাদের দেওয়া হয়। তাছাড়া চাষ করতে গিয়ে যা জিনিসপত্র দরকার হয় বীজ সার বিদ্যুৎ ইত্যাদি জিনিসের দাম প্রচন্ডভাবে বেড়ে গেছে, কিন্তু ফসলের দাম দেওয়া হচ্ছে না ফলে কৃষকদের হাতে কোনও ভাবে টাকা আসছে না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কৃষকেরা যখন এই সঙ্কটের মুখোমুখি তখন একটি ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ না করা যায় তাহলে খুব মুশকিল।

আমরা সরকারকে বলছি না যে তোমাকেই ফসল কিনতে হবে। কারণ আমরা জানি যে সমস্ত ফসল সরকার কিনতে পারবে না। আমরা তো পাগল নই, আমরা বলছি যে তুমি আইন করো যাতে এর নিচে কেউ ফসল কিনতে না পারে। তুমি যখন মান্ডি থেকে একটি নির্দিষ্ট দামে ফসল কিনছো তখন বাকি ৮০% জায়গায় সেই নির্দিষ্ট দামেই ফসল বিক্রি করা হোক। যদি তা না হয় তবে যারা কম দামে কিনবে তাদের সাজা দেওয়া হোক আমরা এই আইনটি চাইছি। এতে করে প্রান্তিক কৃষক, মাঝারি কৃষকেরা কিছু টাকা পাবেন। কিন্তু এখন সেসব হচ্ছে না। এখানে কৃষকদের থেকে ১২০০ টাকায় কিনে নিয়ে গিয়ে সরকারকেই ১৮০০ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু এই টাকা কৃষকেরা পাচ্ছেন না, যারা মিডলম্যান তারাই এই বাড়তি টাকাটা পাচ্ছে। কৃষক ঠকছে সেখানে।সরকার পক্ষের লোকজন খুব বেশি সুখী নেই। যতই মিথ্যা প্রচার করুক, আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু সেই মিথ্যাকে ধরে ফেলেছে। তারা বিশ্বাস করছে না এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ আমাদের আন্দোলনের সাথে জুড়ছেন। মোদি বলছে আমি এমএসপি দিচ্ছি, সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা। ওরা যা দিচ্ছে সেটা হচ্ছে এ টু প্লাস এফ এল, আর আমরা চাইছি টু প্লাস ফিফটি পার্সেন্ট। এই এ টু প্লাস এফএল হচ্ছে, উৎপাদন খরচ অর্থাৎ ফসল উৎপাদন করার জন্য যা যা জিনিস পত্র দরকার তার সঙ্গে ফ্যামিলি লেবার সেটা যুক্ত করে যা দাঁড়াচ্ছে, তারা বলছে এর সঙ্গে আরও দেড় গুণ। আর সি টু প্লাস ফিফটি পার্সেন্ট মানে হচ্ছে, সমস্ত খরচা গুলি এর মধ্যেই থাকবে। এ টু প্লাস এফ এল-এর মাধ্যমে যা দাম ধরা হচ্ছে, তাতে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কম ধরা হচ্ছে। সরকার কোম্পানিগুলোকে নানান সুযোগ-সুবিধা করে দিচ্ছে কিন্তু কৃষকদের ক্ষেত্রে তা কোনোভাবেই করছে না।আমরা কৃষক আন্দোলন করছি। আমরা কোনও রেজিস্টার্ড পলিটিক্যাল পার্টি নই। আমাদের সংগঠন কৃষকদের সংগঠন যারা কৃষকদের দাবি নিয়ে কাজ করে। তাদের ইলেকশনে দাঁড়াবার কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু আমরা এটা বুঝেছি যে ইলেকশনের একটা রোল আছে। এদেরকে ভোটে আঘাত না দিলে আটকানো যাবে না। আমাদের তরফ থেকে কোনও কৃষক ভোটে দাঁড়াবেন না। কৃষক আন্দোলন থেকে ঠিক করা হলো, যখনই কোনও নির্বাচন হবে আমরা কৃষকদেরকে বোঝাব যে বিজেপি তোমার দুশমন তোমার দাবি মানছে না তোমার সর্বনাশ করছে, তাই বিজেপিকে ভোট দিও না। যাকে দেওয়ার তাকে দেবে সেটা ঠিক করে নাও, কিন্তু আমরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেনিং করতে যাইনি। কিন্তু তাঁদের বুঝিয়েছি যে তোমরা বিজেপিকে ভোট দিয়ো না। তারপর প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে তিনটি রাজ্যে বিজেপিকে হারানো গেছে। কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এবার আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আরো ছটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আমরা মিশন ইউপি, মিশন উত্তরাখন্ড ঠিক করেছি। কৃষকেরা সেখানে যাবে লোকজনকে জানাবে যে তোমার প্রধানত দুশমন সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে এনডিএ সরকার তাকে ভোটে হারাও। প্রতিনিয়ত ৭ বছর ধরে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে আর নির্বাচনের ফলাফল বের হতেই দাম পাঁচ টাকা দশ টাকা কমে গেলো। আমরা বুঝতে পেরেছি যে যদি এদের ভোটে না হারানো যায় তবে এদের থেকে দাবি আদায় করা যাবে না। সুতরাং আমরা কৃষকদের এইটাই বোঝাচ্ছি যে তোমরা বাঁচবে যদি এদের তাড়াতে পারো।আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে গেছে এবং এখনও যাচ্ছে। বারবার করে বলা হচ্ছে এরা খালিস্থানি, পাকিস্তানি, চীনের দালাল ইত্যাদি ইত্যাদি। ২৬শে জানুয়ারি ক্রিমিনালদের দিয়ে কৃষকদের বদনাম করানোর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করালো। কিন্তু কোনো কিছুতেই তারা সাফল্য পায়নি। কেউ তাঁদের বিশ্বাস করেনি। আমরা যখন কৃষকদের গিয়ে বলেছি যে তারা মিথ্যে কথা বলছে, তখন কৃষকেরা আমাদের কথা বিশ্বাস করেছে। যারা এইসব ঘটিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে মোদি-শাহের ছবি রয়েছে, কৃষিমন্ত্রীর ছবি রয়েছে। সুতরাং আমরা বারবার করে বলেছি এইসব আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য এইসব করা হচ্ছে। আমরা বারবার করেই বলছি এই কৃষক আন্দোলন ভারতের দীর্ঘতম গণ আন্দোলন এবং আগামী দিনে ভারতের সমস্ত গণ আন্দোলনের বুনিয়াদ হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র: কলকাতার গ্রাউন্ডজিরোর টিংকু খান্নাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হান্নান মোল্লা