বাবু / Remembering Babu Dalui

সাত বছর আগে বাবা মারা গেছিলো বাবুর। মা ছিল মানসিক ভারসাম্যহীনা এবং তিনিও দু’বছর আগে আত্মঘাতী হন। যে বয়সে ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ায়, গ্রামের বন্ধুদের সাথে মুন্ডারী, ডাংগুলি খেলে সেই বয়সে বাবু দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনা চালাত। দিনমজুরের মজুরি থেকে বই কিনত।

যে ঘরে বাবু আত্মহত্যা করেছে, সেই ঘরেই এই বই গুলো এখনো আছে । জুম করলে আপনার চোখে পড়বে একাডেমিক বইয়ের মাঝে নজরুলের সঞ্চিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঞ্চয়িতা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ প্রশ্ন উঁকি মারছে।

পড়াশোনার অবসর সময়ে ভাগ চাষেও দিনমজুর হিসেবে খাটত শিক্ষকতার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাবু। বাবুর বইয়ের সংগ্রহতে বারবার চোখে পড়ছিল কৃষি সম্বন্ধীয় বেশ কিছু বই। একটা বইয়ের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে “সৃজন ও উৎপাদন”। জীবনের সবটাকে পড়াশোনার ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল বাবু। চাষের বই পড়ে চাষ করত, আর সেই বই কিনে আনত দিনমজুরির পয়সায় দিনমজুরের পয়সা থেকে চাকরির ফর্ম ফিলাপ করত।

পিএসসি ফর্ম ফিলাপ করে পরীক্ষা দেওয়ার পর পিএসসি ক্লার্কশিপ চূড়ান্ত তালিকায় ৬০০০ এ নাম আসে বাবুর। শূন্যপদ ৭২০০।

ঐকিক নিয়মের থেকেও সহজ অংক, বাবুর চাকরিটা হয়ে গেছিল। তারপর সরকারের টালবাহানায় বাতিল হল সেই চূড়ান্ত তালিকা। বাবুর নাম পিছিয়ে চলে গেল ১৮০০০।

বাপ মা মরা অনাথ ছেলেটা দিনমজুরি করে অনেক রাত জেগে মাটির মেঝেতে বসে স্বপ্ন দেখেছিল একদিন চাকরি করবে, সেই পাওয়া চাকরি যখন সরকারের খয়রাতিতে না পাওয়া হয়ে গেল, বাবু বেছে নিল চরম পথ। একি শুধুই আত্মহত্যা, নাকি মৃত্যু দিয়ে প্রতিবাদ করে গেল? এ রাজ্যে কি যোগ্যতার কোন দাম নেই?

বাবু রবীন্দ্রনাথ পড়তো, বাবু নজরুল পড়তো। তাই বাবু আত্মহত্যা করতে পারেনা। রাষ্ট্র খুন করেছে বাবু দলুইকে। বাবুর এই মর্মান্তিক পরিণতি বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক।
জবাব রাজ্য সরকারকেই দিতে হবে, কেন বাতিল হল পিএসসির চূড়ান্ত তালিকা?