বাংলা একাডেমীর “বিশেষ” পুরস্কার এবং বাঙালি / Bangla Academy Award
![বাংলা একাডেমীর “বিশেষ” পুরস্কার এবং বাঙালি / Bangla Academy Award](https://riseofvoices.com/wp-content/uploads/2022/05/png_20220510_185715_0000-845x550.png)
একদিকে তিনি বঙ্গ প্রশাসনের সর্বময় কর্ত্রী, অন্যদিকে ‘নিরলস সাহিত্য সাধনা’, তাতেই তিনি জিতে নিলেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমীর বিশেষ পুরষ্কার।
আপনার তার কবিতা পছন্দ নাই হতে পারে, তাই বলে কি কেউ কবিতা লিখতে পারবেন না! অবশ্যই পারেন। তাই তিনি লিখছেন, প্রকাশক ছাপছেন, বইমেলায় হটকেকের মতন তার বই বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে “নিরলস সাহিত্য চর্চা” আর কি হতে পারে! শিল্পীর শিল্পপ্রয়াস থামে না, থামতে চায় না, তবে “জনস্বার্থে” তা কখনো কখনো থামানো হয়। কখনো তা হতে পারে কালী ব্যানার্জি অভিনীত, “নীল আকাশের নীচে”, কখনো “গরম হাওয়া”, কখনো “আঁধি”, কখনো “পশুখামার”, কখনো “উইঙ্কেল টুইঙ্কেল”, কখনো “বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম”, কখনো “আনফ্রিডম”, কখনো বা “ভবিষ্যতের ভূত”। “স্বার্থ” ঠিক কার তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, একে সাধারণভাবে শাসকরা “জনস্বার্থ” বলেই অভিহিত করে থাকেন।
মালিক, আয়োজক এবং শাসকেরাই পুরস্কার প্রদান করে থাকেন এই দেশে, তাই অনেকেই পুরস্কার পান। আবার প্রাপকের তালিকায় মাঝে মাঝেই ঢুকে যান শাসক খোদ নিজে। যেমন “ভারতরত্ন” ভূষিত নেহেরু, “লতা মঙ্গেশকর পুরষ্কার” খ্যাত মোদী এবং “বাংলা একাডেমী পুরস্কার” বিজয়ী ব্যানার্জি। ইংরেজিতে একটা শব্দবন্ধ আছে, “পাথ-ব্রেকিং”। বাংলা একাডেমীর এই পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত সত্যিই “রাস্তা ভেঙেছে”। শাসকেরা নিজেরাই নিজেদের হঠাৎ পুরস্কৃত করেছেন এই ঘটনা নতুন নয়। দেশ-বিদেশের শাসকরাও এইসব আকছাড় করে থাকেন। বাংলা একাডেমী হয়ত সেই ধারা বজায় রাখতে চেয়েছেন।
তবে মাননীয়ার এই পুরষ্কার প্রাপ্তির পর, যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে ক্যাক্যাছিছি’র সুনামি এসেছে, তাতে শাসকের মুখের হাসি চওড়া থেকে চওড়াতর হচ্ছে।
সারদা-নারদা মানুষ আগেই ভুলেছে, সুদীপ্ত, মণিশ, আনিশ, অনুপম, তুহিনা সব ভুলেছে মানুষ। নিত্যদিনের সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি থেকে পেট্রোপন্যের লাগামছাড়া দাম আজ গা-সওয়া হয়ে গেছে মানুষের। পুকুর থেকে মাঠ, পাহাড় থেকে অরণ্য হরণ আজ প্রতিষ্ঠানিক। এটাই তো বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। প্রত্যেকের জীবনে নানান সমস্যা দিন দিন বাড়ছে, বেকারের চাকরির সমস্যা, চাকরিজীবীর ডিএ-এর সমস্যা, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ার সমস্যা, শ্রমিকদের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা, আদিবাসীদের ভিটেমাটি হারানোর সম্ভাবনা তৈরির সমস্যা, হু হু করে টাকার দাম পড়ার সমস্যা ইত্যাদি। এখানে সব সমস্যাই পৃথক। সমস্যায় বৈচিত্র থাকলেও, সমাধানের পথ খুঁজতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ। অধিকাংশই চুপ।
তাই হয়ত মানুষ আর সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছেন না, তার বদলে শাসকের স্তুতি করছেন, কেউ রঙ্গ রসিকতায় মেতে উঠেছেন। শাসক এটা বেশ ভালোই বুঝেছে। তাই মানুষের সমস্যাগুলোর দিকে আঙুল তোলার পরিস্থিতি এলেই, “গোলি মারো”, “দুধে সোনা” অথবা “টিভি ব্লাষ্টের তত্ত্ব” অথবা “মেয়েটা কি প্রেগনেন্ট ছিল” ইত্যাদি চলে আসছে। ফলে শাসকরা এবং তাদের মদতপুষ্ট অনুগত মিডিয়া যা চাইছে, তাই হচ্ছে। আটকাতে পারবেন কি?
উত্তরে অনেকেই হয়ত বলবেন, “এর থেকে তো বেরোনোর মনেহয় উপায় নেই, তাই সবকিছু দেখার প্রয়োজন নেই” আবার অনেকেই বলবেন,”শাসককূল এবং মিডিয়া আপনার যেদিকে দৃষ্টি নিয়ে যেতে চাইছে, সেদিকে না তাকিয়ে তাদের ঠিক উল্টোদিকে তাকান। দেখবেন রাজনীতির ভাঁজে মুখ লুকানো খবরগুলি উকি মারবে আপনার সামনে।”
পরিশেষে জানাই, বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন সাহিত্যিক রত্না রশিদ ব্যানার্জি। এছাড়াও সাহিত্য একাডেমীর উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করলেন অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস। আজও অনেকেই রঙ্গ রসিকতায় মেতে ওঠেন না। প্রয়োজনে পদক্ষেপও নেন।
তথ্যসূত্র :
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/mamata-banerjee-received-the-bangla-academy-award-dgtl/cid/1343265
b) https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_films_banned_in_India
c) https://www.thehindu.com/news/national/pm-modi-receives-lata-mangeshkar-award/article65351492.ece
d) https://kolkata24x7.in/west-bengal/west-bengal-bangla-acedemy-ratna-rashid-protest-against-mamata-banerjee/
Comments are closed.