হামারে নেতা ক্যায়সা হো / what kind of Leader do you want?

সম্প্রতি দুটি দক্ষিণী ছবি ভূ-ভাব়তের রুপোলী পর্দা তোলপাড় করেছে। একটির নাম পুষ্পাঃ দ্য রাইজ আর অপরটির নাম কেজিএফ-২। আমরা যদিও মূলতঃ কেজিএফ-২ এর প্রসঙ্গই উত্থাপন করবো, কিন্তু পুষ্পাঃ দ্য রাইজের সেই বিখ্যাত ডায়লগ, “শালা…ঝুকেগা নেহি”র প্রতি মানুষের মোহকেও অস্বীকার করব না। কেজিএফ-২ হল রকি ভাইয়ের “দুনিয়া” জেতার বীরগাথা। তার বিপুল সাহস এবং শক্তি। তাই তিনি গুলি করে থানা উড়িয়ে বন্দুকের নলের উত্তাপে সিগারেট ধরান, ভরা লোকসভায় ঢুকে গুলি করে মারেন সাংসদকে। সেলুলয়েডের পর্দায় তিনিই “মালিক”, অনুগতদের দেন আস্থা, আর শত্রুকে দেন চরম শাস্তি। ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায় না। তাই নিজেই তিনি নিজের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে করতে যান এবং প্রধানমন্ত্রীও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিড়ম্বনায় পড়েন। ইনিই হলেন “অকুতোভয়” রকি ভাই। বিগ স্ক্রিনে তার ভয় দেখানোর মুন্সিয়ানা মানুষকে বারে বারে উদ্বুদ্ধ করে হাততালি দিতে। ঠিক একইভাবে নেতাদের মধ্যেও অনেকেই “রকি ভাই”য়ের আদল খোঁজেন। আশা করেন, সেই নেতা যেন তার অতিকায় ভাবমূর্তি আর কঠোর শাসন দিয়ে মানুষকে বশে রাখেন। তাতে তিনি নিজে গন্ডাখানেক আইনকানুন ভাঙলেও অসুবিধা নেই। এমনকি পুষ্পাঃ দ্য রাইজ এর মত চন্দনকাঠ চোরাচালানকারী বা পাচারকারী হলেও চলবে! শুধু “শালা…ঝুকেগা নেহি” টাইপ হতে হবে। দুমদাম ঝাড়পিট করবে, ঢিসুম ঢিসুম গুলি ছুঁড়বে, গাড়ি জ্বালাবে, বাড়ি জ্বালাবে, বোম ফেলবে, লোক মারবে, কিন্তু “ঝুকবে” না। আর এতেই আমাদের সন্তুষ্টি। আর তাই বাস্তবে সেটাই হয়।

যুগে যুগে প্রমাণিত, শাসকের প্রথম পছন্দ হল ভয়। ভালোবাসার মধ্যে মানুষের প্রতি যে দায়বদ্ধতা লুকিয়ে থাকে তা শাসকের বিলকুল নাপসন্দ। বরং মানুষের মধ্যে কঠোর অনুশাসনের বাতাবরণে ভয় ঢুকিয়ে সমীহ আদায় করে নেওয়াই হল ক্ষমতায় টিকে থাকবার আসলি দাওয়াই, এটা শাসক মাত্রই বোঝে। কাজেই যা কিছু হয়ে যাক, পান থেকে যেন চুন না খসে। কিন্তু চুন শুকিয়ে গেলে পাছে খসে পড়ে তার জন্যও নেওয়া হয়ে থাকে অভিনব পন্থা। সিনেমার হিরো-হিরোইনদের মত দুদিন অন্তর খবরের কাগজের পাতায়, টিভি পর্দায় অথবা মোবাইলের স্ক্রিন জুড়ে দেওয়া হয় শাসকের ছবি সহ ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন। বিকাশ হোক বা উন্নয়ন, তা তো খাওয়া যায় না, কিন্তু শাসকের মুখ আপনার চিন্তাভাবনার রাস্তায় অলিগলিতে মুচকি হাসে। আর এভাবেই “আমি আর ভগবান ছাড়া তোমাদের কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই” এমনই একটা ভাবনা সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মানুষের মধ্যে। ঐ ঠিক অনেকটা “রণে, বনে,জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিও”র মত।

এতেই বেশিরভাগ মানুষ ভরসা পান। কিন্তু সেই ভরসার উৎসস্থল “ভয়” না “ভালোবাসা” তা তলিয়ে দেখবার আমরা সময় পাই না।

আমাদের কাছেই আমাদের বাক-স্বাধীনতা, মানবাধিকার বা নুন্যতম মুল্যবোধ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। কারণ শাসক ঘটনাচক্রে আমার বিরুদ্ধ মতবাদীদের সকাল-বিকেল ষষ্ঠীপূজো করছেন, যেটা আমাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এভাবে নিজেদের অজান্তেই কখন যে শাসকের পরণে শাড়ি থাকলে “মা” আর গালে দাড়ি থাকলে “ফকির” ভেবে ফেলি, বুঝতে পারি না। অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইকে দেশদ্রোহীতা ভেবে আনুগত্য প্রদর্শনের খেলায় মেতে উঠি। “আচ্ছে দিন” খুঁজতে খুঁজতে সুকতলা খইয়ে হয়রান হয়ে সবশেষে আরও পঁচিশ বছর দূরের অমৃতকালের সন্ধান পাওয়াকেই পরম পাওয়া হিসেবে মেনে নিই। সোনার বাংলা গড়বার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পাড়ার সোনার দোকানের ফিতে কাটলেও হাততালি দিই। চিড়িয়াখানায় শাসকের অনুপ্রেরণায় জন্ম নেওয়া সিংহ শাবকের বাচ্চার মত তর্জন-গর্জন করি, কিন্তু খাঁচাবন্দী অবস্থাটা স্বীকার করতে চাই না। আর এর কারণও আমাদের ঐ “ঝুকেগা নেহি” মানসিকতা! যা করব বুক চিতিয়ে! এমনকি পদলেহন করতে গেলেও যে ঝুঁকতে হয়, সেটাও মানতে নারাজ থাকি। কারণ তদ্দিনে আমরা শাসকের “অন্ধভক্ত” হয়ে পড়েছি। এভিলের মধ্যেও “শালা…ঝুকেগা নেহি”র মহত্ব পেয়ে যাই। এভিলের গ্রেটার আর লেসার দুটো ভাগ করি। ফলে “এভিল” জিনিষটা মনের ভেতর পাকাপোক্ত একটা জায়গা তৈরি করে ফেলে। তারপর সেই “এভিল” মন “ডেভিল” নেতাদের নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতেই থাকে, বুনতেই থাকে… “শালা, রুখেগা নেহি!”

জন্ম দিই দুঃশাসনের।

আর এভাবেই আমরা যেমন, বাস্তবে আমাদের জীবনে আমরা তেমন নেতাই পাই।

কাজেই খালিপিলি উডবার্ন ওয়ার্ড নিয়ে খিল্লি করে লাভ কি!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস