কোন কাজই ছোট নয় / Nostalgic Bengali
আজ আমরা কু-ঝিকঝিক করে একটু নস্টালজিক হচ্ছি।
ছোটবেলায় বাড়িতে শুনেছি এভাবে লেখাপড়ায় ফাঁকি দিলে চায়ের দোকানে কাজ করে খেতে হবে। একটু বড় হয়ে কানে এল, যা গিয়ে বিড়ি বাঁধ তারপর দেখ, কেমন লাগে। গ্র্যাজুয়েটটাও হতে না পারলে ফুটপাথে বসে রুমাল বিক্রি করতে হবে। তোর ছোট পিসির ছেলেকে দ্যাখ, কেমন লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে! কত বড় চাকরি করে। সামনের অগ্রহায়নে বিয়ে। মেজো কাকার মেয়ে ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে গেল। আর তুই! ছিঃছিঃ। শেষে পাড়ার মোড়ে পান-বিড়ির দোকান দিয়ে পেট চালাতে হবে। ভাবলেই লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যাচ্ছে! বাবা-মায়েদের এইসব লাঞ্ছনা-গঞ্জনা মেনে নিয়েই আমাদের বড় হওয়া। “বাপের হোটেল” মানে সব ফ্রি। খিস্তিও। কাজেই একান দিয়ে ঢুকিয়ে ওকান দিয়ে বের করে দিয়েছি। আর মনে মনে তাল ঠুকেছি! আপনা টাইম আয়েগা!
আমাদের সেই অভিমান বোধহয় ওপরের “তিনি” শুনতে পেলেন। আর তাই একদিন ঠিকই সারমেয় শাসনে আমাদের মত কুত্তাদের দিন এসেই গেল। এখন গ্র্যাজুয়েট কোন ছাড়, মাস্টার্স করা ছেলেমেয়েরা সত্যি সত্যি ফুটপাথে শুয়ে আছে চাকরির দাবী নিয়ে। এখন সরকার শ্মশানের ডোম, হাসপাতালের ঝাড়ুদারের কাজের জন্য বিজ্ঞাপন দিলে কয়েক লক্ষ আবেদন জমা পড়ছে। আবেদনকারীদের মধ্যে এমএ, এমএসসি, এমবিএ, ইঞ্জিনিয়াররাও রয়েছে।
আর ঠিক এমন মাহেন্দ্রক্ষণে কানে এল নতুন প্রবচন “কোনো কাজই ছোটো নয়”। এমএ পাশ ছেলেমেয়ে পাড়ার মোড়ে চা-এর দোকান দিচ্ছে। চপ ভাজছে। গ্র্যাজুয়েট গৃহবধূ সংসারের হাল টানতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হকারি করছে। ট্রেনে ট্রেনে মহিলা কম্পার্টমেন্টে নাইটি-পেটিকোর্ট বিক্রি করছে। কাগজে কাগজে ছবি সহ হেডিং “কোন কাজই ছোট নয়।” সামাজিক কুন্ঠা-অবজ্ঞা দূরে সরিয়ে আত্মনির্ভরতার জন্য এসবই নাকি সাহসী পদক্ষেপ।
নেতা-মন্ত্রীরাও তাতে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন। যেমন ত্রিপুরার অধুনা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব বলেছিলেন, “যারা তিন চার বছর ধরে চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা গরু পুষে দুধ বেচলে এতদিনে পাঁচলক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হতো।” আমাদের রাজ্যে তো অনুপ্রেরণার ঠেলায় চপ-ফুলুরি ভেজে দোতলা -তিনতলা বাড়ি তো সেই কবেই উঠেছে! আর প্রধানমন্ত্রী ও তার দলবল যখন বলছেন, তখন পকোড়া ভেজে আত্মনির্ভর হওয়ার লড়াকু পথ নিশ্চিত ভাবে কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বা এমবিএ পাশ করা ভারতবাসীর একবার অন্তত পরখ করে দেখা উচিৎ।
যদিও এতসব পরামর্শের মাঝেও ইদানীং যেসমস্ত নেতা-মন্ত্রীদের প্রাসাদোপম অট্টালিকার ছবি-ছাবা কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে তারা চা-চপের দোকান, পান-বিড়ির গুমটি, প্ল্যাটফর্মে ঘুগনি-ওমলেট, ট্রেন কামরায় হকারি ইত্যাদি “বড়” কাজগুলির মধ্যে ঠিক কোনটি করে এমন অসাধ্য সাধন করলেন আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের গ্যারাজে দেশি-বিদেশি বিলাসবহুল গাড়ির কালেকশন দেখে চোখ ট্যারা হয়ে গেলেও গোয়ালঘরটা বাড়ির কোনদিকে বা পোষা গরুগুলো ঠিক কোথায় বাঁধা আছে, তার সন্ধান পাচ্ছি না।
আমরা তাই আজ কিছুটা দিকভ্রান্ত!
আমাদের বাবা-মা রা কি ছোটবেলায় আমাদেরকে ভুল বুঝিয়েছিলেন! এখনকার দিকদর্শী নেতানেত্রীরাই ঠিক!
নাকি নেতা-মন্ত্রীরা দেশের লক্ষ লক্ষ বেকারকে চাকরির খোঁজ দিতে ব্যর্থ হয়ে দায় ঝেড়ে ফেলতে পেটোয়া মিডিয়া আর ভাড়া করা সমাজবিদ/বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে “কোন কাজই ছোট নয়” আপ্তবাক্যটা গণপরিসরে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যত হয়েছেন!
আপনারা কমেন্ট বক্সে লিখে জানান আমাদেরকে।
কমলকুমার মুখার্জী
সব কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে লোকঠকানো অর্থাৎ প্রতারণা এটা আপামর অভিভাবকরাই শিখছেন
বর্তমানে।……. জয় হো।