বিচারের বাণী / Sentences Of Judgement

আনিস খান যদি আপনার পরিবারের সদস্য হত, পারতেন দিনের পর দিন চুপ করে থাকতে ? আজ ৬৩ দিন অতিক্রান্ত।

মুখমন্ত্রী বলেছিলেন ১৫ দিনে সিট্ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে, সেসব এখন অতীত। সিটের এই দীর্ঘসূত্রতার পেছনে কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে কিনা, জানি না। কিন্তু সম্প্রতি আদালতেও এই মামলা নিয়ে একটা গয়ংগচ্ছ ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল মামলার শুনানির দিন ছিল। কিন্তু বিচারপতি রাজশেখর মান্থা যেকোনো কারণেই হোক, সেদিন আদালতে উপস্থিত না থাকায় শুনানি হয়নি। ফলে মামলাটি পিছিয়ে যায়।

আনিসের বাবা, সালেম খান দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন “মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই শুনানি হয়নি।” মানে আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এর জবাবে বিচারপতি রাজশেখর জানিয়ে দেন ”যদি তাই হয়, যদি আনিসের বাবার আদালতের উপর আস্থা না-ই থাকে, তবে আমি এই মুহূর্তে এই মামলাটির বিচারের কাজ থেকে সরে আসতে পারি।”

আনিসের বাবার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রত্যুত্তরে বলেন, ”সালেম খান এক জন সাধারণ মানুষ। তিনি উচ্চশিক্ষিত নন। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন। পুত্রকে হারিয়ে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তবে আইনের প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”
তাতে বরফ গললেও শেষ অবধি বিচারকের নির্দেশে সালেম খানকে হলফনামা দিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়।

আমরা সাধারণ আম জনতা। আইনের প্যাঁচ-পয়জার বুঝি না, যদিও আমাদের বলা হয়ে থাকে আইন কানুন নাকি সব আমাদের জন্যই তৈরি হয়েছে। তাই মাননীয় বিচারপতিদের থেকে জানতে চাই, এই যে যখন রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতির পক্ষ নেওয়া শাসক দলের অনুগত আইনজীবীরা এজলাস বন্ধ করে আদালত চত্বরে দাপাদাপি করেন অথবা যখন কোন বিচারক শাসকের পক্ষে মামলার রায় দিয়ে অবসর নিয়েই রাজ্যসভার শাসক মনোনীত সাংসদ হয়ে যান তখন আদালত অবমাননা হয় না? শুধু সাধারণ গরিব মানুষের বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে আইন-আদালতের ওপর আস্থা হারিয়ে গেলেই আদালত অবমাননা হয়!

যে পরিবারটি সমস্ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপের মোকাবিলা করে সমস্ত সরকারী প্রলোভন হেলায় অস্বীকার করে গত দু মাস ধরে আপনাদের মুখের দিকে চেয়ে মৃত ছেলের বিচারের অপেক্ষায় দিনযাপন করছেন তাদের মুহুর্তের ধৈর্য্যচ্যুতির জন্য মাননীয় বিচারপতি মুচলেকা আদায় না করলেই ভালো করতেন।

কারণ আদালতের কাছে আমরা বিচারকের নয়, বিচারের বাণী শুনতে যাই।