অরণ্য হরণ / Save Junglemahal
![অরণ্য হরণ / Save Junglemahal](https://riseofvoices.com/wp-content/uploads/2022/03/png_20220331_221252_0000-845x550.png)
পরিবর্তনের বাংলায় “জঙ্গলমহল হাসছে” এমন দাবীর কথা এখনও শোনা যায় সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে। প্রশাসনিক কর্তারাও তাতে সাধ্যমত তাল দেন, গলা মেলান। একদা পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার মাননীয়াকে “জঙ্গলমহলের মা” পর্যন্ত বলে দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে মা’র সাথে তেনার গোলমাল বাঁধে যার জেরে ওনাকে রং ও দল দুই বদলাতে হয়। তবে সেটা আজকের আলোচ্য বিষয় নয়।
আজকের আলোচ্য বিষয় হল এত “হাসাহাসি” র মধ্যে জঙ্গলমহলে জঙ্গলের আয়তন কমছে কেন! ঠিক কোন কারণে বিগত এক দশকে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়্গ্রাম অঞ্চলের বন-জঙ্গলের আয়তন ২৮ লক্ষ হেক্টর থেকে কমে ২২ লক্ষ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে! মানে শতাংশের হিসেবে গত দশ বছরে ২০% কমে গেছে! এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক দশকে জঙ্গলমহলের প্রায় “অর্ধেক” যে সাফ হয়ে যাবে তা একপ্রকার নিশ্চিত!
কিন্তু মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে আপনি চট করে এনিয়ে কোন খবর দেখতে পাবেন না। “পজিটিভিটি”র ফিল্টার সেগুলো বাদ পড়ে যায়। আর এর থেকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় কারা রয়েছে এই জঙ্গল চুরির পেছনে!
অবশ্য আমরা এও জানি এক দোর্দন্ডপ্রতাপ বিজেপি নেতার কর্মক্ষেত্র হল পশ্চিম মেদিনীপুর। এখানকারই সাংসদ তিনি। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতার বাড়িও পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে। তাছাড়াও জঙ্গলমহল থেকে বিজেপির নির্বাচিত কিছু বিধায়ক-সাংসদও আছেন। অথচ এনাদের কাউকেই এনিয়ে “টুঁ” শব্দটি করতে দেখা যায় না। কারণ জঙ্গল- গাছগাছালির না আছে ধর্ম না আছে ভোট! চট করে পাকিস্তান বা বাংলাদেশেও এদেরকে পাঠানো যায় না। তাই হাওয়াগরম করতে “হাতেগরম” টপিকের মধ্যে গাছ কাটা বা জঙ্গল কাটা পড়ে না।
কাজেই চিৎকার চেঁচামেচি প্রতিবাদ যা বলেন, সব আমাদেরকেই করতে হবে।
এখন কিভাবে কি কারণে কারা গাছ কেটে জঙ্গল সাফ করে সেটা জানতে হলে আপনাকে ক্রোনোলজিটা বুঝতে হবে।
প্রথমে জঙ্গলে আগুন লাগানো হয়। যেটাকে সবাই অসাবধানতাবশতঃ “বিড়ি”র থেকে লেগে যাওয়া আগুন বলে জানে ও বলে বেড়ায়। এখন এই আগুন লাগাবার দুটো কারণ আছে। প্রথম কারণটা হল একটা বিস্তীর্ণ এলাকার গাছপালা লতাপাতা পুড়িয়ে ফেলা যাতে সেইসব ঝলসে যাওয়া ন্যাড়া মৃত গাছ কাটবার নাম করে দেদার কাঠ-পাচার করা যায়। এর পিছনে রয়েছে শাসক ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট বাহিনী। যাদের মাথায় হাত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্নস্তরের স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের। আর আগুন লাগাবার দ্বিতীয় কারণটা হল সাপখোপ পোকা-মাকড় মেরে ফেলা যাতে বনের ঐ অঞ্চলে নিরাপদে চোরাপাচারের কাজকর্ম সারা যায়। কিন্তু এটাই সব নয়। এরপর আরেকটা ধাপ আছে। গাছ-কাটাও কাঠ পাচার সম্পূর্ণ হলে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার চুরি। এবার টার্গেট বনের মোরাম-বোল্ডার। জঙ্গলের মধ্যে রীতিমত জেসিবি মেশিন ঢুকিয়ে পাথর উপড়ে তুলে বাজারে বেচা হয়। এর পেছনেও রয়েছে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট সিন্ডিকেট বাহিনী।
এর পাশাপাশি এইসব জঙ্গলে তামাক গাছের আধিক্য আছে। বসন্তের পুরানো শুকনো পাতা আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলে নতুন সবুজ তামাক পাতা গজায় যা বিড়ি বাঁধবার কাজে ব্যবহার হয়। অভিযোগ, বিড়িপাতার ব্যবসায়ীরাও অনেকক্ষেত্রে এইজন্যে আগুন লাগায় যা পরবর্তীতে কাঠ ও পাথর পাচারকারীদের কাজে লাগে।
বনরক্ষী বা বিট অফিসারদের নাকের ডগায় এভাবেই চলছে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট বহুমাত্রিক সিণ্ডিকেটের দাপাদাপি। যে যার “বখরা” বুঝে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। আর জঙ্গলমহলের আয়তন কমছে।
বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবে জঙ্গল সাফ হচ্ছে বলেই জঙ্গল মহলের বিভিন্ন গ্রামে গত এক দশকে বেড়েছে হাতির দাপট। এমনকি আগুনে ঝলসে মারা যাচ্ছে সাপ-ব্যাঙ, টিকটিকি, গিরগিটি, পোকা-মাকড় যা জঙ্গলমহলের বাস্তুতন্ত্রকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এঁরাও চান মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদ।
কাজেই বিড়ির আগুন ভেবে মুখ বন্ধ করে লাভ হবে না। জানবেন, কাঠ-পাথর-তামাক পাতার লোভে জঙ্গলমহল এভাবে সাফ হতে থাকলে জঙ্গলমহলের কোন প্রান্তিক জনপদে শাসক নেতার প্রাসদোপম “পর্ণ কুটির” দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আপনার আমার খুব একটা কোন লাভ নেই।
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-03-30/202203292254334.jpg&category=0&date=2022-03-30&button=
b) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-03-27/202203262252584.jpg&category=0&date=2022-03-27&button=
Comments are closed.