জানতে কি চাও তুমি…. / Do You Want to Know?

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রাম বাংলার গরিবগুরবোদের জীবন-জীবিকার সমস্যা, অভাব-অভিযোগ, আশা-আকাঙ্খা চাওয়া-পাওয়ার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ উঠে আসুক টিভির পর্দায়, খবরের কাগজগুলোতে, এটাই কাম্য। আলোচনা-সমালোচনা হোক গ্রামীণ জীবনে নেমে আসা সঙ্কট এবং তা নিরসনে সবকটা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে। উঠে আসুক তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার বারোমাস্যা।

কিন্তু সেসব হচ্ছেটা কোথায়?
আমরাই বা কতটা আগ্রহী এসব জানতে!

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়নের কি হলো জানতে চেয়েছি কি! মালদা-মুর্শিদাবাদের গঙ্গার ভাঙ্গন রোধেই বা কাজ কতদূর এগোল কৈফিয়ত দাবী করেছি কি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে! আমরা কজনই বা জানি, যে বর্ধমান জেলাকে একসময় ‘শস্যগোলা’ বা ‘ধানের গোলা’ বলা হতো, সেই বর্ধমান জেলা থেকে আজকাল ধানচাষিরা দল বেঁধে ‘পরিযায়ী কৃষক’ হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে ধান চাষ করতে যাচ্ছে! আমরা কি জানি সরকারি সংজ্ঞা অনুযায়ী কৃষক, ভাগচাষি ও ক্ষেতমজুর আলাদা আলাদা শ্রেনীভুক্ত চাষি যাদেরকে আমরা শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা দায়সারা ভাবে একসাথে চাষাভুষো বলে দাগিয়ে দিই! এমনকি এদের প্রত্যেকের অভাব-অভিযোগ এবং লড়াইটাও যে আলাদা তাই বা আমরা জানি ক’জন!

সরকারী মান্ডিতে ফসল বিক্রি করতে গেলে যে ‘কুপন’ লাগে এবং সেই কুপন বিলিতে দুর্নীতির কারণেই যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকরা মান্ডিতে সরকারী ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে না পেরে ফড়ে দালালদের কাছে ‘অভাবী বিক্রি’ করে সর্বস্বান্ত হন, আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, আপনি জানেন কি? মানে অন্যভাবে বলতে গেলে আপনি জানেন কি যে চাল-ডাল শাক-সব্জি পাড়ার বাজারে কিনতে গিয়ে দাম শুনে আপনার হাতে ছ্যাঁকা লাগে, সেই ফসল ফলানো চাষি আদতে হয়তো অভাবী বিক্রি সেরে বাজারে গিয়ে গলায় দেওয়ার দড়ি বা ফলিডল কিনতে ব্যস্ত!

ইদানীং তো আবার তথাকথিত শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশের মধ্যে ‘ভর্তুকি’ শব্দটার প্রতি সুকৌশলে ঘৃণার চাষ করা চলছে। তাদের হাবেভাবে করদাতা সুলভ উন্নাসিকতা! আমাদের করের টাকায় ভর্তুকি দেওয়া হবে কেন? কিন্তু আপনি আমি খোঁজ নিয়েছি কি, আমাদের রাজ্যে যেভাবে সারের দেদার কালোবাজারি চলেছে, যে সরকার প্রদত্ত ভর্তুকির বেশিরভাগটাই পকেটস্থ করেছেন ঐ সমস্ত মধ্যসস্বত্ব ভোগী অসাধু সার ব্যবসায়ী/কালোবাজারিরা এবং কৃষককে খোলা বাজার থেকে সার কিনতে হয়েছে প্রায় ভর্তুকি বিহীন দামে!

আপনারা অনেকেই বলবেন এসব নিয়ে খবরের চ্যানেল গুলো খবর না করলে বা খবরের কাগজে বড় করে না দিলে মানুষ জানবে কি করে!

কিন্তু সংবাদমাধ্যমের মালিকেরা কি অজুহাত খাড়া করে আপনি জানেন কি? তাদের বক্তব্য মানুষ, মানে আপনি-আমি, আমরা সবাই, এসব খবর দেখতে চাই না। এই যে চ্যানেলে-খবরের কাগজে বছরের পর বছর ধরে আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা শাসককে কেন্দ্র করে আদালত-রাজভবন-ইডি-সিবিআই নিয়ে চর্বিত চর্বন চলছে তাতেই নাকি দিব্যি টিআরপি আসছে, বিক্রি-বাট্টা চলছে। তাদের মতে এই যে কাগজের পাতা অথবা টিভির পর্দা জুড়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের আস্ফালন-দাপাদাপি, সান্ধ্যকালীন রাজনৈতিক বিতর্কের নামে কলতলার ঝগড়া ও গলাবাজি আর তারই মধ্যে মাঝে মাঝে মুখরোচক পামেলা-অর্পিতাদের আনাগোনা, এতেই নাকি আমরা খুশি!

কিন্তু সত্যি কি তাই! আমরা আপনাদের মতামত জানতে চাই।
কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন, জানান আমাদেরকে আপনারা খবরের চ্যানেলে বা খবরের কাগজ গুলোতে ঠিক কি দেখতে বা পড়তে চান।

রাইজ অফ ভয়েসেস জানতে চায়, সাংবাদিকতার নামে এই যে ধ্যাষ্টামো চলছে, এর জন্য দায়ী কারা, সংবাদমাধ্যম নিজেই নাকি আমরা আম জনতা! আমাদের বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ-অভিরুচিই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস