পাহাড় বিক্রি হবেক লাই / Tilaboni hill is not for sale

তিলাবনী, নামটা মনে পড়ে? মাস দুয়েক আগে রাইজ অফ ভয়েসেসের পাতায় এসেছিল, চুপিচুপি পাহাড় চুরির কথা। প্রথমসারির সংবাদমাধ্যম প্রথমে এই সংবাদ পরিবেশন না করলেও, গ্রামের মানুষের প্রবল গণপ্রতিরোধ এবং সামাজিকমাধ্যমে নেটনাগরিকদের অবিরাম প্রতিবাদ, আর সাথে #SAVETILABONI এর ঠেলায় অবশেষে সংবাদসংস্থাকূল এই সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য হয়।

তারপর কেটে গেছে দুটো মাস, শিক্ষা দপ্তর সহ নানান দুর্নীতি থেকে গায়কের অকালমৃত্যুতে উত্তাল টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়া থেকে পাড়ার চায়ের ঠেক। এই তো সুযোগ, মোক্ষম সময়!

শুক্রবার সকাল থেকেই তিলাবনী সংলগ্ন গ্রামগুলিতে খবর আসছিল, জেসিবি মেশিন নিয়ে পাহাড় কাটার জন্যে জনা পঁচিশ-ত্রিশজন হাজির হয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই, হাতের সামনে যা আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিলাবনী, পড়শিবনা, মাধবপুর, লোদাবনার মানুষজন। যদিও সল্প সময়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লোকজন দুটি বোল্ডারে চৌদ্দটা ফুটো করে ফেলেছিল। অবশেষে গ্রামের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এবং সমবেত প্রতিরোধে প্রবল বাধার মুখে পড়ে, পাহাড়ে ওঠার রাস্তা বানানোর কাজ বন্ধ রেখে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।

গ্রামবাসীদের কাছে তিলাবনী পাহাড় শুধুমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন পাথরের টিলা নয়, এটা পাহাড় সংলগ্ন গ্রামগুলির পরিবেশ ও অর্থনীতির ভরকেন্দ্র। প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্বতারোহীদের কাছেও তিলাবনীর গুরুত্ব অপরিসীম। গত বছরেই এই পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় স্তরের বোল্ডার ক্লাইম্বিং উৎসব। তাই এই লড়াই আজ কেবল গ্রামবাসীদের নয়, এই লড়াই প্রকৃতিপ্রেমীদের, পর্যটকদের, রক ক্লাইম্বারদের, সবার। যাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকে বসবাসকারী সাধারণ মানুষেরা।

ঘটনার চারদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠি

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গত ৩০শে মে, ২০২২, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন কমিটি যুক্তি সহযোগে তিলাবনী পাহাড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলের পাথর খাদান প্রকল্প চিরকালের জন্যে বাতিল ঘোষণা করার বিজ্ঞপ্তি জারির আবেদন করেন। আর সেই আবেদন পাঠানোর ঠিক চারদিনের মাথায় তিলাবনী পাহাড়ে চলল জেসিবি।

তাই ডঙ্কা তুলে হাল্লা দিয়ে গ্রামবাসীরা বলছেন, “খবরদার মহারাণী, পাহাড় বিক্রি হবেক লাই, তিলাবনী বিক্রি লাই”।

আজ সমবেত প্রতিরোধ ছাড়া তিলাবনীর বাঁচার কোন পথ হয়ত নেই। তাই আসুন আমরা তিলাবনী পাহাড় বাঁচাতে গ্ৰামবাসীদের পক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াই।