জয় জগন্নাথ / Wah Jagannath Wah!

আমরা একটু অবাক হয়েছি।

এইমসের মত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ প্রথমসারির হাসপাতালে কর্মী নিয়োগে বেনিয়ম এবং টাকা খাওয়াখাওয়ির খবর সামনে আসতেই, রাণাঘাট কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের হঠাৎ মনে হয়েছে বিজেপির মধ্যে নাকি তৃণমূলের চর ঢুকে পড়েছে, যারা দলীয় অনুশাসন মানে না। ওনার ইঙ্গিত সেই সমস্ত বিজেপি কর্মীদের দিকে, যাঁরা এই কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে এনে সমাজ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন এবং ধর্মমতে “দুধেল গাই” বা মুসলমান নন, এক্কেবারে হিন্দু। এনাদেরকে সনাতনী হিন্দু হয়ত বলা যেত, যদি তাঁরা দলীয় অনুশাসন মেনে নেতাদের সনাতনী ঘুষকান্ড নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুলতেন। হাজারহোক বাজারে কিছু কথা চাউড় করা আছে, যার মধ্যে “বিজেপি ইস ডিফারেন্ট”, “আরএসএস অন্য জিনিষ” ইত্যাদি তো আরেকটু হলে ভারতীয় সংবিধানে ঢুকে পড়ে আর কি! আসলে ভাবনা আর ভাবমূর্তি তো এক জিনিষ নয়! ঘুষের ভাবনা মনের মধ্যে উসখুস করলেও জ্ঞানবাপী, মথুরা, কুতুবমিনার কিম্বা তাজমহলের চৌহদ্দিতে শিবলিঙ্গ খুঁজে যে দিব্যি “সনাতনী ভাবমূর্তি” ভাজা যায়, সেটা আজ দিনের আলোর মত পরিষ্কার। কাজেই এই সমস্ত বিজেপি কর্মী সমর্থক যারা হিন্দু হয়েও সেই ভাজাভাজিতে মন না দিয়ে, দুম করে সমাজমাধ্যমে এইমসের নিয়োগ দুর্নীতিতে দলীয় নেতাদের জড়িয়ে সমাজ মাধ্যমে কুৎসা করছেন, তাদের মধ্যে জগন্নাথবাবুরা অনুশাসনের অভাব দেখতে পাবেন, তৃণমূলের চর আবিষ্কার করবেন এতে আর নতুনত্ব কি আছে!

কিন্তু আমাদের অবাক হওয়ার কারণটা আলাদা! জগন্নাথ সরকার / সুভাষ সরকাররা দল ও সঙ্ঘকে সামনে রেখে, যেভাবে চালুনি হয়ে সূচের বিচার করতে নেমেছেন এবং দুর্নীতিতে নিজেদের নাম জড়াতেই, দলের যত্রতত্র তৃণমূলের চর দেখতে পাচ্ছেন সেটা দেখে কতগুলো তথ্য ওনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই –

  • এই মুহুর্তে ওনাদের দলের টিকিটে নির্বাচিত বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একজন প্রাক্তন তৃণমূলী।
  • ওনাদের দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক সময় তৃণমূল সমর্থিত অধ্যাপক সংগঠনের নেতা ছিলেন।
  • কোচবিহার থেকে লোকসভায় বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ অধিকারীও একজন প্রাক্তন তৃণমূলী।
  • ওনাদের দলের বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অনুপম হাজরা একসময় বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমুলী সাংসদ ছিলেন।
  • ওনাদের দলের রাজ্য মহিলা মোর্চার প্রাক্তন সভানেত্রী এবং বর্তমান রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা হুগলী কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জ্জীরও রাজনীতিতে হাতেখড়ি তৃণমুলের হাত ধরে।
  • ওনাদের দলের রাজ্য যুবমোর্চার এক সময়কার সর্বেসর্বা এবং বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত সাংসদ সৌমিত্র খাঁ একজন প্রাক্তন তৃণমূলী।

এমন উদাহরণ অজস্র!

মাত্র একবছর আগেও তৃণমূল থেকে নেতা ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলার আকাশে চার্টাড প্লেন উড়িয়েছিলেন ওনাদের দলেরই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। আমরা কি ভুলে গেছি কিভাবে সারদা-নারদা -টেট দুর্নীতিতে গলা ডুবিয়ে ফেলা, কাটমানি-তোলাবাজিকে পেশা বানিয়ে ফেলা তৃণমূল নেতাদের দেদার দলে নিয়ে জগন্নাথ বাবুরা টিকিট বিলিয়েছেন বিগত বিধানসভা ভোটে!

মানে আমরা যেটা বলতে চাইছি সেটা হল তৃণমূল দলটা না থাকলে রাজ্য বিজেপি কি পারত বিধানসভায় ৭ থেকে ৭৭ এ পৌঁছাতে কিম্বা ১৮ জন সাংসদকে বাংলা থেকে জিতিয়ে সংসদে পাঠাতে!

মুকুল-শুভেন্দু-অর্জুন-শান্তনু-রাজীব-অনুপম-সৌমিত্র-নিশীথ-সব্যসাচী-শোভন ইত্যাদি প্রথমসারির তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়ে বাজার গরম করে বিজেপির স্বপক্ষে হাওয়া না তুললে আদৌ বিজেপিকে কেউ পুঁছতো এই বাংলায়! জগন্নাথ সরকার নিজে কি জিততে পারতেন রাণাঘাট থেকে!

আপনাদের সনাতনী অনুশাসন কিভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দলবদলু তৃণমূলীদের নিয়ে বাংলার শাসনক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল, সে ব্যাপারে আমরা সবাই কমবেশি অবহিত আছি। কাজেই এভাবে তৃণমূলের চর আর অনুশাসনের গপ্পো নাই বা দিলেন! ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যাবে।

জয় জগন্নাথ!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র:
a) http://bangla.ganashakti.co.in/Home/PopUp/?url=/admin/uploade/image_details/2022-06-03/202206022350348.jpg&category=0&date=2022-06-03&button=
b) https://epaper.anandabazar.com/imageview_63665_43651149_4_71_03-06-2022_0_i_1_sf.html
c) https://www.anandabazar.com/west-bengal/there-are-tmc-spies-in-the-bjp-claimed-ranaghat-bjp-mp-jagannath-sarkar/cid/1348412