খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন / Oh No! Not Again!

সে আসছে, আবার আসছে। সত্যিই কি আসছে?

মাস কয়েক আগের কথা, কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে ডেপুটি মেয়র ও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পরিষদ অতীন ঘোষ জানান, বুস্টার ডোজ নিতে শহরবাসীদের অনেকেই অনীহা প্রকাশ করছেন। বয়স্কদের মধ্যেই বুস্টার না নেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শহরে মোট বাসিন্দার সংখ্যা যেখানে প্রায় ৪৫ লক্ষ, সেখানে ২১ মার্চ, ২০২২ থেকে ১৮ জুন, ২০২২ পর্যন্ত বুস্টার টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪ লক্ষের বেশি। অর্থাৎ কলকাতার প্রায় ৯০% মানুষ বুস্টার ডোজ নিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর অবশ্য গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গিয়েছে।

একদিকে গুজরাট বাদে দেশের সব কয়টা বিধানসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দেশের শাসকদল বিজেপি’র, উত্তরপ্রদেশে লোকসভা উপনির্বাচনে প্রায় ৩ লক্ষ ভোটে পরাজিত বিজেপি প্রার্থী। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে “ভারত জোড়ো” যাত্রা করে নতুন করে অক্সিজেন পাচ্ছে কংগ্রেস।

শেষ কয়েক বছরে দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম, সাথে ডলারের নিরিখে টাকার দাম দিন দিন পড়ছে। দেশে বেকারত্বের সাথে বেড়েছে কর্মী ছাঁটাই। সাথে যোগ হয়েছে আবার পড়শী চিনের সাথে ঠান্ডা লড়াই। মোদ্দা কথা হল, হাবে-ভাবে প্রকাশ না করলেও, কেন্দ্রের শাসক দলের অস্বস্তি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

এবার আসি আমাদের রাজ্যে। এখানে শাসক দলের একগুচ্ছ প্রথমসারির নেতা মন্ত্রীরা নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দী! আরও বেশ কয়েকজন লাইনে রয়েছেন বলে বাজারে গুজব রয়েছে। অথচ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে সেভাবে রাস্তায় বা লড়াইয়ের ময়দানে পাওয়া যাচ্ছে না। পূজোর ঠিক আগে আগেই নবান্ন অভিযানের নামে লোক হাসিয়ে শেষে লালবাজার থেকে চা-কোল্ড ড্রিংক্স সহযোগে ফেসবুক লাইভ করে ইতিমধ্যেই বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো রাজ্য বিজেপি এবং তাদের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তারপর সেই পড়ন্ত ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে গিয়ে পূজোর পরপরই ‘ডিসেম্বর ধামাকা’র আওয়াজ তুলেছিলেন। বলেছিলেন সেই ধামাকায় তৃণমূল নাকি উড়ে যাবে! দিয়েছিলেন সম্ভাব্য তিনটে তারিখ। অথচ সেই তিনটি নির্দ্দিষ্ট দিনে ধামাকা কোন ছার, একটা ক্যাপ-কালিপটকাও ফাটাতে পারেননি। উল্টে এরমাঝে হঠাতই একদিন কথা নেই বার্তা নেই, সৌজন্যের রাজনীতির দেখনদারি করতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সাড়ে তিন মিনিটের পেন্নাম ঠুকে আসায় বিরোধী দলনেতার দলের প্রতি আনুগত্য নিয়েই দলের মধ্যে নানাবিধ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে, জনমানসে বিরোধী দলনেতা যে ‘সুপার ফ্লপ’ সেই ধারণাই ক্রমশঃ দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে। অথচ এরই বিপ্রতীপে রাজ্যে শূন্য পাওয়া সিপিআইএম মোটামুটি কোর্ট চত্বরকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছে, সাথে প্রতিদিন বাড়িয়ে চলেছে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি। মিনাক্ষী, সৃজন, আকিকদের ডাকে প্রতিদিন গাঁ-গঞ্জের সাথে সাথে শহরেও পেল্লাই মিটিং মিছিল হচ্ছে। এমনিতে সিপিআইএম নিজেদের ব্যর্থতার কারণে সাধারণত মিডিয়ায় আসে না। তারপরেও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোদ রাজ্যে এসে, বিজেপির রাজ্য নেতাদের কাছে জানতে চাইছেন, “বামেরা বাড়ছে কেন?” অথচ তৃণমূলকে হারানো যাবে কি না, তা নিয়ে তেমন কোন কৈফিয়ৎ দাবি করেছেন বলে জানা যায়নি। ফলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মধ্যে নতুন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে, বামেদের আটকাতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যতটা আন্তরিক, তৃণমূলকে হারাতে ওনারা কি ততটা ইচ্ছুক নন!

যাই হোক, কয়মাস আগে পুজো গেছে, গেছে বিশ্বকাপ। করোনার ভয়াল ভয়ঙ্কর স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে মানুষ যখন আবার নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে, তখনই মিডিয়ায় ধড়াম করে ফিরে আসল “খোকাবাবু” করোনা।

শেষে আরেকটা খবর দিয়ে যাই। মাস আষ্টেক আগে মুম্বইয়ে বসেছিল, টাইমস নেটওয়ার্কের ইন্ডিয়ান ইকোনমিক কনক্লেভ। সেখানে সেরাম ইন্সটিটিউটের (কোভিশিল্ড) কর্নধার আদর পুণাওয়ালা বলেছিলেন, “যেহেতু ভ্যাকসিন গ্রহন কমে আসছে, আমাদের কাছে প্রচুর অবিক্রিত ইনভেন্টরি রয়েছে। আমরা ৩১শে ডিসেম্বর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে আমরা ২০০ মিলিয়নের বেশি (২০ কোটি) ডোজ নিয়ে বসে আছি।”

তাই সতর্ক থাকুন করোনার থেকে, মিডিয়ার থেকে, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের থেকে, কারবারিদের থেকে।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র :
a) https://bengali.abplive.com/district/covid-booster-dose-among-the-elderly-reluctant-to-take-booster-doses-897166
b) https://www.newindianexpress.com/nation/2022/apr/22/millions-of-covid-vaccines-unsold-stopped-production-since-december-2021-adar-poonawalla-2445317.html

বি.দ্র: পোস্টারে ব্যবহৃত অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের “খোকাবাবু” চরিত্রটির ব্যবহার প্রতীকী। কাউকে কোনরূপ আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য রাইস অফ ভয়েসেসের নেই।