ডিসেম্বর ধামাকা / The Curious Case of Lalon Seikh
![ডিসেম্বর ধামাকা / The Curious Case of Lalon Seikh](https://riseofvoices.com/wp-content/uploads/2022/12/png_20221212_192918_0000-845x550.png)
ডিসেম্বর মানেই ধামাকা! বাংলার সংবাদমাধ্যম বিগত এক পক্ষ কাল ধরে সরগরম।
কিন্তু দিনটা কবে? পাওয়া গেল তিনটে তারিখ। ডিসেম্বরের ১২, ১৪ ও ২১। দিলেন স্বয়ং সনাতনী নেতা নিজে!
স্বভাবতই বিজেপি কর্মী সমর্থকরা উৎফুল্ল। এবার নাকি ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বে!
আর তাই আজ ১২ই ডিসেম্বর সকাল থেকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মায় বাংলার মিডিয়ায় সাজ-সাজ রব! এই ধামাকা হলো বলে! কিন্তু বেলা বাড়বার সাথে সাথেই খবর এলো, আজ ১২ তারিখ ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বার যে কল পাতবার কথা ছিল, তা আপাতত আদালত স্থগিত করে দিয়েছে। মানে কয়লা পাচারকাণ্ডে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ আদালতে অভিষেক ও রুজিরার মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু তা হচ্ছে না। আগামী ১৩ জানুয়ারি এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ফলে যথারীতি দুপুর হতে না হতেই ‘সনাতনী’ জোয়ারে ভাঁটার টান। বিকেলে হাজরা মোড়ে ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’ গোছের একটা সভা বিজেপি করলো বটে, তবে সেখানেও তেমন উৎসাহ ছিল না। বরং নেতা মঞ্চ থেকে যখন জানিয়ে দিলেন ডিসেম্বরে নয়, ধামাকা হবে জানুয়ারীতে, ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বে ১৩ই জানুয়ারীর মধ্যে, তখন সেখানে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের মুখ ব্যাজার!
কিন্তু তখনও তাঁরা জানেন না, আসল ধামাকাটা আসতে চলেছে অল্পক্ষনের মধ্যেই!
আধঘন্টার মধ্যে একে একে সবাইকার ফোনে ব্রেকিং নিউজের অ্যালার্ট ঢুকতে শুরু করলো! “বগটুই গণহত্যা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু।” পরে জানা গেল, সে নাকি জেলের মধ্যে বাথরুমে গলায় গামছা দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে!
সিবিআই হলো মোদির পুলিশ, এখানে নাকি পিসি-ভাইপোর জারিজুড়ি খাটবে না! এমন কথা বিজেপি নেতারাই দিনরাত বলে থাকেন। আমরা শুধু শুনি আর ঘাড় নাড়ি। আর ভাবি ভয়ঙ্কর খেলা খেলে আমাদের সনাতনী পোস্টার বয় পিসি-ভাইপোকে ঘোল খাইয়ে দেবে!
![](https://riseofvoices.com/wp-content/uploads/2022/12/images-4.jpeg)
যদিও বগটুই গণহত্যা কাণ্ডে বিজেপির লাফালাফি-দাপাদাপি শুরু হয়েছিল ল্যাংচা দিয়ে, তবুও হাওয়া গরম করে মিডিয়ার ফুটেজ খেতে তারা কার্পণ্য করেনি। কেন্দ্রীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি পর্যন্ত এসেছিল। রিপোর্ট গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। সেসময় বিজেপির পক্ষ থেকে ঠারে ঠারে দাবী করা হয়েছিল এই গণহত্যার মূল চক্রী আসলে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল নিজে। এমন দাবীর পেছনে সঙ্গত কারণও ছিল। পাশাপাশি আদালতও নির্দেশ দেয় সিবিআই তদন্তের। এসবই এবছরের মার্চ মাসের ঘটনা। কিন্তু তারপরেও মূল অভিযুক্ত লালন শেখকে গ্রেপ্তার করতে সিবিআই নিল ৯ মাস। মাত্র দিন দশেক আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তারপর আজ শুনছি সিবিআই হেফাজতে সে নাকি আত্মহত্যা করেছে!
একটা এত্তবড় সংগঠিত গণহত্যা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত, যার পেছনে রয়েছে বীরভূম জেলার তাবড় তাবড় নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের অঙ্গুলি হেলনে চলা অবৈধ বালি খাদান, পাথর খাদান, কয়লা খাদান ও গরু পাচারের টাকার খেলা, যে মুখ খুললে গণহত্যার পেছনে আসল মাথাদের নাম সামনে চলে আসবে, তাকে কি না সিবিআই এর মত পেশাদারী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যথেষ্ট নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দশ দিনও রাখতে পারলো না! এটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য!
নাকি দিদির স্নেহধন্য কেষ্ট ও তার পারিষদবর্গকে বাঁচাতে, আড়াল করতে দাদার বাহিনী ভয়ঙ্কর খেলা খেলে দিল!
মানে ধামাকা হল। লাশও পড়লো। তবে চুনোপুঁটির।
আর আমার আপনার করের টাকায় বহাল তবিয়তে বিশাল বপু ধেড়ে ইঁদুরের চব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় জীবন চলছে কারাগারের অন্তরালে।
প্রশ্নটা কিন্তু উঠবেই! উঠছেও!
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/coal-scam-case-abhishek-banerjee-and-rujira-banerjees-case-likely-to-be-heard-on-13-january-2023-in-supreme-court-dgtl/cid/1391112
b) https://www.anandabazar.com/west-bengal/kolkata/bjp-suvendu-adhikari-and-sukanta-majumdars-meeting-in-hazra-dgtl/cid/1391181
c) https://www.anandabazar.com/west-bengal/lalan-sekh-the-main-accused-in-bagtui-case-died-in-cbi-custody-dgtld/cid/1391201
Kaushik Dasgupta
পুরো বিজেমূল সেটিং। মোদি নিয়ন্ত্রণাধীন তদন্ত সংস্থা চটি দিদি কে রক্ষা করলো আর কি! কাল ই লালন শেখের শুনানি ছিল। কাল ই লালন কেষ্টার নাম বলে দিলে, কেষ্টাও ধেড়ে ইঁদুরটা কে ফাঁসিয়ে দিতো। অগত্যা বাধ্য হয়েই দাদা ময়দানে হাজির। মোদি হ্যায় তো “চটি” হ্যায়।
Subhanoy Ghosh
Different shades of news and it’s dissection, I enjoy.