একুশ শতকের সেই গরুটা / The Great Cow

বঙ্গ মিডিয়া গত বেশ কয়েক বছর ধরে যে গরুটাকে একটু একটু করে গাছের মগডালে তুলেছিল, সে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই “হাই অল্টিচুডে অক্সিজেনের অভাবে” তরতরিয়ে নেমে পালাতে চাইছিল। গাছ থেকে নেমেও পড়েছিল প্রায়, কিন্তু শেষরক্ষা হল না। এখন তাকে আবার অক্সিজেন মাস্ক পরানোর চেষ্টা চলছে পুরোদমে।

আমতা থেকে ডোমজুড়, মেরেকেটে মিনিট তিরিশের পথ। চার মাসের ব্যবধানে সেই অঞ্চলের মানুষ দুটি অবরোধ প্রত্যক্ষ করলেন। প্রথমটির ক্ষেত্রে, সেই অঞ্চলের বাসিন্দা, বিশেষ একজনের “ফেভারিট” এক ছাত্রনেতাকে রাতের অন্ধকারে তার নিজের বাড়ির ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে খুন করেছিল আইনের রক্ষকেরা। সেদিন দোষীদের শাস্তির দাবিতে একত্রিত হয়েছিল গ্রামের মানুষরা। পথ চলতি মানুষেরা এই অবরোধের ফলে নাজেহাল হবেন ভেবে, অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে, চোখের নিমেষে আইনের রক্ষকরা নামিয়েছিল বিরাট বাহিনী। বিরোধী নেত্রীকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানার ভিতর। থান ইট-কাঁদানে গ্যাস-লাঠি চার্জ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছিল একত্রিত হওয়া মানুষজনকে।

সেইদিন

দ্বিতীয় পর্ব ঘটল গতকাল। খাতায় কলমে মিসড্ কলে সদস্যপদ দেওয়া বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের এক মুখপাত্রের বক্তব্যে দেশের শাসক যখন গোটা বিশ্বে কোনঠাসা, তখনই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা।

হাওড়ার ডোমজুড়ে গতকাল হল এগারো ঘন্টার পথ অবরোধ, নবীর অপমানের প্রতিবাদে। যার কারণে নাজেহাল হয়েছেন অসংখ্য যাত্রী, ব্যবসায়ী, পরিবহণ কর্মী। তবে আজ প্রশাসন প্রায় পায়ের ওপর পা তুলে বসেছিল। রাইজ অফ ভয়েসেস প্রথম প্রকাশ করেছিল সেই ভিডিও।

চারমাস আগে, আনিস খানের খুনের বিচার চাইতে অবরোধ করলে আইনের রক্ষকদের বিশাল বাহিনী তুমুল পেটাবে, কিন্তু গতকাল ডোমজুড়ে এগারো ঘন্টার অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্যে প্রশাসনের তরফে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না, কোন ন্যারেটিভের সৌজন্যে? এর উত্তর সহজেই অনুমেয়।

গতকাল

এগারো ঘন্টার অবরোধের জেরে, কার কি লাভ হল জানি না, তবে সেই গরুটা আবার অক্সিজেন পেয়ে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। কারণ সাদা ফেজ টুপি পরা অসংখ্য অবরোধকারীদের একসাথে বারে বারে দেখতে দেখতে, রাজ্যের সংখ্যাগুরুর মনে আবারো সুপরিকল্পিতভাবে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে সংখ্যালঘুবিদ্বেষ। সেই সুযোগে পালিয়ে যেতে চাওয়া সেই গরুটা আবার ফোঁস করছে।

রবীন্দ্রনাথ সেই কবেই বলে গেছেন, “আধ-মরাদের ঘা দিয়ে তুই বাঁচা”।

তাই সেই গরু আবার শক্তিগড়ের “ল্যাংচা” খেয়ে গাছে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ন্যারেটিভ চাই মশাই, ন্যারেটিভ।

পুনশ্চ: পৃথিবীর দীর্ঘতম ঘাসের নাম বাঁশ, বিশ্বাস না হলে সাধারণ জ্ঞানের বইতে পেয়ে যাবেন।