উন্নয়নের সেতু ? নাকি বিকাশের সেতু? / Kamarkundu Flyover

দাবি ছিল বেশ কয়েক দশকের। অবশেষে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার কামারকুণ্ডু লেভেলক্রসিংয়ে রেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উড়ালপুল তৈরি করেছে রাজ্য। দিন পাঁচেক আগে (জুন ৩, ২০২২) কামারকুণ্ডু উড়ালপুলের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যেহেতু, টাকা ঢেলেছে ভারতীয় রেল এবং রাজ্য সরকার, দু’পক্ষই, তাই উড়ালপুলের উদ্বোধনে রাজ্য সরকারের তরফে রেলমন্ত্রী অথবা তার কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি কেউ এবং স্থানীয় সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো অবশ্যই উচিৎ ছিল। অথচ সেই সৌজন্য নাকি রাজ্য সরকারের তরফে দেখানো হয়নি বলে সম্প্রতি এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি এমনকি ব্রিজটি নির্মাণে কেন্দ্র এবং রাজ্য কে কত টাকা খরচা করেছে তার পরিসংখ্যান সামনে এনে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সেতুটি নির্মাণের কৃতিত্বের অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠারও সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। আর তাই যথারীতি ব্রিজের একতরফা উদ্বোধনকে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনের মাঝে অনিবার্যভাবে শুরু হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে বাক-বিতণ্ডা। যতদূর জানা গেছে পরিস্থিতি এতটাই অপ্রীতিকর অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী কতৃক সদ্য উদ্ঘাটিত ব্রিজটিকে আগামী ১০ই জুন পুনরায় একবার জাতির উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালি উৎসর্গ করতে চলেছেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। অবশ্য এরকম একটু আকচাআকচি ছাড়া আজকের রাজনীতি-সমাজনীতি একরকম অচলই বলা যায়। কিন্তু হঠাৎই অ-কথা-কু-কথা বলা ‘নূপুর শর্মা-নবীন জিন্দাল-রোদ্দুর রায়’রা সামনে এসে যাওয়ায় কামারকুণ্ডুর রেল ওভারব্রিজ নিয়ে দুইদলের চুলোচুলিটা আপাতত লাইম লাইট থেকে সরে গেছে। কারণ নূপুর-নবীন-রোদ্দুরদের খিস্তি-খেউর-ঘৃণাকথনের সামনে সেই চুলোচুলি নেহাতই শিশু!

কিন্তু আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস জন্মলগ্ন থেকেই সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকেই দরকারি কাজের খবর, যেগুলি সাধারণতঃ লাইমলাইটে না থাকায় নজরে পড়ে না, সেগুলিতে মনোনিবেশ করেছি এবং তুলে ধরেছি আপনাদের সামনে। তাই আমরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি সেই কামারকুণ্ডু ওভারব্রিজে! আপনাদের জানাতে চাই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধনের পরপরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় কামারকুন্ডু রেলওয়ে ওভারব্রিজ। ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে শুরু হয়ে যায় যান চলাচল। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি! মাত্র চার-পাঁচদিনের ব্যবহারেই ব্রিজের রাস্তার পিচের আস্তরণ উঠতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা আবার চার পাঁচ ইঞ্চি করে বসেও গেছে। ফলে সেতু নির্মাণের গঠন ও গুণমান নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন! যদি পাঁচদিন ব্যবহারেই সেতুর এই অবস্থা হয় তাহলে ভবিষ্যতে এই উড়ালপুলের কী দশা হবে! আদৌ কি এই ওভারব্রিজ ব্যবহার করা নিরাপদ!

এখন হয়েছে কি, ঘটনাচক্রে দু-তিনদিন আগেও যারা এই সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে আকচা-আকচি কাড়াকাড়ি করছিলেন সেই তৃণমূল বা বিজেপি নেতাদের মুখে এখন কুলুপ! কাউকেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এর দায়ভার নিতে দেখা যায়নি! আর মিডিয়াতেও এনিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য নেই। দু-একটি চ্যানেল বা সংবাদপত্র যতটা অকিঞ্চিতকরভাবে খবরটি দেখালে ‘সাপও মরে অথচ লাঠিও ভাঙে না’, ঠিক ততটা গুরুত্ব দিয়েই খবরটিকে মিনিমাম কভারেজ দিয়ে দায় সেরেছে যাতে খবরটি জনসাধারণের নজর এড়িয়ে যায়। আগামীকাল রেলমন্ত্রীর ফের একবার উদ্বোধনের আগে রাস্তার ক্ষয়ে যাওয়া অংশগুলোতে “প্যাচ” ওয়ার্ক করানো হচ্ছে, যাতে বেশি শোরগোল না হয়, কিন্তু তাতেও ব্রিজটার গুণমান এবং ব্যবহারকারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যায়!

কাজেই “উন্নয়ন” আর “বিকাশ” যেভাবে কামারকুণ্ডু ব্রিজের ওপর হাত ধরাধরি করে মুখ থুবড়ে পড়েছে, তার দায় রাজ্য বা কেন্দ্র কোন সরকার আদৌ নেয় কি না আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস তার অপেক্ষায় আছি! এর পাশাপাশি কোন অ-কথা কু-কথা খিস্তি-খাস্তা না করে কর্তৃপক্ষের এবং জনমানসের আদৌ দৃষ্টি আকর্ষন করা যায় কি না, সেটাও আমরা দেখতে চাইছি।

কাজেই খবরটা পড়ে স্ক্রল করে চলে না গিয়ে পছন্দের মানুষগুলোর সাথে শেয়ার করলে আমাদের ভালো লাগবে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস