সোনালী আঁশের সর্বনাশ / The Tale of Golden Fiber

টাকা-পয়সার তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত, আইনের চোখে এখনো অবধি “নিষ্পাপ” পার্থ কি খাচ্ছেন তা আপনি জানেন। “নিষ্পাপ” কেষ্ট ইন্ডিয়ান প্যানে বসছে না কোমোডে বসছেন, তাও জানেন, মুখ্যমন্ত্রী ডক্তরেট ডিগ্রির পাশাপাশি আইনজীবীও, সেটাও জেনেছেন, কিন্তু বাংলার সাধারণ পাট চাষীদের দুরবস্থা জানেন কি? না, জানেন না। আপনাকে তা জানানো হয় না, কারণ সেই খবরের টিআরপি নেই। মোদ্দা কথা, সেই খবর জানার আগ্রহই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নেই। একটুও নেই, তাই বাজারে হিট রনবীরের প্যান্ট না পরার গল্প, নেতা-মন্ত্রীদের “রগুবীর রক্ষা করো”র গল্প, কোন নেতা কত কমিয়েছে তার গল্প।

আজ দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষের গল্প বাদ,  কৃষক-শ্রমিকদের গল্প আজ বাদ, পাকচক্রে তারাও পছন্দ করে টেলিভিশনের, খবরের কাগজের রাজনৈতিক খিস্তি-খেউড়, এতদিন ধরে দেখতে দেখতে মানুষ এতেই অভ্যস্ত। এটাও জানি, আজ পাট চাষিদের নিয়ে যে প্রতিবেদন লিখতে বসেছি, তাতে অনেকেরই ইন্টারেস্ট নেই, অন্যদের শেয়ার করা ছাড়ুন, অনেকে এইসব পড়েই দেখবেন না। কিন্তু তারপরেও আমরা লিখব, পাট চাষের সাথে যুক্ত সহনাগরিকদের কথা ভেবেই লিখব।

সোনালী আঁশের আজ সর্বনাশ, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের দাম নেই। এই বছর বর্ষা হয়নি ঠিক মতন, যার ফলে বেড়েছে বোনার সমস্যা এবং ছোটো হয়েছে পাট গাছের দৈর্ঘ্য। অনাবৃষ্টির কারনে নদীয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় অনেক চাষির পাট, মাঠের মধ্যে শুকিয়ে মারা গেছে। এই সবের পরে যতটুকু ফলন হয়েছে, বর্ষার জল না পাওয়ায় সেগুলোর ক্ষেত্রে বেড়েছে পাট পচানোর সমস্যা। খাল-বিলে কোন জল নেই। তাই কেউ কেউ পাম্পসেট থেকে ১০০ টাকা লিটার ডিজেল কিনে পুকুরে জল ঢুকিয়ে পাট পচান দিচ্ছেন । তার ওপর এক বিঘা জমির পাট পচান দিতে পুকুর মালিক ৮০০-১২০০ টাকা নিচ্ছে। আবার কেউ উপায়ন্তর না দেখে, জমিতেই চেম্বার করে জল জমিয়ে পাট পচাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ পাট  হয়ে যাচ্ছে কালো, বিক্রি হচ্ছে না কালো পাট। ফলস্বরুপ কালো পাট বিক্রি করতে নানাবিধ সমস্যা ও বাধাবিপত্তির মধ্যে পড়ছে চাষীরা ।

প্রতি কুইন্টাল পাটের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০০০-৬০০০ টাকায়। অনেক চাষি কৃষি ঋণ নিয়ে এবছর পাট চাষ করেছিলেন, পাট বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা থাকলেও, ‌পাট পর্যাপ্ত পরিমাণে না হওয়ায় তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। কি হবে ৫-৬ টাকা কিলো বিক্রি করে? কি করবে পাট চাষিরা? অনেক চাষি রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু সরকার ব্যস্ত অন্য জরুরি কাজে, সেই কাজগুলো যেগুলো আপনারা উদয়-অস্ত টেলিভিশনের পর্দায় ভীষণ ভাবে দেখতে পারছেন।

মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিরাট অংশের পাট চাষীদের মাথায় হাত পড়লেও, কয়েকদিন আগে চট শিল্পের জন্যে ভালোবাসা উথলে ফুলবদলে পুরোনো দলে ফিরে যাওয়া দোর্দন্ডপ্রতাপ সাংসদও স্পিকটি নট। রাজ্যে চটশিল্পের দূরাবস্থা এবং কাচা পাট নিয়ে কালোবাজারি নিয়ে আমরা আগেও লিখেছি, তাই নতুন করে কিছু আর লিখলাম না। কিন্তু এই পাট চাষীরা কি করবে? কেন্দ্র, রাজ্য থেকে “পজিটিভ মিডিয়া” সবাই মোটামুটি হাত তুলে দিয়েছে। বালুরঘাট ডিএম অফিসে পাট চাষিরা ডেপুটেশন দিতে গেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জামার কলার ধরে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার নিদান দিচ্ছে, কিন্তু এতে এই পাট চাষিরা দমে যাননি। জেলায় জেলায় একের পর এক সংঘটিত করছেন গণআন্দোলন, সাথে নানান কর্মসূচী।

পাটের ন্যূনতম দাম ঘোষণা, সমবায়ের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা, জেলাগুলি জুড়ে পাটক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষীদের ক্ষতিপূরণ এই চার দফা দাবি নিয়ে গত সোমবার সারা ভারত কৃষক সভার (AIKS) উদ্যোগে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তুলসীহাটা জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে ডেপুটেশন প্রদান করেন। ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লাজেসিআই দপ্তরেও।

শুরু হয়েছে এদের পথ চলা, আজ পথে ১০ জন থাকলেও, এদের আশা কাল সেটা ১০,০০০ হবেই।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস