কয়েদী সংবাদ / Influential Political Prisoners

আজ উনি আমিষ চেয়েও পাননি। তবে বিকেলে গরম গরম তেলেভাজা -চপ দিয়ে মুড়ি খেয়েছেন।

আজ উনি গারদের পেছনে বসেই খাতা-পেন দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের নীল-নকশা তৈরি করেছেন, যা ওনার আইনজীবীদের আদালতে সওয়াল জবাবে সাহায্য করবে।

আজ উনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দু ঘন্টা ধরে সিবিআই/ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মোকাবিলা করলেন। সমস্ত প্রশ্নের ধীর স্থির ভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

অথবা জেলখানায় ওনার জামা-কাপড় কেচে দিচ্ছেন সহ কয়েদিরা! তবে ব্ল্যাক কফি চেয়ে পাননি। শেষে লিকার চা দেওয়া হয়েছে। এখন উনি অনেকটাই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন।

অথবা তিনি স্থুলকায়। অর্শ -ফিসচুলার রোগী। কাজেই কমোড ছাড়া প্রাতঃকৃত্য করতে পারেন না। ফলে সিবিআই ওনাকে কমোডওলা কারাগারে রেখেছে। দুদিন অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা-যাওয়া করতে বড় আরামদায়ক “এসইউভি” র ব্যবস্থা করেছে। যাত্রাপথে ওনাকে গাড়ি থামিয়ে ডালপুড়ি-তরকারি আর লিকার চা দিয়ে একদিন প্রাতঃরাশও করিয়েছে। তবে সুগারের রুগি। কাজেই অফার করলেও ল্যাংচা তিনি খাননি। সেদিক থেকে দেখলে তিনি খুবই বিবেচক এবং স্বাস্থ্য সচেতন। মেপে খাওয়া-দাওয়া করেন। মানে যাকে বলে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত পরিমিত। মা-তারার ভক্ত সেই তিনিই আবার কৌশিকী অমাবস্যায় জেলখানার টিভিতে পূজা-আরাধনা দেখে দুচোখের পাতা ভেজান। ফলে তিনি যে ধর্মপ্রাণ বুঝতে অসুবিধে হয় না। কাজেই নকুল-দানা, গুড়-বাতাসারা সেই আধ্যাত্মিক মননেরই স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ কি না এদিকটাও আমাদের ভেবে দেখা জরুরি !

শুধু প্রাতঃকৃত্য কেমন হল, এনারা বগলে সাবান ঘষলেন কি না, ঘষলে কোন কোম্পানির সাবান, তাতে কেমন ফেনা হয় এগুলো জানতেই যা বাকি আছে! সেসবও হয়তো জেনে যাব একদিন!

কিন্তু প্রশ্ন হল এঁরা কারা! এঁরা হলেন এই মুহুর্তে বাংলার সব থেকে দাগী আসামি। এঁদের কারোর বিরুদ্ধে সরকারী চাকরি বিক্রি করবার অভিযোগ, কেউ কেউ আবার গরু-কয়লা ইত্যাদি পাচারের অভিযোগে বিদ্ধ। এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় গরাদের পিছনে। আর গরাদের পেছনে এঁদের রোজ-নামচা নিয়েই এই মুহুর্তে আমাদের বাংলার সংবাদমাধ্যমের এমন বেহায়া নাচানাচি!

কিন্তু কেন একদল জেলবন্দী কয়েদিকে নিয়ে মিডিয়ার এই উর্ধ্ববাহু নৃত্য!

কারণ তিনি বলেছেন সরকারের স্বপক্ষে পজিটিভ নিউজ করতে হবে। সরকারের থেকে বিজ্ঞাপন নেবে অথচ নেগেটিভ নিউজ করবে চলবে না। আর ঘটনাচক্রে জেলখানার এই সব তেনারা হলেন গিয়ে সরকার বাহাদুরের ঘরের লোক! আর তাই শাসক দলের গ্রেপ্তার হওয়া কয়েদীদের ইমেজ বিল্ডিং জরুরি। হ্যাঁ, এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ আমি তো সুহৃদ দত্ত, সুশান্ত ঘোষ বা ফুল্লরা মন্ডলদের কয়েদ জীবনের এমন মানবিক রোজ-নামচা খবরের কাগজ বা টিভিরর পর্দায় পাইনি।

তা যাইহোক, যেমন আদেশ, তেমন কাজ! আপনাকে আমাকে পাখি পড়ানোর মত দু বেলা বোঝানো চলছে, জেলখানার কয়েদীরাও আমার আপনার থেকে আলাদা নয়, বরং কেউ কেউ আমার আপনার থেকেও বেশি ধার্মিক ঈশ্বর বিশ্বাসী লোকজন, আর তাই তাঁদের দুদিন অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়; আমাদের থেকে এনারা বেশি বিচক্ষণ ও বিবেচক, তাই কঠিন পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে তেলেভাজা-মুড়ি খেতে খেতে যুক্তির নীল-নকশা বুনে নিজের কৌঁসুলিদের হাতে তুরুপের তাস তুলে দেন; আমার আপনার থেকেও বেশি স্বাস্থ্য সচেতন তাই হাগরের মত হাতের সামনে ল্যাংচা পেয়েও এঁরা খান না। এমনকি জেলখানার মনোবিদকেও মাঠে নামানো হয়েছে যিনি আমার আপনার সামনে কয়েদীদের মানসিক স্বাস্থ্যচর্চা করছেন। ঠারে ঠারে বলছেন কাউকে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়, আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে কয়েদীদেরও কিছু মানবাধিকার থাকে!

হ্যাঁ। এরপরেও সাংবাদিকতাকে কুর্নিশ!

কারণ এগুলোও তো একপ্রকার অজানা কে জানা, অচেনা কে চেনা! জেলে যাওয়ার সৌভাগ্য তো সবার হয় না!

কিন্তু অনুরোধ একটাই, নিজেরা পজিটিভিটির ঘেরাটোপে কয়েদবন্দী হয়ে পড়বেন না। ভুলে গেলে চলবে না, সংবাদ সংবাদই, তা সে নেতিবাচক বা ইতিবাচক, যাই হোক।

ধন্যবাদান্তে,
সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়