নেতা ও নীতি / The New India Story

আজ অনেকদিন পর একটা খবরে চোখ আটকে যাওয়ায় পঞ্চব্যঞ্জনে দু কলম লিখতে ইচ্ছে হলো।

এই মুহুর্তে আমাদের দেশের ঋণের পরিমাণ নাকি ১৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। মানে নরেন্দ্র মোদি জমানায় দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।

অথচ দেশের কোন সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে কোন বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা বা হইচই দেখেছেন কি আপনি! হয়েছে নাকি সরকারের চোখে চোখ রেখে কোন ঘন্টাখানেক আলোচনা বা জানতে চেয়েছে কি কেউ এই নিয়ে আপনার রায়?

উত্তর “না”।

ঠিক এমনই চুপিসাড়ে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ২০১১ তে ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এই মুহুর্তে ৫.৮ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। মানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলা তৃণমূল সরকারের জমানায় রাজ্যের ঋণের পরিমাণও বেড়েছে ঐ ৩ গুণ। এ নিয়েও বাংলার সংবাদমধ্যমে কোন আলোচনা বা বিতর্ক হয়েছে বলে আমাদের অন্তত চোখে পড়েনি। হলেও তা যতটা সম্ভব রেখে ঢেকে ভেতরের পাতায় এক কোণে বা নন প্রাইম টাইমে অকিঞ্চিতকর ভাবে পরিবেশিত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের কেন এই অনীহা! কেন এত লুকোচুরি!

না! আপনি যদি ভাবেন রাইজ অফ ভয়েসেস ‘গদি মিডিয়া’ বা ‘চটিচাটা মিডিয়া’কে নিয়ে সেই ক্লিশে শালতামামি লিখতে বসেছে তাহলে ভুল ভাবছেন।

আমরা লিখতে চাই একটু অন্যকথা! কারণ আমাদের পর্যবেক্ষণটা একটু অন্যরকম। মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে মানুষ তার প্রয়োজনীয় খবর না দেখতে পেলে তো তারা টিভিতে সেই সমস্ত চ্যানেল গুলো দেখতো না বা প্রতিদিন সকালে চা-বিস্কুটের সাথে ‘ভুসি’ খবরে ভরতি খবরের কাগজগুলো কিনে পড়তও না।

কিন্তু কই, তা তো হচ্ছে না! আমরা তো দিব্যি দু-বেলা এই সংবাদমাধ্যম গুলোর চর্বিতচর্বণ গলাধঃকরণ করছি।

তবে কি আমরা জনসাধারণ গুলিয়ে ফেলছি! কোন খবরটা আমাদের প্রয়োজনীয় আর কোনটা অ-দরকারী আমরা তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারছি না! নাকি আমাদের পছন্দটা খুব ‘সচেতন’ ভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে!

আসলে দেশ বা রাজ্যের ধার করবার প্রবণতা কেন বাড়ছে তার সাথে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অর্থনীতি ও সমাজদর্শন দুই-ই জড়িত। ঠিক যেমন জ্বালানির উর্দ্ধমুখী দাম, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্বের সমস্যা অথবা চাষি কেন ফসলের দাম পাচ্ছে না, কেন সারের কালোবাজারি চলছে দিকে দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কেন বাড়ছে দিন দিন ইত্যাদি সবকিছুর সাথে জড়িয়ে আছে ঐ শাসকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যা তাদের অনুসৃত অর্থনীতি ও সমাজদর্শনেরই আয়না মাত্র।

কিন্তু আমি আপনি কি সেই ‘আর্থ-সামাজিক’ রাজনৈতিক দর্শনের কচকচানি শুনতে আগ্রহী?

“হ্যাঁ”! এটাই আসল প্রশ্ন। লাখ টাকার প্রশ্ন।

আমরা তো যখন দেশের গুটিকয় বামপন্থী ‘রাজনীতিতে নেতা নয়, নীতিই আসল’ বলবার চেষ্টা করেছে তখন তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেছি। তাদেরকে বলেছি ‘ভাগ! তোরা অপ্রাসঙ্গিক!’ আর তারপর হামলে পড়ে গরু খোঁজার মত ‘নেতা’দেরকে খুঁজে এনে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছি।
মানে সোজা কথায় আমরা তো ভোট দিয়ে ‘নীতি’ নয়, ‘নেতা’ নির্বাচন করে আসছি।

আর দক্ষিণপন্থী সমাজব্যবস্থার এটাই মূল উপজীব্য।

কাজেই এখন টিভির পর্দা বা কাগজের পাতা জুড়ে সেই নেতাদের ছবিওলা বিজ্ঞাপন দেখে নাক সিঁটকোলে চলবে কেন! জনগণের টাকা মেরে বাঘের বাচ্চার মত ইডি-সিবিআই কে ফেস করা নেতা অথবা চুরি-চিটিংবাজি করেও গিরগিটির মত দল বদলে পিঠ বাঁচানো নেতা বাতেলা দেবেন, আর মিডিয়া জুড়ে এসবই বরাদ্দ হবে আমার আপনার জন্য এটাই স্বাভাবিক নয় কি!

কাজেই আমরা যদি চাই আমাদের দরকারী খবর আমাদের সমস্যার কথা সংবাদমাধ্যমগুলো দেখাক, তাহলে আগে আমাদেরকে ‘নীতি’র ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন শিখতে হবে। তবেই নেতাদের অনুসৃত ‘নীতি’র চুলচেরা বিশ্লেষণ পাবেন টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস