ফুলবদলে ফুলস্টপ! / The Great Somersault

“টু বি অর নট টু বি, দ্যাটস দ্য কোয়েশ্চেন!”

আসানসোল এবং বিধাননগরের ভোটদাতাদের এখন হ্যামলেটের দশা! পৌরভোটের দামামা বেজে উঠতেই এই দুই শহরের মানুষের কাছে জীবন -মৃত্যুর বিভাজন রেখায় দাঁড়িয়ে হ্যামলেটের করা ঐ ভুবনবিখ্যাত সলিলকি ফিরে এসেছে। কারণ নিজের নিজের শহরের যুযুধান দুই পক্ষের মুখগুলো দেখে বুঝতে পারছেন না ইনি বিজেপি না তৃণমুল! নাকি দুটোই! অথবা যাকে বলে “জে জে টি টি” অর্থ্যাৎ “যখন যেমন তখন তেমন।” আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে “যে ভোটে জিতবে আমি সেইদলে” টাইপ!

আসলে যে মেরুকরণের তত্ত্বের ওপর ভর করে টিভি দেখে খবরের কাগজ পড়ে এই দুই শহরের মানুষ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তা কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।

আসানসোলের কথাই ধরা যাক।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই শহরের মানুষ রাজ্যের বর্তমান শাসকের যাবতীয় দুর্নীতি অনাচার অত্যাচার সংখ্যালঘু তোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বিজেপির টিকিটে দাঁড়ানো যাকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে লোকসভায় পাঠালেন এমনকি যিনি মাস সাত-আট আগেও বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় ঘাসফুলের বিরুদ্ধে “আর নয় অন্যায়” গান গেয়ে রাজ্য জুড়ে প্রচার করে বেরিয়েছেন সেই তিনি বিধানসভা ভোটের ফল বেরোতেই পাল্টি মেরে সোজা তৃণমুলে। মানে একসময়ের দাঙ্গাবাজ দলের “দঙ্গল” বয় যিনি কথায় কথায় লোকদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন তিনি হলেন তথাকথিত “সেকুলার” পার্টির নেতা ।
অন্যদিকে আসানসোল পৌরসভার তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত গতবারের মেয়র বিগত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে হাওয়া গোলমেলে দেখে দল বদলে চলে যান বিজেপিতে। যার বিরুদ্ধে স্থানীয় কয়লা মাফিয়াদের সাথে দহরম-মহরম থেকে শুরু করে তোলাবাজি, কাটমানি, ছাপ্পাভোট ইত্যাদির ভুড়িভুড়ি অভিযোগ এলাকার মানুষের তাকে “আর নয় অন্যায়” গান গাওয়া পার্টি নির্দ্বিধায় দলে নিয়ে নেয়। কিন্তু বিধানসভা ভোটের রেজাল্ট বেরোতেই তিনি বুঝতে পারেন একদম যাকে বলে “মুরগী” হওয়া তিনি তাই হয়েছেন। ফলে ফের শুরু করে দেন “ঘর ওয়াপসি”র জন্য তদ্বির। নিজের বিলাস বহুল এসইউভি-তে চেপে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনের চারপাশে ঘুরঘুর করবার সময় সাংবাদিকদের নজরেও পড়ে যান। কিন্তু তৃণমূল থেকে আর বিশেষ পাত্তা পান নি ! ফলে কিছুটা বাধ্য হয়েই তিনি আপাতত বিজেপিতে এবং এই মুহুর্তে আসানসোল শহরে বিজেপির দাপুটে নেতা!

আর এইসব ডিগবাজি খাওয়া দলবদলুদের খপ্পরে পড়ে আসানসোল শহরের মানুষজন হতবাক এবং বিরক্ত!

একই অবস্থা বিধাননগরের। গত পুরসভার তৃণমূলী মেয়র মাঝে বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে “খেপ খেটে” পরাজিত হয়ে পুরোনো দলে ফিরে এসে আবার তৃণমূলের টিকিটে আগামী পুরসভা ভোটে প্রার্থী এবং খবরের প্রকাশ দল জিতলে মেয়র পদের অন্যতম দাবিদার। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে দল ছাড়বার সময় তৃণমূল নেত্রীকে রীতিমত তোপ দেগে দেশদ্রোহী তকমা দিয়েছিলেন! কিন্তু বিজেপির টিকিটে ভোটে পর্যুদস্ত হতেই পুরোনো দল ও নেত্রীর মধ্যে দেশপ্রেমের খোঁজ পেতে তিনি খুব একটা বেশি সময় নেন নি। আর বিধাননগরের উপকণ্ঠেই নিত্যদিন মর্নিংওয়াক করতে করতে বাতেলা ঝারা বিজেপির প্রথমসারির নেতা যিনি এই দলবদলুটিকে একসময় তোলাবাজ বলে বিধানসভায় হইচই ফেলে ছিলেন সেই তাঁরও অল্পদিন হলেও এনার সাথে ঘর করতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি।

মানে বাংলায় গত তিন-চার বছরে “আয়ারাম-গয়ারাম-জয় বাংলা-জয় শ্রীরাম” সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। ঘোড়া কেনাবেচার হাটেও প্রতিটি ঘোড়ার একটি ন্যুনতম মূল্য থাকে যাকে বলে ফ্লোর প্রাইস। সেই সম্মানটুকুও কি এই ঘাসফুল-পদ্মফুল করে বেড়ানো “চাণক্য” রা দাবী করতে পারবেন! এ নিছকই সোডিয়াম-পটাসিয়ামের ওঠাপড়া নয়! এ হল রাজনৈতিক মুল্যবোধের ওঠানামা!

আর তাইজন্য আসানসোল এবং বিধাননগরের মানুষের কাছে আগামী পুরভোট আর পাঁচটা পুরভোটের মত নিছকই রাস্তা-আলো-জল-নর্দমা ইত্যাদির নিরিখে মতদান নয়, এই ভোট ফুলবদলের রাজনীতিতে ফুলস্টপ লাগাবার অগ্নিপরীক্ষাও।

আমরা রাইস অফ ভয়েসেস চাইব শুধু আসানসোল বা বিধাননগর নয়, আগামী সবকটি পৌরসভা ভোটে প্রতিটি জনপদের ভোটদাতারা ঐ “টু বি অর নট টু বি” র অনিশ্চয়তাকে ছুঁড়ে ফেলে নিজেদের নতুন হ্যামলেট গড়ে নিক। দলবদল নয়, “দিনবদল” এর সলিলকি তৈরি হোক।

ধন্যবাদন্তে
রাইস অফ ভয়েসেস