বীরভূমনামা: চতুর্থ স্তম্ভ / The Fourth Pillar

সাঁইথিয়া নন্দীকিশোরী মন্দির পেরিয়ে ময়ূরাক্ষীর দিকে যেতেই, চার রাস্তার মোড়ে আপনার চোখে পড়বে বীরভূমের বাঘের এক ইয়া লম্বা কাট আউট। ওয়েলকাম টু কেষ্টভূম। আজ থেকে এই কেষ্টভূমের খুঁটিনাটি নিয়েই শুরু হল বীরভূমনামা। আজ প্রথম পর্ব, চতুর্থ স্তম্ভ।

“দোর্দণ্ডপ্রতাপ”, “বেতাজ বাদশা”, “বীরভূমের বাঘ” ওরফে অনুব্রত মণ্ডল, তিনি বিধায়ক নন, সাংসদ নন, কিন্তু তারপরও বীরভূমে তাঁর নামে বাঘে–গরুতে একঘাটে জল খায়। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব, বঙ্গীয় রাজনীতিতে প্রশ্নাতীত। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “Public taste is as fickle as a child’s attention span”.

বাংলায় তর্জমা করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, “সাধারণ মানুষের রুচিবোধ, শিশুদের মনোযোগর মতনই চঞ্চল।” সেই সুযোগটাই বারে বারে কাজে লাগায় টিআরপিলোলুপ সংবাদমাধ্যম। তাই তারা কখনো টিআরপি’র আশায় হাফ হাঁটু জলে মানুষজনকে দিয়ে সাঁতার কাঁটায়, আর কখনো কখনো বিশেষ কাউকে লার্জার দ্যন লাইফের তকমা দিয়ে জনগণের মসীহা বানিয়ে ফেলে। কারণ, নেগেটিভ পাবলিসিটি ইজ অলসো এ পাবলিসিটি।

আচ্ছা ভাবুন, সিবিআই ইডি রাজ্যে আসার পর কেবলমাত্র বীরভূম থেকেই বেরিয়েছে গরু, পাথর, বালি পাচারসহ নানান দুর্নীতি। রাজ্যের প্রায় দুর্নীতিই কোনো না কোনো সুতোয় বাঁধা এই বীরভূমের সাথে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কি এমনটা জানতেন না? নাকি তারা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি এসব? নাকি তাদেরও কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ এইসবের সাথে জড়িত ছিল বা আছে?

আপনি কি জানেন, গোটা বীরভূম জেলার বহু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির কাছে কোন এক বিশেষ সুত্র থেকে উপরি বেতন আসে? যেটার উদ্দেশ্য অনেকক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ খবরকে সাধারণ মানুষের সামনে আসতে না দেওয়া। বীরভূমে যেহেতু ঘটনার ঘনঘটা লেগেই থাকে, তাই সাংবাদিকদের প্রাপ্য উপরি বেতনটাও মাসিক ভিত্তিতে। আর সেই উপরি টাকার অঙ্কটা কোথাও মাসে ৩,০০০ আর কোথাও ৫০,০০০ টাকা

এই কারণেই কি বগটুই গণহত্যাকে টিভি ব্লাষ্টের রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা অল্প সময়ের জন্যে হলেও, সফল হয়। চড়াম চড়াম ঢাক বাজিয়ে গুড়-বাতাসা-নকুলদানা বিতরণকে সংবাদমাধ্যমে মহিমান্বিত করা হয়; মাসোহারার লোভেই কি বাংলার সংবাদমাধ্যম একজন লুম্পেন সমাজ বিরোধীকে দোর্দন্ডপ্রতাপ তকমা দেয়? মোবাইল ফোনে ‘হাত চালিয়ে ছাপ্পা ভোট করানোর ‘কেষ্ট নিদান’ টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়, যাতে জনমানসে তাঁর সেই ‘প্রতাপ’ অক্ষুন্ন থাকে! প্রশ্ন অনেক? কিন্তু করবেন কাকে?

আজকের পর্ব এতটুকুই। বীরভূমের বাঘ ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে কেষ্টভূম ছেড়ে তিহারের উদ্দেশে রওনা হলেই আসবে বীরভূমনামা’র পরবর্তী পর্ব। যেখান থেকে আমরা কেষ্টভূমের নানান দুর্নীতি পেঁয়াজের খোসার মত ছুলতে থাকব।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস