গেট কেলেঙ্কারি / DCR Gate Scam

অনুব্রত গেলেন তিহারে, আর আমরাও আমাদের কথা মত আজ নিয়ে আসছি বীরভূমনামা’র দ্বিতীয় পর্ব – গেট কেলেঙ্কারি।

বীরভূমনামা’র প্রথম পর্বে আমরা জানিয়েছিলাম, গুরুত্বপূর্ণ খবর চাপা দেওয়ার জন্যে শাসক দলের তরফে বীরভূম জেলার সাংবাদিকদের মাসে তিন থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দেওয়ার কথা। আজ থাকবে গত কয়েক বছরে বীরভূম জেলার নানান গেটের গল্প।

সংবাদমাধ্যমের দৌলতে আপনারা এতদিনে জেনে গিয়েছেন বীরভূমের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা রকমের টোলের কথা। সেই রকমই ১৩ নম্বর রাজ্য সড়কের ওপর ছোট্ট একটা টোল, ৪৬৬ নং চেক পোস্ট।

বোলপুর শহরে ঢুকতে গেলে আপনাকে এইখানে টোল দিতেই হবে। এটা নাকি বোলপুর পৌরসভার পৌর ও পরিষেবা কর, আর এখানকার পৌরসভা অনুমোদিত এজেন্ট সেখ নাসির। তার নামেই নাকি টেন্ডার, কিন্তু কাগজপত্র! সেটির কথা বোলপুর পৌরসভার চেয়ারপার্সন পর্না ঘোষ নাকি জানতেনই না। এমন কি টোল কিয়স্কে যারা টাকা তুলছেন, তারাও জানেন না বৈধ কাগজপত্রের কথা। আর সেখানে প্রশ্ন করতেই শুনতে হয়েছিল, “বেশি ফটর ফটর করবেন না”। ব্যাপারটা খানিকটা এমন যে, আপনি থাকেন খাস কলকাতায়, কিন্তু এটা জানেন না ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কলকাতায় অবস্থিত। এই রকম, একটা নয়, সাত সাতটা টোল চলছে শুধুমাত্র বোলপুর শহরে। দিন দশেক আগে, পর্নাদেবী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও, সেই বিষয় সংবাদমাধ্যমের থেকে এখন হাওয়া। কেন? জানতে গেলে বীরভূমনামার প্রথম পর্ব পড়ে নিন

তাহলে, হু ইজ সেখ নাসির? এক সময়কার সাইকেল সারানোর মিস্ত্রি আর বর্তমানে বোলপুরে গীতাঞ্জলি সিনেমা হলের কাছে থাকা প্রাসাদোপম বাড়ি এবং ৪৬৬ নম্বর “ভুয়ো টোল”-এর মালিক সেখ নাসির। তিনি সম্পর্কে টুলু মণ্ডলের ভাই। এই টুলু মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ইডি দিল্লিতে তলব করার পর পরই মহম্মদবাজার থানার পুলিশ কয়েক বছর আগের একটি অশান্তির ঘটনায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এটাকে কি গ্রেফতার বলা যায়, নাকি বিপদের হাত থেকে মুক্তি দিতে সেফ কাষ্টডি, তা আপনারাই ভালো বুঝবেন।

এবার টুলু মণ্ডল কে?

উনি আরেকটু বড় গেটের কালেকশন এজেন্ট। যেই গেটের নাম ডিসিআর গেট। সংবাদমাধ্যমে ডিসিআর গেট নামটা আপনারা বারে বারে শুনলেও, এর সম্পূর্ন নাম আপনাদের কোনো সংবাদমাধ্যম এখনো বলেনি। ডিসিআর-এর সম্পূর্ণ অর্থ হলো, “ডুপ্লিকেট কার্বন কপি।”

গোটা বীরভূমে তৃণমূলের নেতা থেকে শুরু করে বিজেপি’র নেতা, ডিএ না পাওয়া পুলিশ, বিএলআরও কর্মী, আমলা ইত্যাদিরা জড়িত এই ডিসিআর গেট কেলেঙ্কারির সাথে। আর এই দুর্নীতির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি। যেটা এখনো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত ভাবে আসেনি অথবা আনা হয়নি।

ভাদু শেখ হত্যা, বগটুই গণহত্যা এবং সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের বাথরুমে ঝুলে পড়া, প্রতিটি ঘটনার সংযোগ আছে ডিসিআর গেটের সাথে। আজ এই পর্যন্ত, আগামী পর্বে আসবে, ডিসিআর গেটের খুঁটিনাটি।

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস