রঙহীন মানিকতলা / Colourless Maniktala

রঙের উৎসবে রাজনৈতিক রঙহীন মানিকতলা। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ নির্বাচিত বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পর থেকে এই কেন্দ্রে কোনো উপনির্বাচন হয়নি। তাই মানিকতলায় আজ নেই কোনো বিধায়ক।

কিন্তু দেশের এবং রাজ্যের নানান প্রান্তে উপনির্বাচন হলেও, মানিকতলায় উপনির্বাচন হচ্ছে না কেন?

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে যে আইনগত কারণেই তাঁরা মানিকতলা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের নোটিস জারি করতে পারছেন না। কারণ একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির পরাজিত প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ‘তৃণমূল নির্বাচনে কারচুপি করে জিতেছে’ এই অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। সেই মামলাটির নিষ্পত্তি এখনও অধরা! নির্বাচন কমিশন এই মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন উপনির্বাচনের নোটিস জারি করে আইনি জটিলতা বাড়াতে চায় না। আর তাছাড়া যদি এই মামলার রায় কল্যাণ চৌবের পক্ষে যায় সেক্ষেত্রে নতুন করে উপনির্বাচনের প্রয়োজনীয়তাও থাকবে না। আর এজন্যেই আপাতত মানিকতলা অঞ্চলের বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধি পেতে আপাতত আদালতের দিকে তাকিয়ে।

কিন্তু কেবল কি আদালত দায়ী? মানিকতলার বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যু এক বছর আগে হলেও, সেখানকার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে কোর্টে গিয়ে মামলাটা তুলে নিচ্ছেন না কেনো ? জনসমর্থন ওনার দিকে থাকলে উপনির্বাচনে জিতে তিনি অনায়াসে বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় যেতে পারতেন এবং মানিকতলাবাসীর সেবা করতে পারতেন! কিন্তু এভাবে নির্বাচন আটকে দিয়ে মানিকতলাবাসীকে এভাবে দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধিহীন করে রাখা কি আদৌ সমীচীন?

মানিকতলার অলি-গলিতে এখন এই প্রশ্ন উঠছে। সাগরদিঘী উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হওয়ার পরে এমনও কথাও উঠেছে যে তৃণমূলকে আরো একটা হারের হাত থেকে বাঁচাতে বিজেপি’র কল্যাণ চৌবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেস তুলছে না আদালত থেকে! আর তাছাড়া কলকাতার বুকে মানিকতলা উপনির্বাচনে ফের একবার তৃতীয় হলে আগামীদিনে বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ যে খুব একটা উজ্জ্বল হবে না সেটাও নাকি ভাবাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। আসলে সাগরদীঘীর ফলাফল সামনে আসবার পর ‘তৃণমূল হারলে বিজেপির ভরাডুবি হয়’ এমন একটা চোরাগোপ্তা হাওয়া উঠেছে জনমানসে আর তাতেই শাসক ও খাতায় কলমে প্রধান বিরোধী দুই শিবিরেই শুরু হয়েছে অস্বস্তি! তাবলে রাজ্যের খাতায় কলমে বিরোধী দল কি রাজ্যের শাসক দলের উৎখাত চায় না মানিকতলা থেকে? তাদের তরফে স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই।

আর রাজ্যের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমগুলো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে নাকি হাইওয়ের ধারে জেলখাটা কয়েদীর পাত পেড়ে কচুরি-ছোলার ডাল-ল্যাংচা দিয়ে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার খবর করতে ব্যস্ত থাকবে, তার উত্তর সময় দেবে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস