কালোডাক / That’s it

“একধরণের ব্ল্যাকমেলিং পলিটিক্স শুরু হয়েছে।”

তারিখ ৩১ শে আগস্ট। স্থান নবান্ন।

কে বলেছেন নিশ্চইয়ই নামটা আবার বলে দিতে হবে না।

কিন্তু সেই তিনিই শেষবেলায় জনসমক্ষে সংবাদমাধ্যমেকেই ইদানীং ‘পজিটিভ খবর’ কম করায় ব্ল্যাকমেল করে বলে বসেন-

“আমরাও একটা করে ভিডিও করে ছেড়ে দি, কোন কোন সংবাদমাধ্যমে কে কে বিদেশে গেছে কোন কোন চিটফান্ডের টাকায় বা আর কোন কোন ব্যাপার আছে দি…”

এখন পিসি যা পারে তা ‘ভাইপো’ কেন পারবে না!

পিসির আদর্শে পিসির আদলে গড়া পিসির এই আদরের ‘ভাইপো’।

তাঁর বিরুদ্ধে কয়লা পাচারে যুক্ত থাকবার অভিযোগ রয়েছে। সিবিআই এর কাছে সেই সংক্রান্ত কিছু নথিও রয়েছে। এই কয়লা পাচার কান্ডে দুজন প্রধান অভিযুক্ত হলেন অনুপ মাঝি ওরফে লালা এবং খাতায় কলমে “ফেরার” প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র যিনি আবার ঘটনাচক্রে ভাইপোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। অভিযোগ কয়লা পাচারের টাকার একটা বড় অংশ ঢুকেছে ভাইপো এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের দেশি-বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। আর এসব নিয়েই ভাইপোকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায়।

সূত্রের খবর সেই জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রথম কয়েকঘন্টা খাবি খেয়েছেন। বেশিরভাগ প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু দুপুর সাড়ে তিনটের পর সুপ্রিম কোর্টে তিনদিনের রক্ষাকবচ পেতেই তাঁর কিছুটা স্বস্তি ফেরে। আর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাইরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে শুরু করে দেন তেজি ভাষণ! আর সেই ভাষনেই পিসির মত “কালোডাক” ডেকে ফেললেন। বললেন “এই যে কয়লা কেলেঙ্কারি, প্রধান অভিযুক্ত যাঁকে (বিনয় মিশ্র) বলা হচ্ছে, ফেরার হয়ে গিয়েছে। আটমাস আগে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। আমি শুনেছি সেই ক্লিপ। জনৈক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে আছে। ঠিক সময়ে জনসমক্ষে আনবো। শুভেন্দু তাঁকে বলেছেন ‘তোমার কেস আমি দেখে নেব। চিন্তা নেই’। শুভেন্দুর সাহস থাকলে কাল আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক। আদালতে আমি সেই অডিও ক্লিপ জমা করবো। প্রয়োজনে গলার আওয়াজ মিলিয়ে দেখতে ফরেন্সিক পরীক্ষারও সুযোগ রয়েছে।”

সাংবাদিকরা তো গণতন্ত্রের চতুর্থস্তম্ভ ছিল এক কালে। মানুষের কথা দেশের কথা দশের কথা বলতো। তাদের হয়ে প্রশ্ন করতো। কিন্তু আজ তাঁরা অনেকটা ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মত। কেউই বিশেষ পাত্তা দেয় না। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কোন প্রশ্ন না নিয়ে নিজের কথা গড়গড়িয়ে বলে যান। সংবাদমাধ্যমকে শাসকের পক্ষে ‘পজিটিভ’ খবর করতে চাপ দেন, নাহলে সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করবার হুমকি দেন। ৩১ শে আগস্ট তো একপ্রকার ব্ল্যাকমেলই করে বসলেন। তবুও এনাদের মুখে কুলুপ। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে সম্মেলন কক্ষে বসে শাসকের ইশারায় ল্যাজ নাড়া ছাড়া তেমন কিছুই আজকের সংবাদমাধ্যম করে উঠতে পারে না। ফলে জনতাও প্রকাশ্যে শাসকের ‘দালাল’ বলে খিস্তি দেয়। ‘গদিধরা’ ‘চটি-চাটা’ বলে কটাক্ষ করে। আর কেন করে তা গতকাল ভাইপোর সাংবাদিক সম্মেলন আরেকবার দেখিয়ে দিল। অবধারিত কয়েকটি প্রশ্ন সেখানে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এড়িয়ে গেলেন নিজেদের ‘পজিটিভ’ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে। তাই রাইজ অফ ভয়েসেসের তরফে রইল সেই প্রশ্নগুলো আপনাদের জন্য, যাতে আপনারাও ভাবতে পারেন।

আমাদের মনে হয়েছে এই দু-তিনটে প্রশ্ন করলেই ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যেত।

  • এইমুহুর্তে বাংলার সমস্ত কেলেঙ্কারির নায়কদের অতীত বর্তমান ঘাঁটলেই তৃণমূল যোগ পাওয়া যাচ্ছে কেন? দলে এত দুর্নীতিগ্রস্ত লোক ঢুকলো কি করে?
  • কয়লাপাচার হওয়া অবশ্যই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যর্থতা। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত তার কি কোন প্রমাণ আপনার কাছে আছে? ব্যর্থতা আর সরাসরি যুক্ত থাকা কি এক জিনিষ? অথচ মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র যুব তৃণমূল নেতা। তার অনেক প্রমাণ আছে। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
  • শুভেন্দু অধিকারীর যে অডিও ক্লিপের কথা আপনি বলছেন তা সিবিআই/ইডি বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সিআইডি/পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছেন না কেন? তাঁরাই তো গলার আওয়াজের ফরেন্সিক পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারে! খামোখা শুভেন্দুর মামলা করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবার দরকার কি!
  • আপনারাই তো বলেন যে বিজেপির ইশারায় সিবিআই/ ইডি বিরোধী নেতাদের হেনস্থা করছে। এমনকি আজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও “আজ সিবিআই দপ্তরে বড় কিছু একটা হতে চলেছে” বলে কার্যত তৃণমূলের এই অভিযোগেকেই মান্যতা দিয়ে ফেলেছেন। যাইহোক, তাই কি বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অডিও ক্লিপের কথা তুলে প্রছন্ন হুমকি দেওয়া হল বিজেপিকে, যাতে এসব ইডি/সিবিআই এর নোটিস জিজ্ঞাসাবাদ অবিলম্বে বন্ধ হয়! মানে এটা কে কি ব্ল্যাকমেল বলা যায়?

কিন্তু না। এসব কঠিন প্রশ্ন উড়ে আসেনি সংবাদমাধ্যমের দিক থেকে।

আর তাই বাংলার রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে “কালোডাক” ডেকেই চলেছেন।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস