বিধির বিধান / Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya

জেলে বসে কেষ্টর পাঠা বিলাস, তৃণমূলের ছাত্র সমাবেশ, বর্ধমানে বামেদের আইন অমান্যে বাংলার “ব”-এর পতন, অনুপম হাজরার “দোআঁশলা”, এসএফআইয়ের মহামিছিল, বিনয় মিশ্রকে নিয়ে শুভেন্দু-অভিষেকের ক্যাচ লোফালুফি, হালিশহরের রাজু বন গ্যায়া জেন্টলম্যান, অর্শদীপের ক্যাচ মিস থেকে নতুন পাপ্পুর গল্পগাথায় মেতে রয়েছে প্রথমসারির মিডিয়া। এর মধ্যেই মধ্যেই রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটে গেছে এমন এক ঘটনা, যাকে প্রায় সবকটা মিডিয়াই সম্পূর্ন ব্ল্যাক আউট করেছে।

বাতিল হয়ে গেছে রাজ্যের মাত্র দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (BCKV) স্বীকৃতি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (আইসিএআর) তুলে নিয়েছে তাদের স্বীকৃতি। অথৈ জলে পড়েছে ২১৯৯ পড়ুয়া। আইসিএআর স্বীকৃতি তুলে নেওয়ায় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা অন্য কোথাও যেমন উচ্চশিক্ষায় যোগদান করতে পারবেন না, তেমনই এখানকার ডিগ্রি নিয়ে চাকরিতেও যোগ দিতে পারবেন না। এত কিছুর পরেও এখনো কোনো মিডিয়ায়, রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের মধ্যে কোনো তাপ-উত্তাপের নাম গন্ধ দেখা যাচ্ছে না।

এমনিতেই এই রাজ্যে মন দিয়ে পড়াশোনা করে প্রথমে ডিগ্রি হাসিল করার পর চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে থাকে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী চাকরি বেচার দায়ে জেলে থাকেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত চেয়ারম্যান লুক আউট নোটিস খান, সেখানে খুব স্পষ্ট ভাবেই বোঝা যাচ্ছে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান হাল-হকিকত।

গত ১৯ জুলাই কাউন্সিলের অধীন ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল এডুকেশন অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড তাদের ৩১তম বৈঠকে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি বাতিল করে, তারপর গত ৫ আগস্ট সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হয়েও গেছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজের সংখ্যা পাঁচ, সেগুলি যথাক্রমে: কলেজ অফ এগ্রিকালচার, কলেজ অফ হর্টিকালচার, কলেজ অফ এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং, কলেজ অফ এগ্রিকালচার বাঁকুড়া আর কলেজ অফ এগ্রিকালচার বর্ধমান। এই পাঁচটির মধ্যে তিনটিই অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। কাউন্সিলের নিয়ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলির ৫০% বেশি যদি যোগ্যতামান উত্তীর্ণ না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়েরও স্বীকৃতি বাতিল হবে, এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

আসলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্সই ল্যাবরেটরি নির্ভর। তারপরেও বিভিন্ন ফার্মে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলির পরিকাঠামো শোচনীয়। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নেই। সব মিলিয়ে ক্লাস চালানোর পরিকাঠামোই অপ্রতুল বলে মনে করেছে কাউন্সিল। তাই স্বীকৃতি বাতিল। যার জেরে দেশের অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরও দরজা বন্ধ হয়ে গেল হাজার হাজার পড়ুয়াদের সামনে। যারা সরকারি বৃত্তি পেতেন, তাও আর পাবেন না পড়ুয়ারা। শিক্ষা দফতরের চরম উদাসীনতায় এবং অযোগ্যতায় বাতিল হয়ে গেল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই শিক্ষা দফতরকে কি বিশেষণ দেওয়া দেওয়া যায়, সেটা বরং আপনারাই ঠিক করুন! ২০১১ থেকে বারংবার নোটিশ আসা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে ব্যর্থ। ফলাফল, বিপাকে শিক্ষার্থীরা।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়, যা নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের গর্ব, তাকে এভাবেও গলা টিপে হত্যা করা যায়? ক্ষমতা কুক্ষিগত করে, ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের লুম্পেনরাজ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে, এইভাবে দেশের ৬৭ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে খাদে ফেলে দেওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

পার্থ-অনুব্রতর গ্রেফতারীর কয়েক মাস আগে, রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছিল রাজ্য সরকার, এখন সরকার কি এই দায় নেবে?

কোনো মিডিয়া এই প্রশ্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে করেনি। নতুন রাজ্যপাল, তিনিও নীরব। পুরভোটে নিজের বসতবাড়ির ওয়ার্ডে হেরে যাওয়া খাতায়কলমে বিরোধী দলনেতা ডিসেম্বরে ভোট হওয়া নিয়ে উল্লসিত। তাই বলে রাজ্যের সাধারণ মানুষও কি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নীরব থাকবেন?

ধন্যবাদান্তে,
রাইজ অফ ভয়েসেস