হে সংবাদমাধ্যম… / The Media Files

গল্পের গরু গাছে ওঠাতে ওঠাতে আমাদের দেশ ও রাজ্যের সংবাদমাধ্যম কখন যে নিজেরাই দড়ি বাঁধা গরুতে পরিণত হয়েছে তা তারা নিজেরাও জানতে পারেনি। ক্ষমতার খুঁটির চারধারে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে খবর করতে করতে খোলা মাঠের স্বাধীনতা এরা ভুলতে বসেছে।

আর তাই, যে ভাবে গতকাল রাজধানী দিল্লির বুকে রামলীলা ময়দানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ কৃষক-মজদুর ‘লাল ঝান্ডা’র ডাকে জড়ো হলেন, ময়দান উপচে পড়া সুবিশাল জমায়েত করলেন, যেভাবে মেহনতী মানুষের ঘাম-দীর্ঘশ্বাস-হুঙ্কারে রাজধানীর আকাশ-বাতাস ভারি হলো এবং এত কিছুর পরেও সেই জমায়েতকে দেশের কোন প্রথমসারির সংবাদমাধ্যম ন্যুনতম কভারেজ বা ফুটেজ পর্যন্ত দিল না তাতে আমরা ‘রাইজ অফ ভয়েসেস’ মোটেই বিস্মিত নই। এমনকি আজ সকালে যখন কোন প্রথম সারির সংবাদপত্রে গতকালের রামলীলাতে এমন বিপুল ‘বামলীলা’র কোন ছবি সহ খবর তন্নতন্ন করে খুঁজেও পেলাম না তাতেও অবাক হই নি। দু একটা কাগজ ভেতরের পাতায় এককোণে যতটা সম্ভব সংক্ষেপে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের একটা প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু সুবিশাল জমায়েতের ছবি…. নৈব নৈব চ! তাহলেই তো ঝুলির বেড়াল বাইরে বেরিয়ে পড়বে, বিজেপি-মোদী বিরোধীতায় দিদি-কেজরিওয়ালকে দশ গোল দিয়ে বামেরা ফোকাসে চলে আসবে। আর তাই বোধহয় ‘রামলীলা’র চেয়ে ‘রাম নবমী’ অনেক বেশি লাভজনক বলে মনে হলো।

কিন্তু যে সংবাদ মাধ্যম একদিন ‘হার্ভাড নয়, দেশ গঠনে হার্ডওয়ার্ক অনেক বেশি দরকারী’ বলে নাচানাচি করেছিল সেই তারাই দেশের লাখো মেহনতী মানুষের জমায়েতকে ‘ব্ল্যাক আউট’ করে দিল কোন যুক্তিতে! প্রশ্নটা উঠবে। এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। হে সংবাদমাধ্যম, একবার পিঠে হাত দিয়ে আপনারা নিজ নিজ শিরদাঁড়াটা জায়গা মতন আছে কি না দেখুন! দেশের বৃহত্তম অংশের জনগণকে তাদের চাহিদাকে এভাবে উপেক্ষা করা যায়? নাকি বড়লোকদের হার্ডওয়ার্ক আর সমাজের গরীব প্রান্তিক মানুষের মেহনত বা শ্রম এক জিনিষ নয়, এই উপেক্ষার মধ্য দিয়ে পরোক্ষে সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হলো! সত্যিটা দেশ জানতে চায়। ‘ইণ্ডিয়া ওয়ান্টস টু নো’!

দেশের সংবাদমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভাবা দেশবাসী অনেকদিন হলো বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানে আজকের মিডিয়া হলো ক্ষমতার কুর্সির চারটে পায়ের একটা। কুর্সিতে আসীন নেতা যাতে পড়ে না যান সেদিকেই তাদের যত নজর! মেহনতী আম জনতার ভিড় তারা এড়িয়ে চলেন। আর তাই তাদের কাছে দেশের কোন খবর থাকে না। খবর থাকে কুর্সির। কুর্সিতে আসীন নেতা-মন্ত্রীর।

ফলে সেইদিন আর বেশি দূরে নেই যখন দেশ আপনাদের থেকে কিছুই জানতে চাইবে না! আপনাদের ‘ইন্ডিয়া ওয়ান্টস টু নো’ চিৎকার মাঠে মারা যাবে। ক্ষমতার খুটিতে বাঁধা পড়ে নির্দ্দিষ্ট বৃত্তাকার পরিবৃত্তে ঘাস খাবেন আর ক্ষমতাসীনের হয়ে জাবর কাটবেন! কেউ ফিরেও তাকাবে না।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস