অভিমুখ বিপজ্জনক / Hazerdous Tendency

একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিধ্বস্ত রাজ্যের শাসক দল, লাইটওয়েট থেকে হেভিওয়েট নেতাদের কেউ কেউ জেলে, কেউ কেউ ইতিমধ্যেই পেয়েছেন আদালত, সিবিআই, ইডির ডাক, বাকিদের অধিকাংশই অপেক্ষারত। এর সাথে যোগ হয়েছে শাসকদলের সাগরদিঘী উপনির্বাচনে বড় ব্যবধানে হার ও বিধানসভা থেকে সম্পূর্ণ মুছে যাওয়া সিপিআইএম-এর বিপুল সমর্থন বৃদ্ধি। আরও উল্লেখযোগ্য ব্যপার হল, খাতায় কলমে রাজ্যের বিরোধী দলের একের পর এক নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়া। এতদিন মিডিয়ায় তৃণমূল বনাম বিজেপির যে বাইনারি চলছিল, সেটাও হঠাৎ করে উধাও। গতপরশু নেটদুনিয়ায় সিপিআইএম-এর ক্যাম্পেন #চোরটিএমসি ছিল আবার ট্রেন্ডিং। যা পরিস্থিতি, তাতে চারিদিকে খালি সিপিআইএম বনাম তৃণমূল, বিজেপি সম্পূর্ন উধাও। এমতবস্থায়, তৃণমূল, বিজেপি এবং মিডিয়া শিবিরে হিমেল হাওয়া বয়ে আনল এবারের রামনবমী। পর পর তিন বছর একই জায়গায়, একই দিনে দাঙ্গা পরিস্থিতি। পুলিশ কি সজাগ ছিল না? পুলিশ মন্ত্রী ? বাংলা জুড়ে প্রতি বছর দুর্গাপুজো, মহরমে বেরোয় বিশাল বিশাল শোভাযাত্রা, সেখানে তো এমন হয় না। তবে বারবার এমনটা কেন হাওড়ায়?

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশের যেকোন চরম দক্ষিণপন্থী, মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের শেষ অস্ত্র। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না”। এটাকেই একটু উল্টো করে বললে বলা যায়, সরকার চাইলেই দাঙ্গা হয়। আর এই অস্ত্রে শান দিয়ে দেশের বিভিন্ন শাসক দল বারে বারে তুলেছে বিরাট বিরাট ফায়দা।

১৯৪৬-এর কলকাতা বা নোয়াখালীর দাঙ্গায়, ফায়দা তুলেছিল ব্রিটিশ, মুসলিম লীগ আর হিন্দু মহাসভা। স্বাধীনতার পরে উল্লেখযোগ্য বড় দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল গুজরাটে, সালটা ১৯৬৯। যার ফলশ্রুতিতে গুজরাটে পায়ের তলায় মাটি শক্ত করতে শুরু করেছিল হিন্দু মহাসভা। এরপর থেকে দেশের নানা প্রান্তে চলেছে সিরিজ অফ দাঙ্গা, সে কাশ্মীর হোক, মুম্বই বা গোধরা, প্রতিটি দাঙ্গার পলিটিকাল ডিভিডেন্ড তুলেছে একের পর এক রাজনৈতিক দল।

১৯৪৬ থেকে ২০১৩ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাজনীতির আঁচ পড়েনি পশ্চিমবঙ্গে। বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে দেশ জুড়ে দাঙ্গা লাগলেও, সেই আঁচ থেকে মুক্ত ছিল আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। সেটা ভাঙল ক্যানিংয়ের দাঙ্গার মাধ্যমে। ২০০ মানুষের ঘর পুড়েছিল সেবারে। তারপর ২০১৫ তে নদীয়া, ২০১৬ তে কালিয়াচক, ধূলাগড়, ২০১৭-তে বাদুড়িয়া, এভাবেই চলছে।

দাঙ্গার চিৎকার এমনই, যেখানে কেবল দুটো আওয়াজই শোনা যায়, হয় “জয় শ্রী রাম” অথবা “আল্লাহ হু আকবর”। চুরি, ডাকাতি, পাচার, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব থেকে প্রাণহানি এই দুই ধর্মীয় ধ্বনির কাছে নস্যি।

এই জায়গাটাই বিপজ্জনক। বর্তমানের পক্ষেও, ভবিষ্যতের পক্ষেও উদ্বেগের। আগামী দিনে মানুষের পরিচয় কি ভারতীয় না কেবল ধর্মের ভিত্তিতে হবে ? বাংলা তথা সারা ভারত কি আগামী দিনে কি উগ্র মৌলবাদী দেশের মত ধর্মীয় জাতি দাঙ্গায় ক্ষত বিক্ষত হবে? সে দিকেই কি নিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কারবারিরা? ক্ষুধার কোন জাত নেই, ধর্ম নেই। দু হাতে কাজ চাই, পেট ভরে খেতে চাই, মানুষের এই চাওয়ার লড়াই যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তার জন্যই কি ধর্মকে হাতিয়ার করে এই ধর্মীয় দাঙ্গা সংগঠিত করা হয়, প্রশ্ন রইল।