গরুটা পালিয়েছে / The Propaganda Machine

সময়টা ২০১৭-১৮ সাল। ‘আগে রাম পরে বাম’, এই ছিল স্লোগান। বাংলা থেকে বাম হঠাবার এটাই ছিল আসল মন্ত্র। সেই মন্ত্র জপেই বামকে শূন্য করে বাংলার সংসদীয় রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান। তাতে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল বাংলার বিকিয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যম। সেসময় চারিদিকে খালি তারা দেখতে পাচ্ছিল বামেদের রক্তক্ষরণ। চলছিল বামেদের দেদার সমালোচনা। বামেদের বিশাল উল্লেখযোগ্য কর্মসূচিগুলোকে কার্যত ‘ব্ল্যাক আউট’ করে প্রচার না করে আর তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো ফলাও করে কভার করে তারা বাংলার মানুষকে একটা বার্তা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল যে ‘বামেরা ফিনিশ’। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে বামেদের ডাকা বিশাল ব্রিগেড সমাবেশকেও সেদিনকার সান্ধ্যকালীন প্রাইমটাইমে অথবা পরদিনের খবরের কাগজে ‘সাইডলাইন’ করে দেওয়া হয়েছিল। আর সামনে তুলে আনা হয়েছিল সারদাকান্ডে সিবিআই তদন্তের মুখে পড়া রাজীব কুমারকে আড়াল করবার জন্য, সেই রাজীব কুমারকে সাথে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় বসে যাওয়ার ঘটনাটিকে। বলা হচ্ছিল এটাই নাকি ‘স্ট্রীট ফাইটার’ মমতা। মানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনিক প্রধান রাস্তায় নেমে চিটফান্ড কান্ডের তদন্তে বাধা দিচ্ছেন, এটাই নাকি লড়াই! কিন্তু লড়ছেন কার সাথে! কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সাথে, কারণ সিবিআই হল কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী সংস্থা!

আর এভাবেই পাকেচক্রে পড়ে বামেদের লড়াই ক্রমশ জনমানস থেকে হারিয়ে যায় এবং তার জায়গায় উঠে আসে বিজেপি। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তারা পেয়েছিল অভাবনীয় সাফল্য। জিতেছিল ১৮টা লোকসভা সিট। ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা বামেদের ভোট নেমে এসেছিল ৫%-৭%। স্বাধীনতার পর সম্ভবত সেই প্রথম লোকসভায় বাংলা থেকে বামেদের কোন প্রতিনিধি থাকলো না। আর ব্যস, তাতেই ‘বামেরা ফিনিশ’ ন্যারেটিভটা কিছুটা পাকাপাকিভাবে জনমানসে জায়গা করে নিল। মিডিয়াতেও বামেদেরকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। একদম যাকে বলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে খেঁদিয়ে দেওয়া, মিডিয়া সেটাই করেছিল বামেদের সাথে। মহামারীর মধ্যে বাম তথা সিপিআই(এম)-র ছাত্র-যুবদের ‘রেড ভলেন্টিয়ার্স’ ব্যানারের তলায়, রাজ্য জুড়ে করে যাওয়া ব্যপক সামাজিক কাজকর্ম জনমানসে কিছুটা দাগ কাটলেও ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলতে পারল না, কারণ মিডিয়া সেভাবে রেড ভলেন্টিয়ার্সদের কাজকর্মকে তুলে ধরেনি। যেটুকু যা কভারেজ হয়েছে তা অনেকটা ঐ ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মত।

এমনকি ২০২১-র বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের ডাকা বিশাল ব্রিগেড সমাবেশ থেকে নজর ঘোরাতে মিডিয়া বেছে নেয় ব্রিগেডের মঞ্চে ঘটে যাওয়া মুহুর্তের অধীর-ভাইজান ভুল বোঝাবুঝিকে। সেইসঙ্গে শুরু হয়ে যায় বামেদের বাপান্ত করা, ‘ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকির মত একজন মুসলিম ধর্মগুরু বামেদের মঞ্চে, কি ব্যাপার! এতো বামেদের দিনের আলোয় পদস্খলন!’ অথচ এই সংবাদমাধ্যমই মুকুল-শুভেন্দু-রাজীব-অর্জুন সিং-নিশীথ-শঙ্কুদেব পাণ্ডা প্রভৃতি একগুচ্ছ সারদা-নারদা কেসে বিদ্ধ দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমুলী নেতাদের বিজেপিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আদৌ তা কতটা সমীচিন বা এতে বিজেপির পদস্খলন হল কি না তা নিয়ে মুখে কুলুপ দিয়ে রাখে। এদের কেউ কেউ আবার এই দলবদলু রাজনীতিকে মাস্ট্রারস স্ট্রোক আখ্যাও দিয়ে দেয়। বামেদের ঠিক পরপরই বিজেপি ব্রিগেড সমাবেশ ডাকে। নামে ‘ব্রিগেড’ হলেও ধারে ও ভারে সেই জমায়েত শহীদ মিনার বা রাণী রাসমনির সমতুল ছিল। বামেদের ব্রিগেড জমায়েতের সাথে তার কোনও তুলনাই চলে না। আমাদের মনে হয়েছিল বিজেপির ব্রিগেড ছিল আয়তনে বামেদের ব্রিগেডের এক চতুর্থাংশ। যদিও তা নিয়ে অবশ্য বাংলার সংবাদমাধ্যমে কোন আলোচনা হয়নি। বরং ব্রিগেড মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিঠুন চক্রবর্ত্তীর ফিল্মি ডায়লগ “এক ছোবলেই ছবি” ঘুরে ফিরে আসতে থাকে সংবাদমাধ্যমে। নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে বাংলার সংবাদমাধ্যমের সেই ব্যবহারকে পর্যালোচনা করলে মনে হবে তারা সবাই অনেকটা আগে থেকে ঠিকই করে নিয়েছিল যে, বিজেপিকে ফুটেজ খাওয়াবে এবং বামেদেরকে হঠিয়ে এই বিজেপিকেই বিরোধী আসনে বসাবে। আর এই লাগাতার প্রচারেই প্রভাবিত হয়ে যায় আপামর জনতা। আর এটা হওয়ারই কথা। কারণ মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের দৌলতে মিডিয়া আজ সর্বগ্রাসী। ফলস্বরুপ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লোকসভার পর বিধানসভাতেও বামেরা শূন্য হয়ে গেল। বিরোধী পরিসর দখল করলো বিজেপি। পেলো ৭৭ টা সিট। কিন্তু তারপর….

না, তারপরে যাওয়ার আগে বলেনি, এই যে হঠাৎই কিছুটা বিশদে (অথবা সংক্ষেপে) পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটা হল তার কারণ, এ হল সেই সময়কার ঘটনা, যখন রাইজ অফ ভয়েসেসের জন্ম হয়নি। আর তাই এগুলো লেখাও হয়নি। কাজেই ফুটেজ খেতে খেতে বিজেপি নামক গল্পের গরুর গাছে উঠে পড়বার কাহিনীটা একটু না বললে সেই গরুটা কিভাবে গাছ থেকে নেমে হারিয়ে গেল সেটা বোঝা যাবে না।

আসলে ১৮ জন সাংসদ এবং ৭৭ জন বিধায়ক নিয়ে বাংলার বুকে জাঁকিয়ে বসা একটা নির্দ্দিষ্ট আদর্শদ্বারা চালিত (সে আদর্শ কারোর পছন্দ বা অপছন্দ হতেই পারে) দল এভাবে তারপরেই এমন ‘ক্ষয়’রোগের প্রকোপে পড়বে আমরা কেউই ভাবিনি। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ৩৮% ভোট পাওয়ার পর পরবর্তী, সে কোন বিধানসভা উপনির্বাচনই হোক অথবা স্থানীয় পৌরসংস্থার ভোট, সবেতেই বিজেপি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভোট শতাংশ যেমন চড়চড়িয়ে উঠেছিল তেমনই তরতরিয়ে নেমে এসেছে। আপাতত ১৫% র আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। শাসক তৃণমূলকে কোন শক্ত চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করানো তো দূরে থাক, প্রথমদিকের কয়েকটা বিধানসভা উপনির্বাচন বাদ দিলে, পরবর্তী সবকটা নির্বাচনে চলে গেছে বাম-কংগ্রেস জোটের পেছনে তৃতীয় স্থানে। অথচ বাংলার সংবাদমাধ্যমে এদের ফুটেজ খাওয়ার বিরাম নেই। কিন্তু এভাবে কি আদৌ বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব। দেওয়ালের লিখন কি এভাবে এড়ানো যায়! সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে ২০২১-এর পর প্রথমবার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস হারের সম্মুখীন হল। বাম-কংগ্রেস জোট শুধু বিরাট ব্যবধানে জয়ীই হয়নি, বঙ্গ বিজেপিকে ডিসট্যান্ট থার্ড পজিশনে পাঠিয়ে দিয়ে রীতিমত অস্তিত্ব সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু তবুও এনাদের ফুটেজ খাওয়ার রোগ সারছে না।

আলু চাষীদের দুর্দশা নিয়ে কলকাতার রাজপথ কাঁপিয়ে কাগজে-চ্যানেলে মুখ দেখানোর থেকে গ্রাম বাংলার আলপথ ভরিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোটা যে বেশি জরুরি, বঙ্গ বিজেপি তা বুঝতে চাইছে না। যে কায়দায় দুদিন আগে কলেজস্ট্রীটের রাস্তায় আলু চাষিদের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে এই দাবীতে আয়োজিত মিছিল থেকে শুভেন্দু-রাহুল সিনহারা মিডিয়া ও সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে হাসিমুখে হাত নাড়ছিলেন, তা দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি, এনারা আলু চাষিদের জন্য আদৌ চিন্তিত! এমনকি গরীব মানুষ ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় টাকা পাচ্ছে না, এই অভিযোগে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস কলকাতার বুকে কর্মসূচি নিয়েছে দেখে যেভাবে রীতিমত শেষ মুহুর্তে তড়িঘড়ি বঙ্গ বিজেপির নেতারা শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে মাচা বেঁধে বসে পড়লেন তাতে তাদের পরিকল্পনাহীনতার ছাপই আরও স্পষ্ট হল। খাতায় কলমে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ধর্না দিচ্ছে পাঁচমাথার মোড়ে অথচ তা দেখতে সে তুলনায় মানুষের সেরকম ভিড় বা উৎসাহ চোখে পড়েনি। যদিও সংবাদমাধ্যম যথারীতি লাফালাফি করেছে।

কিন্তু এসবে কি আদৌ লাভ হচ্ছে! জেলায় জেলায় একের পর এক সমবায়, স্কুল ও মদ্রাসা পরিচালন সমিতির মত স্থানীয় তৃণমূল স্তরের নির্বাচনগুলোতে বিজেপির ভরাডুবি কিন্তু হয়েই চলেছে। বেশিরভাগগুলোতেই শাসক তৃণমূলের সাথে টক্কর চলছে বামেদের। অনেকগুলিতে তৃণমূলকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে পরিচালন সমিতির দখন নিচ্ছে বামেরা। সেখানে বিজেপিকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ দুই নেতা দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সমবায় ও স্কুল পরিচালন সমিতিগুলিতে বিজেপি স্থানীয় স্তরে প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না। হাতেগোনা যেটুকু যা পাচ্ছে তা মূলতঃ বামেদের লেজুড়বৃত্তি করে যেটাকে মিডিয়ার একাংশ ‘নন্দকুমার মডেল’ নাম দিয়েছে। তবে তাতে আবার বামেদের রাজ্য নেতৃত্বের বিলকুল সায় নেই। ফলে আগামীদিনে ঐসব এলাকায় বড় কোন নির্বাচন হলে যে বিজেপি আদৌ লড়াইয়ের জায়গায় থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। সামনেই আর এক-দুমাসের মধ্যে আমাদের রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। এরপর ২০২৪ এ লোকসভা ভোট। সম্প্রতি সেই উপলক্ষে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা বাংলাতে দলের হাল হকিকত পর্যালোচনা করে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতে বেশিরভাগ জায়গায় দলের বেহাল দশা বেয়াব্রু হয়ে পড়েছে। রাজ্যের মোট ৭৭ হাজার বুথের মধ্যে ২৫ হাজারেরও কম বুথে বিজেপির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। বাকি ৫২ হাজার বুথে বিজেপির লোকজন একরকম নেই। এমনকি এই ২৫ হাজার বুথের কর্মী সমর্থকদের যে তথ্য হাতে এসেছে তার গুণমান নিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সন্দিহান, এমনটাই খবর সামনে আসছে। কারণ এরমধ্যে মেরেকেটে মাত্র ৭-৮ হাজার বুথে বিজেপি বুথ কমিটি তৈরি করতে পেরেছে। যদিও বুথ কমিটি তৈরি হয়েছে মানেই যে শাসক তৃণমূলের সাথে দারুণ লড়াই হবে এমনটা নিশ্চিত নয়, তবুও সংগঠনের গভীরতা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

আর এই বেহাল দশার ছবি সামনে আসতেই রাজ্যজুড়ে বিজেপি সমর্থক ও কার্যকর্তাদের মধ্যে নির্বাচন সম্পর্কে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা চাইছেন যেন তেন প্রকারেণ নির্বাচন আটকাতে। ছুটছেন কোর্টে। যেমন ধরা যাক মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রর কথা। এক বছরের বেশি হতে চললো, বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে মানিকতলা বিধায়কহীন। অথচ ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে এখান থেকে দাঁড়িয়ে পরাজিত হওয়া বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে অহেতুক হাইকোর্টে মামলা ঠুকে রেখে মানিকতলা বিধানসভার উপনির্বাচন আটকে রেখেছেন। ওনার দাবী ২০২১ সালের নির্বাচনে সাধন পান্ডে ভোট গণণায় ‘জল’ মিশিয়ে জয়ী হয়েছেন। তাই তিনি আশায় আছেন কোর্টের রায়ে জিতবেন এবং কোন উপনির্বাচন ছাড়াই মানিকতলার বিধায়ক হয়ে বসবেন। কিন্ত তিনি যদি জয়ের ব্যাপারে এতটাই নিশ্চিত হতেন তাহলে মামলা তুলে নিয়ে উপনির্বাচনে লড়ে এতদিনে বিধায়ক হয়ে যেতে পারতেন। আসলে তিনি নিশ্চিত নন বলেই মামলা ঠুকে ভোট আটকে রেখেছেন, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, সাধন পান্ডে মারা যান ২০২২ র ফ্রেব্রুয়ারিতে। আর বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির জামানত জব্দ হয় এপ্রিলে। সেখানে বামপ্রার্থী সিপিআই(এম)র সায়রা শাহ হালিম ৩০% র বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন। তার আগে ২০২১র ডিসেম্বরে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনেও বিজেপি পায় মাত্র ৮% ভোট। বামেরা পায় ১৪%। আর সেই তখন থেকে শুরু হয়েছে বিজেপির থার্ড হওয়ার পালা। তাই বিজেপির কল্যাণ চৌবেরা চাইছেন না ভোটে যেতে। তার থেকে কোর্টে মামলা চলুক। আর সাগরদীঘির অভিজ্ঞতার পর তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন ভোটে গেলেই ফের একবার ‘থার্ড বয়’ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

সেই একই কারণে পঞ্চায়েত ভোট আটকাতে শুভেন্দু ছুটছেন কোর্টে। তাঁর দাবী ২০১১ সালে তফসিলি জাতি এবং উপজাতির গণনা করা হলেও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র গণনা হয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করেছিল, তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই গণনা করছেন। শুভেন্দু সেই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন। মঙ্গলবার ওই মামলায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রায় ঘোষণা করে। এবার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তিনি গেছেন সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট আপাতত এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ। তাই তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন আগামী সাতদিন যেন রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা না করে। মানে নির্বাচন আটকাবার মরিয়া আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। কারণ এই মুহুর্তে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হলে বঙ্গ বিজেপির আশঙ্কা তারা দুই-তৃতীয়াংশ আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না। তাই একদিকে আগবাড়িয়ে বাম-কংগ্রেসের সাথে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে মহাজোট করতে চাইছেন যাতে সেই ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে যায়, আর অন্যদিকে পঞ্চায়েত ভোটের ওপর স্থগিতাদেশ আনতে আদালতে ছুটছেন।

যদিও বাংলার সংবাদমাধ্যম ‘শুভেন্দুদের দল কি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ভয় পাচ্ছে, তাদের দল কি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়’ এমন কোন প্রশ্ন এখনও করে উঠতে পারেনি। বরং তারা এখনও ‘খাতায় কলমে প্রধান বিরোধীদল’ এই অজুহাতে বিজেপিকে কারণে-অকারণে ফুটেজ খাওয়ানোর কাজটা চালিয়ে যাচ্ছে। শাসকদলের তরফেও এব্যাপারে অদ্ভুত নীরবতা! তারা এখনও বলেনি, বিজেপি ভোটে লড়তে ভয় পাচ্ছে। কারণ একের পর এক দুর্নীতিতে জড়িয়ে তাদের সততার মুখোশটা খুলে গেছে। তার ওপর ১০০ দিনের কাজ বা আবাস যোজনার তালিকাতে ব্যপক দুর্নীতির কারণে গ্রাম বাংলার বহু মানুষ তাদের প্রাপ্য টাকা পায়নি। সরকারী মান্ডিতে আলু আর ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে ফুঁসছে কৃষক সমাজ। তার সাথে বীজ ও সারের কালোবাজারি, সমবায় লুঠ, মাইক্রোফিন্যান্স সংস্থাগুলোর দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ গ্রাম বাংলা। যে কারণে জেলায় জেলায় দিদির দূতেরা গ্রামবাসীদের সম্মিলিত ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। বেশ কিছুক্ষেত্রে তাঁরা গ্রামে ঢুকতে পর্যন্ত পারেননি। আর সম্প্রতি সাগরদীঘির ভোট দেখিয়েছে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু দুই ভোটই ক্রমশ বাম-কংগ্রেস জোটের তলায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, যার ফলে তৃণমূল এবং বিজেপি’কে বিশাল পরাজয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কার্যত বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী, তৃণমূল ও বিজেপি দুদলের সম্মিলিত ভোটের সমান ভোট পেয়েছেন। কাজেই এই মুহুর্তে ভোট না হলে তৃণমূলেরও তেমন কোন অসুবিধা নেই, বরং লাভই। কাজেই তারাও চুপ। দূর থেকে দেখছেন শুভেন্দু অধিকারীরা পঞ্চায়েত নির্বাচন স্থগিত করতে পারেন কি না।

মানে আমরা জোর গলায় বলছি না যে, এটাও সেটিং। তবে তৃণমূল যে বিজেপির ঘাড়ে রেখে বন্দুকটা চালাচ্ছে না এব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই।

তবে একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, আর সেটা হলো গল্পের সেই বিজেপি নামক গরুটা আর নেই। সে গরুটা পালিয়েছে। হারিয়ে গেছে। একের পর এক নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়ে জনমানস থেকে আপাতত দূরে। যা পড়ে আছে তা হলো ফুটেজখোর একদল গাধা। গাধা বলছি কারণ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সমস্ত প্রথমসারির মিডিয়ার অকাতর বদান্যতা পেয়েও যারা তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রভাব বাড়ানো তো কোন ছাড়, ধরে রাখতে পারে না তাদেরকে আর যাই হোক ঘোড়া বলা যায় না। আর তাই বাংলার সংবাদমাধ্যমের কাছে আমাদের এটাই বিনীত অনুরোধ যে সেই গাধার কাঁধে লাঙ্গল জুতে ‘হয় তৃণমূল নয় বিজেপি’ বাইনারির বোকা-বোকা চাষটা এবার বন্ধ হোক। তবে এর পাশাপাশি ‘বামেরা ফিনিশ নয়, ফিনিক্স’ এমনটা ভাবনার সময়ও আসেনি। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে শুধুমাত্র তার একটা দিশা পাওয়া যেতে পারে, এই পর্যন্তই!

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/if-there-is-a-by-election-in-sagardighi-why-not-in-maniktala-adhir-chowdhury-senat-a-letter-to-election-commission-asking-to-know-dgtl/cid/1401701
b) https://www.anandabazar.com/west-bengal/suvendu-adhikari-again-appeal-to-supreme-court-to-prevent-the-declaration-the-dates-of-panchayet-election-for-seven-days-dgtl/cid/1418359
c) https://www.
anandabazar.com/west-bengal/if-there-is-a-by-election-in-sagardighi-why-not-in-maniktala-adhir-chowdhury-senat-a-letter-to-election-commission-asking-to-know-dgtl/cid/1401701
d) https://www.anandabazar.com/west-bengal/state-bjp-leaders-will-start-visiting-several-districts-to-form-booth-committee/cid/1413547