হাট / Open Market

হঠাৎই ছোটবেলার দু’কলি কবিতা মনে পড়ে গেলো!

“হাট বসেছে শুক্রবারে,
বকশিগঞ্জে পদ্মাপারে।
জিনিষপত্র গুছিয়ে এনে,
গ্রামের মানুষ বেচে কেনে।”

ঐ যাকে বলে ছোটবেলার নস্টালজিয়া…. সেটা’ই আর কি!

বাঙালীর শৈশবের সাথে রবি ঠাকুরের ‘সহজপাঠ’ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বছর তিনেক আগে হলেও লিখে দিতাম এই পৃথিবীতে যতদিন বাঙালী জাতি বাঁচবে, ততদিন আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, রবি ঠাকুরের ‘হাট’ কবিতাটা বা ‘সহজপাঠ’ বইটা থেকে যাবে। কিন্তু হঠাৎই যেদিন এক দাপুটে সনাতনী নেতা বিদ্যাসাগরের লেখা একটি নতুন সহজপাঠের সন্ধান দিলেন, তারপর থেকে এ কথাটা বলতে আর ততটা জোর পাই না। তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ, অন্য কোন প্রতিবেদনে আলোচনা করা যাবে!

আপাতত বর্তমান প্রতিবেদনে আমাদের বিষয় হলো ‘হাট’। তবে এই হাটের সঙ্গে ‘সহজপাঠ’ বইতে হাটের যে বর্ণনা আছে তার তিনটি মৌলিক পার্থক্য আছে। এক, এ ‘হাট’ আদৌ জিনিষপত্র কেনা-বেচা করবার হাট নয়, এ হলো মানুষ কেনা-বেচার হাট। দুই, এ ‘হাট’ আর শুধু শুক্রবার নয়, সপ্তাহের যে কোন দিন, সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত্রি যে কোন সময়ে বসে যায়। আর তিন, এ ‘হাট’ পদ্মাপারের বকশিগঞ্জে বসে না, বসে গঙ্গাপারের নবান্নে অথবা হেস্টিংস বিল্ডিংএ, ইদানীং ক্যামাকস্ট্রীটেও বসছে। আগে বসতো তপসিয়া বা মুরলীধর সেন লেনে। অবশ্য তারও আগে ‘যোগদান মেলা’ জাতীয় কিছু একটা হত জেলায় জেলায় খোলা মাঠে ম্যারাপ বেঁধে!

মানে কোথাও কোন লুকোছোপার ব্যাপার নেই। একদম বুকচিতিয়ে মানুষ বিক্রি! সংবাদমাধ্যমের বুম-ক্যামেরাকে সাক্ষী মেনে হয় সমাজের ‘বিকাশ’ না হয় ‘উন্নয়ন’, যে কোন একটা ছুতোয় মানুষ কেনা-বেচা হয়ে থাকে। কাজেই আমরা যে দুম করে নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে দেব তাও অত সোজা নয়! সাত-পাঁচ স্বার্থচিন্তা ‘ডবল ইঞ্জিন’এর গতিতে ঢুঁ মারে, ‘বাংলার মেয়ে’ হয়ে মাথায় হাত বোলায়। এমনকি সংবাদমাধ্যমেও তেমন উচ্চবাচ্য নেই, বরং সেখানে এগুলোকে মাস্টারস্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। আর এই রং বদল বা দলবদলের পিছনে আসল চাণক্য কে তার খোঁজ চলে, তাকে বন্দনা করা হয়। আমরাও সেইমত ভাবতে শুরু করি বিজেপির বিকাশ আর তৃণমূলের উন্নয়নের মাঝেই তো আমাদের হাসিখুশি বিকশিত উন্নীত জীবন। কাজেই এত নীতি আদর্শের কচকচানি না কচলালেও চলবে।

এ পর্যন্ত ঠিকই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন হলো জনৈক শাসক সেনাপতির একটি মন্তব্য আমাদের নজর কেড়েছে। তার মন্তব্যের মূল নির্যাশ হলো দলবদলুদের জন্য দলের দরজা ‘হাট’ করে খুলে দিলে নাকি আস্ত বিজেপি দলটাই উঠে যাবে!

এখন সমস্ত রাজনৈতিক দল চায় তার বিপক্ষ দল উঠে যাক, হাতেগোনা কর্মী সমর্থক নিয়ে ধুঁকতে থাকুক। এই চাওয়ার মধ্যে কোন অন্যায় বা দ্বিচারিতা নেই। তাহলে তৃণমূল দরজাটা খুলছে না কেন! মুড়ি-মুড়কির মত অন্যদলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কেনা-বেচায় সিদ্ধহস্ত বিজেপি ও তৃণমূল তো আর ন্যায় নীতির খুচরো দোহাই দেবে না নিশ্চয়! আর দিলেও তা আদৌ জনমানসে ধোপে টিকবে না!

কাজেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। আর সেটাকেই আমরা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে হাটের মাঝে এনে দিয়ে তার উত্তর খুজতে চাইছি। আপনারা চাইলে কমেন্ট বক্সে উত্তর দিতে পারেন।

কেন তৃণমূল চায় না, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলটা উঠে যাক? তবে কি বিজেপি কে বিরোধী হিসেবে রেখে দিলে তৃণমূলের সুবিধে! কি সেই সুবিধে?

আমরা জানি রাজনীতিতে শাসক বা বিরোধী কোন পরিসরই চিরকাল শূন্য থাকে না। কাজেই বিজেপি উঠে গেলে তার পরিবর্তে অন্য কোন দল বা বামেরা মানে সিপিআই(এম) ফের প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে এলে তৃণমূলের কি কোন অসুবিধে আছে? থাকলে কি সেই অসুবিধে?

জানতে চাই আমরা। জানতে চায় বাংলা।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস