গেলো সব গুলিয়ে / Open Letter To Viswaguru

মাননীয় বিশ্বগুরু,

আমাদের প্রতি এ আপনার ভারি অন্যায়! মাঝেমধ্যেই আপনার জন্য যেভাবে আমরা ল্যাজে গোবরে হচ্ছি, তাতে আমরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ! বছরের পর বছর বড় বড় মিডিয়া হাউস, টিভির পর্দা থেকে সোশাল মিডিয়া, সর্বত্র যাদেরকে খিস্তাই, তাদের সামনে আমাদের হ্যাটা করতে এত্ত ভালো লাগে কেন আপনার। একবার হয়, দুবার হয়, মানলাম। তাই বলে বারবার? এগুলো কি ঠিক হচ্ছে?

একে তো আমাদের প্রিয় দিদি ও দাদা, প্রফেট নিয়ে দুটো কথা বলায় দল থেকে ঘাড়ধাক্কা খেল! তাও যদি প্রথমেই ঘাড়ধাক্কা দিতেন, না হয় “ছাপান্ন ইঞ্চি”র রাজধর্ম বলে গুলিয়ে দিতাম! কিন্তু করলেন তখন, যখন লুঙ্গি-ফেজটুপিওলাদের দেশগুলো থেকে হুড়কো এল! আমরাও তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে “বুলডোজারযোগী” হয়ে সবে একটু একটু করে জনতার নজর ঘোরাচ্ছিলাম, আপনি সামনে এনে দিলেন অগ্নিপথ! তাও আবার উইদাউট অমিতাভ বচ্চন! এভাবে কাজ করা যায়!

আজ থেকে বছর ছয় সাত আগে “জওয়ান বর্ডার পে খাড়া হ্যায়” দিয়েই তো আমরা শুরুটা করেছিলাম, আর শেষে কিনা সেই জওয়ানকে পেনশন দেওয়ার পয়সা না থাকায়, ভাড়াটে সৈন্যর গপ্পো দেওয়া! জনতা “গেরুয়া” থাকে, ক্ষেপে “লাল” তো হবেই! আর এ হল কমবয়সী তেজি জনতা! এদের কোন হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রীষ্টান ভেদাভেদ নেই! অনেকেই ছাত্রছাত্রী বা সদ্য স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে! এরা কারোর কথাই শোনে না! এরা খালি কাজ চায়! মানে আমরা যাদেরকে আগে বখাটে লিবারান্ডুর দল বলে দাগিয়ে দিয়েছিলাম তারা! এরা যে সংখ্যায় এত জানতাম না। সে যাক, না জেনে না বুঝে, কর্তার ইচ্ছেতে কর্মই তো এদ্দিন করে এসেছি। কিন্তু বিপত্তিটা তো অন্য জায়গায়, এরা সরকারি অফিস কাছারি বা রেলস্টেশন-রেলগাড়িতে দেদার আগুন ভাঙচুর চালালেও বুলডোজার ডাকতে পারছি না। কারণ এক, ডাকলেই এবার নির্ঘাত গণক্যালান! তার ওপর “সুপ্রিম” ধমক তো আছেই! আর দুই, এদের অনেকেই আমাদের মত হিন্দু। কাজেই ভাবছিলাম আপনার মত কিছুদিন বাকিদের এগিয়ে দিয়ে নির্বিকল্প নিদ্রায় যাব! কিন্তু এটা আপনি কি করলেন ! আমাদের ঘুম চটকে “চ” হয়ে গেছে।

এই এত দিন দেশদ্রোহী বলে যাদের ধরে ধরে দেশের বাইরে ছুড়ে ফেলব বলে লাফালাফি করছিলাম, ক্রোনোলজি বুঝলাম এবং বোঝালাম, আপনার কথা মত পোশাক দেখে যাদের চিনছিলাম, তাদের কথা আপনার হঠাৎ মনে পড়ল কেনো মশাই? মাকে চিঠি লিখলে, এত ফলাও করে বলার কি আছে? আর যাদের আমরা মোটামুটি তাড়িয়েই দিচ্ছিলাম, তাদের আপনি কিনা নিজের ঘরে রেখেছিলেন? তাদের উৎসব আবার আপনার কাছে স্পেশাল হয় উঠত, কি শুনছি এসব? মাটির নিচে ইয়ে খোঁজার কারবারটা তো এবার বন্ধ করে দেবেন দেখছি। এবার লোকে এসব শুনে “ক্যা ক্যা ছি ছি” করলে আমরা কোথায় মুখ লুকাবো বলুন তো দেখি? এই তো “আব্বাসিদ কমরেড” বলে গত বিধানসভা ভোটেও গালমন্দ করে যাদের ভোটব্যাঙ্ক ভাঙিয়ে ৩৭% হল, তারা এবার বিজেমূলের সাথে সাথে আমাদেরকে আব্বাসিদ সনাতনীও বলতে শুরু করেছে! জিজ্ঞেস করছে বাংলাদেশ যাবি? কোন উত্তর দিতে পারছি না।

এদিকে বাড়িতেও একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছি। আপনার দেখাদেখি যেই না বাড়িতে মা’কে বলেছি, এসো মা তোমার পা-টা ধুয়ে দি, সঙ্গে সঙ্গে আমার তো বাপ-বাপান্ত হয়ে গেল, সেইসাথে মা বলল, নিকম্মা হারামজাদা, আগে নিজের মুখটা ফিনাইল দিয়ে কুলকুচু করে পরিষ্কার কর, তারপর আমার সাথে কথা বলবি। রাতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজনকে খিস্তিখাস্তা করে মুখের ভাষার তো চচ্চড়ি হয়ে গেছে!

আমি চুপ! আমরা জানি “মন কি বাত” শোনা কান দিয়ে “মা কি বাত” এ’কান দিয়ে ঢুকিয়ে ও’কান দিয়ে বার করে দিতে হয়! কিন্তু তার ফাঁকেই তো দেখছি আপনি আবার আমাদের পিছনে নতুন হুড়কো গুঁজছেন! যাদের আমরা অমুক দেশের দালাল বলতাম, যাদের বিচারধারাকে আপনি ন্যাশনাল চ্যানেলে বসে ডেঞ্জারাস বলেছিলেন, তাদের সেই দালাল দেশের একশ ছয় বছরের পুরোনো ব্যাঙ্ক’কে আপনি এদেশে ব্যবসা করার অনুমতি দিলেন কোন লজিকে? ইকোনমিক টাইমে বড় বড় করে এসব আবার লিখেছে। কি কেচ্ছা কি কেচ্ছা!

ওদের প্রোডাক্ট আটকাতে তো পারেননি, এবার আমাদের টাকাও কি ও দেশে পাঠাবেন? সুইস ব্যাংকে কি আর জায়গা নেই? আমাদের বঞ্চিত করে ওই দেশের শ্রমিক দিয়ে আমাদের দেশে ইয়া লম্বা মূর্তি বানালেন, সেটা না হয় মাস্টারস্ট্রোক বলে মেনে নিলাম, এমনকি গুজরাট মডেলটাও নাকি শুনেছি ৬০% ওদের বিনিয়োগে তৈরি, কিন্তু আমাদের এমন বিপদের দিনে এখন আবার ওদের নিয়ে এত মাতামাতির কি ছিল! চাউমিন না খেয়ে, যে দেশের অর্থনীতি ভেঙে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলাম, সেই দেশ চোখের সামনে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে গেল। তাই কি আপনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন? এবার ডোলান্ডের দেশ তো বোম মারবে! এরপর যদি লোকে আপনাকে ওদের “দালাল” বলে ডাকা শুরু করে, তবে আমাদের দোষ দেবেন না। এমনিতেই পুরভোটের পর, ওদের গালি মারা বড্ড বেড়েছে, তার ওপর আপনাকে তেনার ফুল, মিষ্টি, আম, কুর্তা ইত্যাদি পাঠানো তো চলছেই! সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমাদের! যে চাষাভূষাগুলোকে এতদিন ধরে বুঝিয়ে আসছিলাম, আপনি চলে গেলেন তাদের ফরে! আমাদের মত ভক্তদের কথা ভাবলেন না? যেটাকে এতদিন ভালো বলতাম, সেটাকেই খারাপ বলতে হল। ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ থেকে ছেলে ছোকরা, আমাদের দেখলে সবাই ইদানীং রগড়ে দিচ্ছে।

আপনার মাস্টারস্ট্রোকের ঠেলায় আমাদের স্ট্রোক না হয়ে যায়!

যাই হোক, চরনকমলে ক্যামেরাসহ প্রণাম নেবেন।

ইতি আপনার অনুগত,
ভক্তরাম চৌকিদার