শিক্ষক বনাম শিক্ষক / Teacher Vs Teacher

জুলাই ২, ২০২২ রাইজ অফ ভয়েসেসের পাতায় এসেছিল শরিফুল হকের প্রতিবেদন, “প্রাইভেট টিউশনিই কর্মসংস্থান“। এই প্রতিবেদনে নিজস্ব মতামত জানিয়েছেন আমাদের অনেক পাঠক, কেউ ছুড়ে দিয়েছেন প্রশ্ন। তাদের মধ্যে থেকে কিছু বাছাই করা মতামত আপনাদের কাছে রাখা হল।

যে কোন সৎ রোজগারই মেরুদণ্ডী। আর সরকার শিক্ষক নিয়োগ করছে না তাই শিক্ষকতার সুযোগ না পাওয়াদের টিউশনির ক্ষেত্রে একচেটিয়া সুযোগ দিতে হবে তার কোন যুক্তি নেই। কারণ একজন পড়ুয়া কার কাছে টিউশন পড়বে সেটা তার পছন্দ। আইন করে কাউকে টিউশনির একচেটিয়া অধিকার দিলে পড়ুয়ার পছন্দের পরিসর ও অধিকার খর্ব হয়।

চন্দ্রানী দাস চৌধুরী, দক্ষিণ দিনাজপুর

সহমত হতে পারলাম না। চাকরি ছাড়া রোজগার করা যাবেনা, এটাই একটা অমেরুদন্ডী ভাবনা। বলা ভালো, মেকলিয়ান শিক্ষাব্যবস্থার কুসংস্কার এটা। সেখান থেকেই আসে অমুক এম এ পাশ করে তমুকের দোকান দিয়েছে .. ছি ছি, এই ভাবনা। স্কুল কলেজের শিক্ষা স্বাবলম্বী চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা জোগানোর জন্যই হওয়া উচিত, কিন্তু আমরা গোটাটাই চাকরির পায়ে বলি দিয়ে দিয়েছি। আর গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই নোট মুখস্ত নাম্বারভিত্তিক আজ থেকে নয়। এরকম বেকার ও অচল পঠন পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবেই যুগ যুগ ধরে টিউশন নির্ভর। সেখানেও স্কুল শিক্ষকদের একচেটিয়া আধিপত্য কারোর কাছে গাছেরটা খাওয়ার সাথে তলারটাও কুড়োনো মনে হলে সে ভাবনার যুক্তি আছে। তলারটা দাবি করায় ন্যায্যতাও আছে। স্কুলের চাকরি পেয়েও যারা পড়াতে ভালো পারেনা তাদের তুলনায় যারা দক্ষভাবে কোচিং ক্লাস চালান, বছর বছর নিজেকে প্রমান করে পরের ব্যাচের ছাত্র পেতে হয়, তারা সর্ব অর্থেই অনেক বেশি মেরুদন্ডী।

দেবগুরু চট্টোপাধ্যায়, উত্তর ২৪ পরগনা

রাইজ অফ ভয়েসেসের পাতায় আপনার প্রতিবেদন, “প্রাইভেট টিউশনিই কর্মসংস্থান” পড়লাম। আপনি প্রতিবেদনে যেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তা আমার মত এক সাধারণ পাঠকের কাছে পরিষ্কার হল না।

আপনি লিখেছেন, “ভেবে অবাক হই, একটি রাজ্যে শিক্ষিত বেকাররা নিজেদের প্রাইভেট টিউটর নাম দিয়ে সংগঠন গড়েছে। শুধু তাই নয়, টিউশন যাতে শিক্ষকরা না পড়াতে পারে, যাতে তারাই শুধু পড়াতে পারে, তার জন্য মামলাও করে ফেলেছে। দাবী খানিকটা এই রকম, “চাকরি নয়, টিউশন চাই”। শিরদাঁড়া ভাঙতে ভাঙতে একেবারে শেষ না হয়ে গেলে কলেজ-ইউনিভার্সিটি পাস করে কেউ টিউশনের দাবী করে?” রাজ্যজুড়ে শিক্ষিত বেকাররা রাস্তায় দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটাও জানেন হয়ত আপনি, শুধু আন্দোলন চালিয়ে গেলেই, পেটের ভাতের জোগাড় হয় না। তার জন্যে উপার্জনও করতে হয়। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, বিএ, বিএসসি, এমএ, এমএসসি, বিএড, ডিএলএড পাস করা বেকার ছেলেমেয়েদের পেটের ভাত কি ভাবে জোগাড় হবে, সেটা কখনো ভেবে দেখেছেন?

যদি স্কুলে চাকরি করা শিক্ষকরা স্কুলে পড়ানোর পরেও অতিরিক্ত আয়ের জন্যে টিউশন করেন, তাহলে আমাদের মত শিক্ষিত বেকাররা কি করবে? এটাও অন্যদিক থেকে সত্য, স্কুলে চাকরি করলেই একজন শিক্ষক বিরাট বেতন পাবেন, তা নয়। পার্শ্বশিক্ষকরা অত্যন্ত কম বেতনে স্কুলে পড়ান, কোথাও সেটা মাসিক ১,৫০০ – ২,০০০ টাকা। এরা কি করবে, ভেবে দেখেছেন? শাসক নিজের গদি বাঁচানোর জন্যে কৌশল নেবেই। এক্ষেত্রেও সরকার তাই করেছে, তাহলে কি স্কুলের পূর্ন সময়ের শিক্ষকদের টিউশনি করা ঠিক? একবার ভাবুন।

আমরা যখন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নিজেদের অধিকারের দাবিতে দিনের পর দিন রাস্তায় বসে আছি, তখন কয়জন পূর্ন সময়ের শিক্ষক আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্যে নিজের প্রাইভেট টিউশন বাদ দিয়ে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন? উল্টে, যে চারটি টিউশন করে আমাদের পেট চলত, তাতেও স্কুল শিক্ষকরা পা বাড়িয়েছেন। এবার হয়ত আপনি বলবেন, অভিভাবকরা স্কুল শিক্ষকের কাছে ছেলেমেয়েদের পাঠালে কি করা যাবে? অভিভাবকদের বলাই তো যায়, পাড়ার শিক্ষিত বেকার ছেলেটি বা মেয়েটির কাছে আপনার সন্তানদের দায়িত্ব দিন, সেও দায়িত্ব নিয়ে পড়াতে পারবে।

এই কথা বলতে পারলেন না, প্রশ্ন তুললেন মেরুদন্ড নিয়ে। সহমত হতে পারলাম না আপনার সাথে। রাইজ অফ ভয়েসেসের কাছে অনুরোধ আমার এই চিঠি শরিফুল হকের কাছে পৌঁছে দেবেন।

মোহন মুর্মু, বীরভূম

আপনাদের প্রতিটি মতামত রাইজ অফ ভয়েসেসের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের মতামতগুলির সংকলন পাঠিয়েছিলাম শরিফুল হকের কাছে। তিনি উত্তর পাঠিয়েছেন।

শরিফুল হকের উত্তর

আসল সত্যিটা কি? কেন বেকার ভাইবোনেরা তাদেরই শিক্ষকদের শত্রু ভাবছে? কেন ভাবছে তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে কয়জন শিক্ষক।

আসলে সমস্যা ও প্রতিকার থেকে চোখ অন্য দিকে ঘোরানো হচ্ছে/ হয়েছে। পরিকল্পনা করে। সমস্যা ও সমাধানকে চিহ্নিত করতে হবে। ছায়ার সাথে লড়াই করলে আসল শত্রু নিরাপদে থাকবে। আড়াল থেকে মুচকি হাসবে। সেটাই হচ্ছে। তাই আসল সত্যিটা এবার ভাবার অনুরোধ করছি শিক্ষিত বেকার ভাইবোনেদের। যে শিক্ষিত ভাইবোনেরা এই গ্রুপে আছেন, কিন্তু এখনও চাকরী পাননি। তাদের উদ্দেশ্য বলা কয়টি কথা।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

আমরা জানি যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও আপনাদের এখনও কোন কাজের (চাকরীর) ব্যবস্থা হয়নি। তার জন্য আপনি যতটা দায়ী, তার চেয়ে ঢের দায়ী বর্তমান সরকার। হয়তো কথাটা সবার পছন্দ হলো না। তবু ভাববার অনুরোধটা রইলো একবার আপনাদের কাছে।

লড়াই করেছেন / করছেন অনেক। অনেক কষ্ট করে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। কেউ কেউ জমি জমা বিক্রি করে বা জমানো সম্পদ শেষ করে বিএড/ ডিএলএড ডিগ্রীও নিয়েছেন। তার সাথে উচ্চতর ডিগ্রী। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে সেভাবে নিয়োগ হয়নি। যেটুকু হয়েছে তাতে স্বচ্ছতার বেশ অভাব। এদিকে সংসারের চাপ বা নিজেদের কষ্টটা বুঝি।

সহমর্মী। আপনার গ্রাস হয়তো কেড়ে নিয়েছেও কোন টাকাওয়ালা। তারাও হয়তো সে টাকাও যোগাড় করেছে হয়তো জমি বাড়ী বিক্রয় করে। ফাঁদ তৈরী করেছিল, যাদের স্বচ্ছতার সাথে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করার কথা ছিল, সেটা না করে কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জন পকেটে পুরেছে। এভাবে নিযুক্তদের মধ্যে কারো কারো নিয়োগ বাতিল হয়েছে। কেউ শাস্তি পেয়েছে বা হয়তো পাবে অথবা পাবেই না।

কিন্তু যাদের পকেটে ঢুকলো সেই কোটি কোটি টাকা, যাদের উপর ছিল স্বচ্ছতার ভার, যাদের মাছ পাহারা দেওয়ার কথা ছিল, তারাই মাছ খেয়ে পেট মোটা করে বসে আছে। কোর্ট চেষ্টা করলেও কতটা শাস্তি দিতে পারবেন তা সময়ই বলবে।

২০১১ সালের পর থেকে পরীক্ষা বছর বছর হয়নি। যদি এসএসসি তার আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতি বছর ১৫- ২০ হাজার নিয়োগ স্বচ্ছভাবে করত, তাহলে আজ আপনাদের অনেককেই সামান্য টিউশনের উপর নির্ভর করতে হত না। অনেকেই স্কুল শিক্ষক হতে পারতেন।

ভাবুন প্লীজ একটু —

কিন্তু সেই পথের যারা প্রতিবন্ধক, যারা আপনাদের এইরকম নিদারুন খারাপ অবস্থার মধ্যে ফেলল, আজ তাদের কাছেই সামান্য টিউশন পড়ানেোর জন্য আবেদন করতে হচ্ছে/করছেন। তারা সুযোগ বুঝে ত্রাতা সেজেছেন/সাজছেন।
আসল শত্রু আড়ালে থেকে যাচ্ছে। আপনারা স্কুল শিক্ষকের টিউশন পড়ানো দেখে ভাবছেন যে স্কুলের শিক্ষককুল আপনাদের শত্রু। তা মোটেই নয়। তাই গভীরে ভাবার সনির্বন্ধ অনুরোধ আপনাদের।

ভুল হচ্ছে কোথাও আপনাদের। চাকরীর দাবী করুন। স্বচ্ছভাবে নিয়োগের দাবী করুন। যাদের যোগ্যতা আছে তারা কেন গৃহ শিক্ষকতার উপর নির্ভর করবেন। শিক্ষকতা করার অধিকারের পক্ষে দাবী তুলুন। সমস্ত শূণ্যপদে নিয়োগের দাবী তুলুন। চপ ভাজা বা কাশ ফুল নিয়ে ব্যবসা করার নিদানের মধ্যে যে বিদ্রুপটা আছে তার প্রতিবাদ করুন।

কয়েক লক্ষ পদ খালি, সব দপ্তর মিলে। সে দাবী কেন তুলছেন না? তুলবেন না!

আপনারা অনেকেই ছাত্রতুল্য বা বন্ধুবৎ। সুতরাং প্রিয়। সরকার এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে পরিকল্পনা করে। জল মেপেছে এর আগে বিভিন্ন শিল্পের কথা বলে, যা এখনও এই বাংলায় এসে পৌঁছায়নি। শিক্ষিত বেকারদের নিদান দিয়েছেন চপ ভাজার কথা বলে। কখনও কাশ ফুলের ব্যবসা করার কথা বলে। আসলে বিদ্রুপটাও করতে চেয়েছেন। তখনও রাজ্য জুড়ে বেকাররা প্রতিবাদ করেনি। তারাও হয়তো আস্তে আস্তে ভাবতে শুরু করেছে যে সত্যিই ওগুলোকেও হয়ত ভাবা যায় ব্যবসা হিসাবে। কাজ হিসাবে। চাকরীর বিকল্প হিসাবে। রাজ্যের প্রধানের এ হেন বক্তব্য শুনে তাই চুপ থেকেছে অনেকেই। মাঠে তাই নামেনি লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার ভাই বোনেরা। সারা রাজ্যে যখন অনাচার চলেছে তখনও তরুন তাজা তুর্কী ভাই বোনেরা “রা” কাড়েনি। এই পরিস্থিতি, পরিবেশ তৈরী করেছে শাসক ধীরে ধীরে। পরিকল্পনা করেই তৈরী করেছে – এইরকম সর্বনাশ । তাই শিক্ষক নিয়োগ সহ অন্য ক্ষেত্রের নিয়োগে পাহাড় প্রমান দুর্নীতি হলেও এরা নিজেদের তার আঁচ থেকে সরিয়ে রেখে ভেবেছে যে, এটা বোধহয় যারা পায়নি কেবল তাদের সমস্যা।

তাই পাস করা মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরাও নিজেদের যোগ্যতা ও ক্ষমতা সম্পর্কেও ভুলতে বসেছে। ভুলে গেছে। বাঘ যাদের হওয়ার কথা তারা মার্জার বনে গেছে কোন এক যাদুকরের ছলনায়। তাই তারা ভাবেন যে টিউশনটা বোধহয় একটা চাকরীর বিকল্প বা আসলে চাকরীই। নাকের বদলে নরুনের মত। নরুন নিয়ে ঝগড়া করছেন এদিকে যে নাকটাই কাটা হচ্ছে/হয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই।

তাই বলি শিক্ষিত বেকার ভাইবোনদের প্রতি একান্ত আবেদন, আপনারা নিজেদের প্রাপ্যটা দাবী করুন সরকারের কাছে। বাধ্য করুন সরকারকে আজে বাজে টাকা নষ্ট করা বন্ধ করে, করের টাকাটা খেলা মেলা ও প্রমোদ ভ্রমনে (প্রশাসনিক বৈঠকের নামে নাটকে) খরচ না করে আপনাদের কখা ভাবুক।

কর্মসংস্থানে জোর দিক। নাহলে বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিন নিজেদের স্বার্থে। সমাজের স্বার্থে। এটা আপনাদের অধিকার, কোন দান দক্ষিণা বা দয়া ভিক্ষা করে নয়।

সবাই ভাল থাকবেন।

ইতি
শিক্ষিত বেকার ভাইবোনদের প্রতি সহমর্মী একজন মাষ্টারমশাই

রাইজ অফ ভয়েসেসের কিছু কথা

রাইস অফ ভয়েসেসে শরিফুল হকের লেখায় তোলা প্রশ্নগুলো ও তাকে ঘিরে যে ভিন্নমতের কলরব উঠেছে, তা প্রমাণ করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা সংক্রান্ত পেশা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহল উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগ তিলে তিলে তৈরি করা হয়েছে। পূর্বতন শাসকের আমলে তৈরি করে গুছিয়ে রাখা একটা ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিবছর নিয়ম করে এসএসসি টেট আয়োজন করা হত ও নিয়মিত নিয়োগ হত, তাকে একেবারে ধ্বংস করা হয়েছে। তার ফলে এখন শিক্ষক পদপ্রার্থীরা গভীর হতাশায়। আচ্ছা, কোন ক্ষেত্রে হতাশা তৈরি হয়নি বর্তমান শাসকের আমলে? সম্ভবত রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় শুধু। আর এটাই এখানে বোঝার যে বর্তমান শাসক ঠিক কি দৃষ্টিভঙ্গি রাখে সম্পদ বিষয়ে।

সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা ও স্যাঙাততন্ত্রের মেলবন্ধন ঘটেছে বর্তমান কার্যকলাপে। জমির মত ট্রাডিশনাল সম্পদ বর্তমান শাসকের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, মানবসম্পদের তুলনায়। বস্তুতঃ মানবসম্পদ বর্তমান শাসকের কাছে মূল্যহীন। নতুন সম্পদ তৈরির থেকে, যা আছে তা ভেঙেচুরে বেচে তাৎক্ষণিক লাভ একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকেই আসে মেট্রো ডেয়ারি অতি স্বল্পমূল্যে বেচে দেয়া বা পূর্বতন সরকারের তৈরি স্কুলবাড়িগুলো রিপেয়ার করে বা প্লাস্টার করে নতুন তৈরি বলে দেখানো ও পয়সা লোটা। আসে একের পর এক হাসপাতাল বিল্ডিং তৈরি করে ফেলে রাখা। যাতে হাসপাতালের নামে প্রমোটারকে আয় দেওয়া যায়। আসে দুর্গম জায়গায় কিষানমন্ডি তৈরি করা, যাতে চাষী ফড়েকেই ফসল বেচতে বাধ্য হয়। মোটমাট যাতে করে নানা সিন্ডিকেট মারফৎ প্রশাসনের উচ্চতলায় কমিশনভিত্তিক বিপুল আয়প্রবাহ অক্ষুন্ন থাকে। বেড়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গে কাজ না পেয়ে বিপুল সংখ্যক হোয়াইট কলার ও ব্লু কলার শ্রমিকের ভিনরাজ্যে পরিযান, এই সরকার কে বিচলিত করতে পারে না, কেননা মানব সম্পদ সৃষ্টি করা বা ধরে রাখা বর্তমান শাসকের আগ্রহের বিষয় নয়।

একই কথা শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার বিষয়ে। এটাও স্রেফ শাসকের কাছে অবৈধ উপায়ে আয়ের একটা ক্ষেত্র। উপরন্তু, ভেবে দেখুন, গত দশ-এগারো বছরে নিয়মিত পরীক্ষা ও স্বচ্ছ নিয়োগ হলে স্থায়ী চাকরি পেয়ে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত সচেতন নাগরিকের একটা বড় গোষ্ঠী তৈরি হতো। যাদের পক্ষে সমাজের লুম্পেন শ্রেণীকে কাছে পাশে নিয়ে চলা শাসককে মেনে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। মানুষ স্থিতিশীলতা পেলে নাগরিক অধিকার মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়, দুর্নীতির প্রতিবাদ করে অকুতোভয়ে। তারা শাসকের কাছে হিসেব চায়। অপরপক্ষে নিরাপত্তাহীন নির্দিষ্ট কাজহীন বা অত্যন্ত স্বল্প আয় ও সরকারি অনুদান নির্ভর একটি সমাজে প্রতিবাদের কন্ঠ চিঁচিঁ করবে। বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবাদ হলেও তা দানা বাঁধবে না। মানুষ মেরুদন্ড সোজা করতে ভুলে যাবে। শত্রু হিসেবে দাগিয়ে দেবে আশেপাশে পাওয়া যে কাউকে, ভুল জায়গায় তার আক্রোশ বের করবে। তার আক্রমণ থেকে দাবি, সবেতেই থাকবে অসংবদ্ধতা, অবিবেচনা। যার একটা প্রকাশ উপরোক্ত বিতর্কেও দেখা গেল। রাইস অফ ভয়েস মনে করে বিতর্কের দুপ্রান্তেই কিছু ন্যায্য যুক্তি উঠে এসেছে। আর উঠে আসবে নাই বা কেন। এখানে যুযুধান দুপক্ষ তো একই পক্ষ। স্বার্থও এক। শুধু পরিস্থিতি এমন খাড়া করা হয়েছে যাতে এরা নিজেদের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যায় ও মাথার ওপর চক্রপাক খাওয়া শকুনের প্রতি দৃকপাত না করে।

রাইস অফ ভয়েস আশা করে শিক্ষিত সচেতন নাগরিকরা যারা পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন, এখানে ও অন্যত্র নানা বিতর্কে অংশগ্রহণ করছেন তারা সংগঠিতভাবে প্রতিকারের উদ্যোগ করলে দশকব্যাপী ছেয়ে থাকা এ অন্ধকারে আলো জ্বলে উঠতে পারে। তা অনেক আলেয়ার একত্রিত আলো হলেও চলবে। পথ তো দেখা যাবে!