প্রাইভেট টিউশনই কর্মসংস্থান / Private Tution

শিক্ষক টিউশন করবেন কিনা, সে তো অনেক পরের কথা। ভেবে অবাক হই, একটি রাজ্যে শিক্ষিত বেকাররা নিজেদের প্রাইভেট টিউটর নাম দিয়ে সংগঠন গড়েছে। শুধু তাই নয়, টিউশন যাতে শিক্ষকরা না পড়াতে পারে, যাতে তারাই শুধু পড়াতে পারে, তার জন্য মামলাও করে ফেলেছে। দাবী খানিকটা এই রকম, “চাকরি নয়, টিউশন চাই”। শিরদাঁড়া ভাঙতে ভাঙতে একেবারে শেষ না হয়ে গেলে কলেজ-ইউনিভার্সিটি পাস করে কেউ টিউশনের দাবী করে?

টিউশন আসলে পড়ানোর দরকারই হত না, যদি সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো যথাযথ থাকত। সেটা অনেকেই ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও, ইতিমধ্যে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষিত বেকাররা টিউশনের দাবীতে মামলা করে ফেলেছেন!

শাসক স্রেফ সুযোগটা নিয়েছে। শিক্ষকদের টিউশনি করা বন্ধ করে দিলেই যদি একটা ব্যাপক অংশের শিক্ষিত যুবক যুবতী “বাহ্ বাহ্, শাসক একটা দারুণ কাজ করেছে” বলে উল্লাস করে, তাহলে তো শাসকের বেশ সুবিধা। প্রাইভেট টিউশনিকেই কর্মসংস্থান বলে বেমালুম চালিয়ে দেওয়া যাবে। বেকারদের যোগ্যতানুযায়ী কাজের সংস্থান করার বদলে, চপ-সিঙাড়ার দোকান খুলতে বলছে যারা, তাদের কাছে তো এটা একেবারে মোক্ষম সুযোগ। একেবারে জয়নগরের মোয়া। শিক্ষকরা টিউশন বন্ধ করল, তাতেই এই বেকারদের সমস্যা মিটে যাবে? সার্কুলার যখন হয়েছে, মামলাও যখন আদালতে, তখন কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে টিউশনও করবে? কিন্তু এতেই এই বেকারদের সমস্যার সমাধান? মানে এটাই সমাধান? মানে এর জন্যই কলেজ, ইউনিভার্সিটি, বিএ, বিএসসি, এমএ, এমএসসি, বিএড, ডিএলএড? বাহ, চমৎকার!

আচ্ছা, এই যে যারা প্রাইভেট টিউটর নাম নিয়ে আন্দোলন করছে, মামলা করছে, সংগঠনও করে ফেলেছে, এরা, মানে এই সংগঠন কি চাকরি দুর্নীতি নিয়ে কোনো মামলা করেছে? আন্দোলন করেছে? না। করবেও না। শিরদাঁড়া ভেঙে চৌচির হয়ে যাওয়া হতাশ যুবক যুবতীরা আর ওই চাকরি বা যোগ্যতানুযায়ী কাজের কথা কি ভাবেন না! তাই কি ভাবনার সবচেয়ে উত্তর, লক্ষ্য এখন টিউশন।

এখনো শিক্ষকদের টিউশন করা উচিত না অনুচিত এই তর্কে পড়ে থাকবো আমরা? ভাবব না, এটা আদৌ টিউশনের গল্প, নাকি সামাজিক মেরুদণ্ডের ভেঙে যাওয়ার শব্দ? আজ না ভাবলে, কবে?