ফারাক্কায় ফাটাফাটি / The Farakka Files

শিল্পের জন্য জমি নিতে গেলেই টানা ২৬ দিন মঞ্চ বেঁধে অনশন করে পাওয়া যে কয়েকটি অধিকার আমাদের মাথায় রাখতে হয়, তা হল :

  • ইচ্ছুক চাষি এবং অনিচ্ছুক চাষির ইচ্ছে অনিচ্ছেকে মান্যতা দিতে হবে
  • জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে সরকার-প্রশাসন শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে না।
  • শিল্পের জন্য জমির দরকার পড়লে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরাসরি জমি মালিকদের সাথে কথা বলে দরদাম করে তাদের থেকে জমি নিতে হবে। সরকার বা প্রশাসন এব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করবে না।

কিন্তু এই মুহুর্তে সেই ঐতিহাসিক অনশন করা সরকারই তাদের নিজেদের তৈরি নিয়ম-কানুনগুলো জলাঞ্জলী দিচ্ছে আপনার আমার নাকের ডগায়, কিন্তু আমি আপনি জানতে পারছি না। কারণ বাংলার সংবাদমাধ্যম আপাতত “পজিটিভিটি” খুঁজতে ব্যস্ত। আর তাই রাইজ অফ ভয়েসেস এর মত এক অজ্ঞাত কুলশীল প্ল্যাটফর্মকে খবর খুঁজে আপনাদেরকে দিতে হচ্ছে। তাও আবার যে সে খবর নয়, এখবর হল যাকে বলে আন্তঃরাজ্য কাম আন্তর্দেশীয় খবর। যেখানে ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং সুদূর অস্ট্রেলিয়া এক সুতোয় বাঁধা। কাজেই যথেষ্ট স্পর্শকাতর সুতো। এজন্যেই আমাদের রাজ্য ও দেশের সংবাদমাধ্যম সে সুতো ধরে টান মারতে ভীত! কারণ তাদের বেশির ভাগেরই আবার টিকি বাঁধা আছে এই টানটান করে বাঁধা সুতোর দুপ্রান্তের লোকজনের সাথে। কাজেই সব্বাই চুপ!

তা কি সেই খবর!

হঠাৎই আমরা জানতে পারলাম মুর্শিদাবাদের ফারাক্কার দাদনটোলা গ্রামে নাকি শিল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে (পরে জানলাম বিদ্যুতের হাই-টেনশন ট্রান্সমিশন লাইন টানা নিয়ে) পুলিশ আর গ্রামবাসীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ চলছে। এমনকি ভিডিও ক্লিপিংসও পেলাম তার! দেখলাম শুধু উর্দিধারী পুলিশ নয়, সঙ্গে র‍্যাফও রয়েছে! কিন্তু আমরা তো জানি সরকার প্রশাসন শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে মধ্যস্থতা করতে পারবে না। তাহলে পুলিশ-র‍্যাফ কি করছে! আর কিসের শিল্প! কোন শিল্পপতি এলেন পশ্চিমবঙ্গে শিল্প করতে! তাই স্বভাবতই আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যেই খোঁজ খবর লাগালাম! আর তাতে যা সামনে এল তাকে যাকে বলে “কেঁচো খুঁড়তে কেউটে”! মানে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় যা হচ্ছে এই মুহুর্তে তা তেমন কিছুই নয়, ঐ যাকে বলে টিপ অফ দ্য আইসবার্গ, তাই! এটি একটি বৃহৎ শিল্প প্রকল্পের ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। আসল প্রকল্পটির, যাকে বলে মাদার প্রজেক্ট, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগা-পাশ-তলা জুড়ে শুধুই বিতর্ক।

আসল প্রকল্পটি হল আদানী শিল্পগোষ্ঠীর ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

না! আমাদের আদানি-আম্বানি-টাটা-বিড়লা কারোর সাথে কোন শত্রুতা নেই। বরং আমরা চাই শিল্প হোক। কিন্তু সেসব যথাযথ ভাবে নিয়ম মেনে হোক এটাই চাই শুধু!

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা ব্লকের চারটি গ্রাম, মোতিয়া, পাটোয়া, গাঙটা ও নয়াবাদ এবং পরেয়াহাট ব্লকের পাঁচটি গ্রাম, সন্ডিহা, পেটবি, গায়ঘাট, মালি আর রাঙ্গানিয়া নিয়ে হচ্ছে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমাদের কাছে যা খবর, সেখানে ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। মানে আমাদের রাজ্যে যেমন গাঁজা কেস দেওয়া হয়, কেন্দ্রীয় সরকার যেমন প্রতিবাদীদের ইউএপিএ বা দেশদ্রোহিতার মামলা দেয়, সেরকম আর কি! কিভাবে বিতর্কিত পদ্ধতিতে জমি হাতানো হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য বিশদে জানতে তথ্যসূত্রে লিঙ্ক দেওয়া আছে পড়ে নিন। আর যাদের জমি এভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন মূলতঃ আদিবাসী। তাদের জীবিকা যে জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল তাও দেদার কেটে সাফ করা হয়েছে এবং হবে এই প্রকল্পের জন্য। এখন এটুকু পড়ে যে কাগজ ও সংবাদ মাধ্যম “দ্রৌপদী মুর্মু” কে সামনে রেখে আপানাদেরকে মাস্টারস্ট্রোক গেলালো, তারা এমন আদিবাসী নির্যাতনের খবর খুঁজে আপনাদের সামনে আনল না কেন আপনারা জানতে চাইতেই পারেন! তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই ওপরের “টিকি বাঁধা” ধানাই-পানাইয়ের অবতারণা।

একই সঙ্গে আমরা এও জানাচ্ছি দ্রৌপদী মুর্মুদেরকে সামনে আনা অনেকটা কালাধন রুখতে পাঁচশ ও হাজার টাকার নোট ব্যান করে দু হাজার টাকার নোট ছাপানোর মত ছল-চাতুড়ি! ঠিক যেমন নোটবন্দির মাধ্যমে দু হাজার টাকার নোটের ডিনমিনেশন বড় হওয়ায় কালোটাকার কাঁচাটাকার লেনদেন অনেক সহজ করে দেওয়া হয়েছিল ঠিক তেমনই আদিবাসী রমণীর রাষ্ট্রপতি ভবন প্রবেশকে শো-কেস করে সারা দেশজুড়ে আদিবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকার কেড়ে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে পাপ করা হচ্ছে তা ঢাকবার বন্দোব্যস্ত হচ্ছে। তা যাইহোক, আমরা আপাতত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে থাকি। যদ্দুর জানতে পারছি জোড়কদমে চলা এই গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজও প্রায় অনেকটা হয়ে এসেছে। শোনা যাচ্ছে আগামী অক্টোবরে আংশিক বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হয়ে যাবে।

এবার জেনে নেওয়া যাক এই প্রকল্পের জন্য কয়লার যোগান আসছে কোথাথেকে! আপনারা জানলে অবাক হবেন, কয়লা আসবে সুদূর অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে প্রভিন্সের সেই কুখ্যাত Carmichael Coal Project থেকে। এটি হল সেই কয়লাখনি ক্ষেত্র যাকে নিয়ে খোদ অস্ট্রেলিয়ায় পরিবেশ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে এটি। আবার এই প্রকল্পের জন্যই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মানে আমাদের SBI আদানী গ্রুপকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করে বসেছিল। পরে অবশ্য বিতর্কে জড়িয়ে পিছিয়ে আসে। কারণ ফরাসী বিনিয়োগকারী সংস্থা আমুণ্ডি ও অ্যাক্সা ব্যাঙ্কের পরিবেশ বান্ধব ভাবমুর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে SBI থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। তা যাইহোক, দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর ধরে টাল-বাহানার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আদানি গ্রুপ এই কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে যায়। কিভাবে কোন হস্তক্ষেপে এসব অনুমতি জোটানো হয় তার অনেকটাই সামনে এসেছে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার সরকারী বিদ্যুৎ সংস্থার এক কর্তার বয়ানে। তাই আমরা এসবের মধ্যে ঢুকতে চাইছি না। সেসব অনেক বড় ব্যাপার-স্যাপার। আমাদের হাত এতটা লম্বা নয়। আপাতত আমরা যা জানি তা হল সমুদ্রপথে এই কয়লাখনির কয়লা ভারতে এসে পৌঁছাবে উড়িষ্যার ধমরা পোর্টে। ২০১৪ সালের জুন মাসে আচ্ছে দিনের সূচনা লগ্নেই আদানী গ্রুপ কিনে নেয় এই পোর্টটি। তারপর সেখান থেকে সড়ক পথে সেই কয়লা যাবে গোড্ডাতে।

এবার আসা যাক আসল প্রশ্নে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়! কিনছে কে! এই বিদ্যুৎ যাচ্ছে বাংলাদেশে। আর তারজন্য চাই হাই টেনশন ট্রান্সমিশন লাইন। গোড্ডা থেকে পাকুড় হয়ে, মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার বল্লালপুর, সামসপুর, ভোলাকান্দি, দাদনটোলা ও ইমামনগর হয়ে পদ্মার উপর দিয়ে বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ-রাজশাহি হয়ে বিদ্যুৎ-এর লাইন পৌঁছবে রংপুর পাওয়ার গ্রিডে। ফরাক্কার ৫-৭ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দের বিরোধ বেধেছে। চার লক্ষ ভোল্টেজের হাইটেশন বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই বিরোধ। সেই লাইন যাচ্ছে আম বাগান-লিচু বাগান ভেদ করে। এখন টাওয়ার বসানোর জন্য ও হাই টেনশন তার নিয়ে যাওয়ার জন্য জমির মালিকের অনুমতি প্রয়োজন। এমনকি জমির মালিক ক্ষতিপূরণেরও হকদার। আর সেই অনুমতি আদায় করতেই চলছে জোর-জুলুম।

গ্রামবাসীদের দাবি বহু ফসলি জমি এবং আম-লিচুর বাগানের ওপর দিয়ে হাইটেনশন তার নিয়ে যাওয়া যাবে না। অন্য ফাঁকা জমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। তাতে গ্রামবাসীদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বা আদানি গ্রুপ তা শুনতে নারাজ। পুলিশ-র‍্যাফ নামিয়ে চলছে গ্রামবাসীদের দমন-পীড়ন। এ পুলিশ হল তেনার পুলিশ যিনি সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক ৪০০ একর চাষির কথা ভেবে ২৬ দিনের ঐতিহাসিক অনশন করেছিলেন! কিন্তু এই মুহুর্তে তেনার ডিক্সনারিতে আর “অনিচ্ছুক” শব্দবন্ধ নেই। তিনি ও তাঁর প্রশাসন বেসরকারী শিল্পপতিদের হয়ে প্রকাশ্যে জমি নিতে নেমেছেন। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করছেন। এসবই জমি অধিগ্রহণ আইনের যে স্পিরিট তার বিরোধী।

আর যাঁরা সিএএ/এনআরসি’র বিরোধিতা করলে কথায় কথায় “কাংলাদেশী” বলে গাল পাড়েন সেই তাঁরা তাঁদেরই এক গুজরাটি বন্ধু সেই “কাংলাদেশে” বিদ্যুৎ বেচে পয়সা কামাতে গিয়ে গরীব চাষাভুষোকে মাননীয়ার পুলিশ দিয়ে পেটাচ্ছেন, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিচ্ছেন এমন খবরটা মিস করে গেলেন কি করে! এই মিস কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! নাকি বন্ধু মানুষের প্রকল্প তাই আদিবাসীদের ব্যবহৃত জমি-জঙ্গল নিয়ে নেওয়া যায়, মাননীয়াকে বলে পুলিশ লেলিয়ে গরীব চাষিদের জমি-জমা বাগান ভেদ করে ওপর দিয়ে হাইটেনশন লাইন টেনে নিয়ে যাওয়া যায়! এমন সনাতনী “ডবল স্ট্যান্ডার্ড” কেই বোধহয় মাস্টারস্ট্রোক বলে!

মাঝেমধ্যে আমাদের মনে হয় নতুন জমি অধিগ্রহণ আইনটি আদতে সিঙ্গুর/নন্দীগ্রামে শিল্প স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা তৈরির এক অযাচিত-অবাঞ্ছিত সন্তান। তাই সেই আইনের স্পিরিটটা পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকারের পতন হতেই বেমালুম উবে গেছে, ভারতের কোথাওই আর কেউ মানছেন না। এই আইনটির জন্মই হয়েছিল সিঙ্গুর / নন্দীগ্রাম থেকে শিল্প তাড়াতে! বাংলার সর্বনাশ করতে।

আমরা রাইজ অফ ভয়েসেস শিল্প স্থাপনের পক্ষে। কিন্তু পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণেরও পক্ষে। কারণ তবেই একমাত্র একলপ্তে বিপুল পরিমাণ জমি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব। অনিচ্ছুকদের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শিল্পের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর কাজটা সবথেকে ভালো ভাবে সরকারই করতে পারেন। কোন বেসরকারি সংস্থার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। তাদেরকে একাজ করতে দিলেই টাকা পয়সা খাইয়ে স্থানীয় উর্দিপরা সরকারী লেঠেল বাহিনী আর ভাড়াটে গুণ্ডাবাহিনীর যুগপৎ সক্রিয়তায় জমি হাতানোর চেষ্টা হবে। অনেকে হয়তো পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণটুকুও পাবেন না। শাসক ঘনিষ্ঠ দালালরাজ মাঝখান থেকে ক্ষীর খেয়ে যাবে।

ফারাক্কায় গত শনিবার মানে জুলাই মাসের ২ তারিখ স্থানীয় বিডিওর উপস্থিতিতে লোকাল থানার আইসির নেতৃত্বে আদানির হয়ে জমি অধিগ্রহনে রাজ্য পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফের যে দাপাদাপি এবং সক্রিয়তা নজরে এল তার সাথে টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়া পুলিশ কিম্বা ভোটের দিন ডিউটি ফেলে বুথ সন্নিহিত পার্কের দোলনায় দোল খাওয়া পুলিশকে মেলানো কঠিন !

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস

তথ্যসূত্র
a) https://timesofindia.indiatimes.com/city/ranchi/adani-plant-in-godda-to-be-partly-functional-by-october/articleshow/92117529.cms
b) https://www.ndtv.com/business/sbi-gets-bond-warning-from-frances-amundi-over-coal-mine-report-2331460
c) https://www.cnbctv18.com/finance/amundi-gives-bond-warning-to-state-bank-of-india-over-coal-mine-7593201.htm
d) https://www.downtoearth.org.in/news/environment/upcoming-adani-plant-in-jharkhand-to-sell-power-to-bangladesh-will-make-its-economy-suffer-report-83191
e) https://www.groundxero.in/2022/07/02/godda-to-farrakka-adani-modi-mamata-nexus-a-destructive-project-to-loot-land/?fbclid=IwAR2AqY84TyOyc4XTAQQgW9xzgucFlgOeUaw-4JadkMrojkXCuCrUGOBK8lA
f) https://www.thehindubusinessline.com/companies/adani-gets-final-nod-for-long-delayed-australian-coal-mine/article27895374.ece

g) https://www.business-standard.com/article/companies/sbi-drags-feet-on-loan-to-adani-firm-for-controversial-australian-coal-mine-121040900149_1.html
h) https://www.fortuneindia.com/enterprise/sbi-loan-to-adanis-australia-coal-project-stuck/105677