নেতাজি কাকে স্যালুট করছেন? / Netaji Saluting Whom?

দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে ২৩শে জানুয়ারি উদ্বোধন হওয়া নেতাজী সুভাষের মূর্তি কাকে স্যালুট করছেন !

এই প্রশ্ন নিয়ে বিরাট অংশের মানুষ চিন্তিত। কেউ লম্বা লম্বা ফেসবুক পোষ্ট করছেন, কেউ প্রবন্ধ লিখছেন, কেউ আবার ইউটিউবে ভিডিও বানাচ্ছেন। এটা ঠিক যে নেতাজীকে নিয়ে দেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের দুর্বলতা আছে।

কিন্তু ভেবে দেখুন, আজ স্বাধীনতা লাভের পর ৭৫ বছর পেরোতে চলা ১৩০ কোটি মানুষের দেশের এটা কোন আলাপ-আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে !

তাও আবার যখন আমরা জানতে পারছি, এই বিশ্বজোড়া মহামারীর মধ্যে আমাদের দেশের ৮৪ % গৃহস্থের আয় কমে গেছে বা যখন সামনে আসছে মহামারীর প্রথম বছরেই নতুন করে আরও ৪.৬ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেছেন! আমরা কি জানছি, যে এই মুহুর্তে দেশের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ ১৫ % গিয়ে পৌঁছেছে বা অতিমারির মধ্যে দেশের দুই তৃতীয়াংশ মহিলা রুটি-রুজি হারিয়েছেন যা কাজ হারানো জনসংখ্যার ২৮%! আপনি কি জানেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে কেন্দ্রীয় বাজেটের মাত্র ০.৬ % বরাদ্দ হচ্ছে! দেশের ৫০% মানুষ দেশের জাতীয় সম্পদের মাত্র ৬% ভোগ করেন! শিক্ষা বা স্বাস্থ্যর মত বুনিয়াদি পরিষেবা গুলো যত বেসরকারি হাতে যাচ্ছে তত সেগুলো জন সাধারণের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে এব্যাপারেও কি আমরা অবগত আছি বা আদৌ কি চিন্তিত!

না। আমরা চিন্তিত নই! বরং আমরা জানতে বেশি ব্যস্ত ইন্ডিয়া গেটে সুভাষ কাকে স্যালুট দিচ্ছে! কারণ এটাই সরকার বা তার পোষ্য সংবাদ মাধ্যম আমাকে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করছে! আজ নেতাজী সুভাষ কাকে স্যালুট দিচ্ছেন, কাল মন্ত্রী সুভাষ রবি ঠাকুরকে কালো বলছেন, পরশু ঋষি অরবিন্দ ফাঁসিতে ঝুলছেন, তারপরদিন গৃহবধূ রাজমিস্ত্রির সাথে পালাচ্ছেন অথবা “চাণক্য” রায়ের সোডিয়াম-পটাসিয়াম ওঠানামা করছে কিম্বা কোন হনু লটারি জিতছে ইত্যাদি হাবিজাবি বিষয় এখন ব্রেকিং নিউজ! আর সেগুলো নিয়েই আমরা নেচে নেচে জিভ বার করে হাঁপাচ্ছি।

গ্রামের কৃষকের ফসলের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা কোন ইস্যু না। সারের দেদার কালবাজারি চলছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পুরো সারের ভর্তুকিটাই কালোবাজারিরা পকেটস্থ করছে, তাও কোন ইস্যু না। গ্রামের ৩৭% শিশু এবং শহরের ১৯% বাচ্চা এই লকডাউনে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় লেখাপড়ার সাথে তাদের সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়েছে, কোন ইস্যু না। এমনকি হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা দিনের পর দিন জলের তলায় থাকলেও সেটা ইস্যু হয় না, দুর্গাপুরের ব্যারেজ জলশূন্য হয়ে যাওয়া কোন ইস্যু হয় না, কলেজ লাইব্রেরির মধ্যে কলেজ ছাত্রীকে বা পিকনিক ফেরৎ গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনাও কোন ইস্যু হয় না।

আসলে আমরা বোধহয় বহুদিন হল প্রকৃত সমস্যা বা ইস্যুগুলো নিয়ে ভাবতে ভুলে গেছি! তা নাহলে ফাঁকা ঘরে ফ্যান চালিয়ে চলে যাওয়ার সময়, যে কয়লা খনির শ্রমিকের উত্তোলিত কয়লা পুড়িয়ে পাওয়া বিদ্যুৎ থেকে আপনার আমার ঘরের আলো জ্বলছে-পাখা চলছে তার কথা ভাবতাম! যে চাষী ফসলের দাম না পেয়ে ফলিডল খেতে বাধ্য হন, গরম ভাতের থালার সামনে বসে তার কথাও মনে আসত ! অবশ্য বাইরের লোকের কথা কি বলছি, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে করতে নিজের স্কুল না যাওয়া ঘরবন্দি বাচ্চাটার কথা ও কি ভেবেছি আমরা! বুঝতে পারছি কি যে আমাদের বাচ্চাগুলোর আজ কোন বন্ধু নেই! সে শিখতে পারছে না কিভাবে পাঁচজনে মিলেমিশে বাঁচতে হয়! আজ আমার বাচ্চা অনলাইনে ক্লাস করবে আর আমার বাড়ির কাজের লোকের বাচ্চা স্কুল না যেতে পেরে মায়ের আঁচল ধরে আমার বাড়িতে বাসন ধোবে এটাই কি চেয়েছিলেন নেতাজী ? আমার ঘরে রান্না হবে, আর অন্নদাতারা ফসলের দাম না পেয়ে ফলিডল খাবে এর জন্যেই কি উনি আইসিএস এর লোভনীয় চাকরি ছেড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন ?

নেতাজী স্যালুট জানাতে পারেন এমন আদর্শ দেশবাসী আমরা কি হতে পেরেছি! এভাবে চললে কোনদিন কি হতে পারব!

কাজেই অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খুঁজে লাভ নেই!
নিজেদের মধ্যেকার ভিজে বেড়ালটাকে মারুন আগে!

জয় হিন্দ।