ক্যাপ্টেনের ব্রিগেডে ব্রিগেডিয়ার সেলিম / The Brigade Diary

শনিবার থেকেই ক্রমাগত চাপ আসছিল। বামেদের রবিবারের ব্রিগেডের ওপর প্রতিবেদন চাই। বলাই বাহুল্য, যারা অনুরোধ করছিলেন তাদের বেশিরভাগই বাম কর্মী সমর্থক। তবে সংখ্যায় অল্প হলেও তাদের মধ্যে সেভাবে ‘পার্টি-পলিটিক্স’ না করা কিছু সাধারণ মানুষও ছিলেন। কিন্তু তাদের সবারই একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলো নাকি সেভাবে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ কভার করবে না, বা দেখাবে না। এখন ‘শূন্য’ বামেদের ব্রিগেড ভরবে কি ভরবে না তা নিয়ে আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের কোনদিন কোন মাথাব্যাথা ছিল না। কিন্তু জনসাধারণের, তারা ‘বাম মনস্ক’ হলেও তো সাধারণ জনতাই, মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমের ওপর তাদের এই সার্বিক অনাস্থাটা আমাদের রাইজ অফ ভয়েসেসের কাছে যথেষ্টই উদ্বেগের। আর সেই উদ্বেগ থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই বামেদের রবিবারের ব্রিগেডের ওপর একটা প্রতিবেদন লেখা হবে।

আর তাই আজ সকাল এগারোটা থেকে আমরা চোখ রেখেছিলাম টিভির পর্দায়, বিভিন্ন খবরের চ্যানেলেগুলোতে। আমাদের কয়েকজন প্রতিনিধিও হাজির ছিলেন ব্রিগেডের মাঠে। প্রথমেই জানিয়ে দিই, মূলস্রোতের প্রায় সবকটা জনপ্রিয় বাংলা খবরের চ্যানেলই, হাতেগোনা দু-একটা ছাড়া, সারাদিন ধরে চোখ রেখেছিল ব্রিগেডে। এমনকি সন্ধ্যেবেলা চ্যানেলে চ্যানেলে যে আলোচনা বিতর্ক হচ্ছে তার অনেকগুলোই আজকে বামেদের ব্রিগেড সভা কেন্দ্রিক। কাজেই সংবাদমাধ্যম বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ কভার করবে না এমন আশঙ্কাটা কিছুটা হলেও বঙ্গ মিডিয়া ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে। যেটা খুবই ইতিবাচক।

এবার আসি প্রতিবেদনে – ‘ক্যাপ্টেনের ব্রিগেডে ব্রিগেডিয়ার সেলিম’। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাটা দুপুর যে ব্রিগেডের সভা আমরা দেখলাম তার নির্যাস এটাই। কত জনসমাগম হয়েছিল, তা ব্রিগেডের আকাশে বামেদের পক্ষ থেকে ড্রোন উড়িয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারের ব্রিগেডের মঞ্চ অন্যবার মাঠের যেখানে হয়, এবার হয়েছিল তার উল্টোদিকে। ফলে অন্যবারের অভিজ্ঞতায় ভর করে হাজির জনতার একটা বড় অংশ এসে উপস্থিত হন মঞ্চের দুপাশে এবং পেছনে। ফলে মঞ্চের সামনা সামনি মাঠের পেছনের অংশটা প্রথমদিকে খালি ছিল। পরে কিছুটা ভরলেও মঞ্চের দুপাশে ও পেছনে হাজির হওয়া বিপুল জনতাকে আর মঞ্চের সামনাসামনি মাঠের পেছনে পাঠানো যায়নি। অবাঞ্ছিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাম স্বেচ্ছাসেবকরা সে চেষ্টাও করেননি। বরঞ্চ মঞ্চের ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ড্রোন উড়িয়ে বিপুল জনসমাগমের ছবি সংবাদমাধ্যমকে তুলে দিয়েছেন। মাঠ থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা যা জানিয়েছেন এবং যে ছবি তুলে পাঠিয়েছেন তাতে আমাদের মনে হয়েছে, ঐ যাকে রাজনৈতিক দলগুলো ‘জনজোয়ার’, ‘জনপ্লাবন’ বা ‘জনসমুদ্র’ বলে থাকে, তাই হয়েছে। এমনকি তৃণমূল-বিজেপির নেতারা বা সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকেও জনসমাগম হয়নি এমনটা কেউ বলেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিরোধী নেতাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ২৭ হাজার লোক হয়েছিল বলে ট্যুইট করে লোক হাসিয়েছেন।

এবার আসি বক্তাদের তালিকায়। অন্যবার বামেদের ব্রিগেডে সিপিআই(এম) সহ বামফ্রন্টের সমস্ত শরিক দলের রাজ্যের ও দেশের নেতাদের বলতে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। থাকেন পক্ককেশীরা। এঁদের অনেকেরই মেঠো জনতার ভাষা, তাদের আশা-আকাঙ্খা বা তারা কি শুনতে চায় সে সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট ধারণা থাকত না। ফলে সভা শুরু হওয়ার প্রথম আধঘন্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট উপস্থিত জনতাকে ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি নিয়ে চর্বিত-চর্বন সহ্য করতে হত। তাঁরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় থাকতেন জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। সেলিম-দেবলীনা হেমব্রমদের। কিন্তু এবারের ব্রিগেড বামফ্রন্ট ডাকেনি, ডেকেছে গণসংগঠণ ডিওয়াইএফআই। ডেকেছে ক্যাপ্টেন। কাজেই জনতাকে অতীতের মত ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়নি। ধ্রুবজ্যোতি সাহা-সৃজন ভট্টাচার্য -হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্যরা শুরু থেকেই চার-ছয় চালাতে শুরু করে দেন। জনতাকেও তাই প্রথম থেকে সভার সাথে একাত্ম হতে দেখা গেছে।

শুরুতেই ৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা বলতে উঠে আজকের সভার প্রথম বক্তা ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা যখন বলছেন ‘ডিওয়াইএফআই এর যখন জন্ম হয়েছিল তখন ভাইপো জন্মায়নি, ভাইপোর নবজোয়ার যাত্রায় হাজার হাজার পুলিশ থাকে, আমাদের ইনসাফ যাত্রায় থাকে লাখো জনতা, ভাইপোর যাত্রায় লোকে চোর চোর বলে জুতো ছোঁড়ে, আর আমাদের ইনসাফ যাত্রায় লোকে ছুঁড়েছে ফুল’ তখন মাঠে উপস্থিত জনতা উদ্বেল হয়ে ওঠে।

এরপর সামনে লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীকে বিঁধে বিজেপি আর তৃণমূল দুজনকেই এক বন্ধনীতে রেখে সমাবেশে প্রথম আক্রমণ শুরু করেন রাজ্য এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, তিনি বলেন ‘এক-দুই-তিন-চার / শান্তিনিকেতনে ডাকাত, শান্তিকুঞ্জে বাটপাড়’। জনতাও হাততালি দিয়ে জানিয়ে দেয় আজকের সমাবেশের এটা প্রথম ওভার বাউন্ডারি। আর বক্তৃতার শেষ পর্বে সলিল চোধুরীকে উদ্ধৃত করে তিনি জানিয়ে দেন ‘কার বাছার জোটেনি দুধ, এই ব্রিগেড তার। কার ঘরে জ্বলেনি দ্বীপ, চিরআঁধার, এই ব্রিগেড তার। ক্ষেতে কিষান, কলে মজুর, নওজোয়ান, এই ব্রিগেড তার। এই মিছিল, সবহারার সব পাওয়ার এই মিছিল, হও সামিল হও সামিল হও সামিল।’ মানে কবিতায় কবিতায় আজকের ব্রিগেডের সংজ্ঞাটা সুন্দর করে বাতলে দিলেন উপস্থিত জনতাকে।

ডিওয়াইএফআই এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য বলেন ‘যারা বলেছিল বামেদের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবে তারা এখন চুরি চিটিংবাজি করে জেলযাত্রা থেকে বাঁচতে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চিতে বেঞ্চিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ তিনি রাজ্যের কামদুনি ধর্ষনকান্ড ও গুজরাটের বিলকিস বানো ধর্ষনকান্ডে যথাক্রমে তৃণমূল ও বিজেপি দুই রাজ্য সরকারকেই আক্রমণ করে বুঝিয়ে দেন তিনিও সৃজনের দেখানো পথেই চলতে চান। তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলই মানুষের শত্রু, আর তাই তারা সিপিএমেরও শত্রু।

এবার আসা যাক ক্যাপ্টেনে। মীনাক্ষী মুখার্জ্জী এখন শুধু বাম জনতার না, আম জনতারও ক্যাপ্টেন। ইনসাফ যাত্রাই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিল। ভাষণের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা হতেই তুমুল করতালিতে ফেটে পড়লো মাঠ। জনতা জানিয়ে দিল পোডিয়ামে “এসেছে ক্যাপ্টেন।” তিনি এসেই ব্রিগেডের গোটা মাঠ দখলে নিয়ে নেওয়া উদ্বেলিত জনতাকে জানিয়ে দেন “খেলা হবে বলেছিল, সেই মাঠ দখল করতে এসেছি! গোটা মাঠের দখল যখন বামপন্থীরা নেয় তখন ডানদিকের লোকজনদের একটু অসুবিধা হয়।” সেইসঙ্গে বিজেপি-তৃণমূল দুইদলকেই বিঁধে তাঁর সদর্প ঘোষণা “এই ময়দানের লড়াইয়ে জাত, ধর্ম, খাদ্যাভাস বা লুঙ্গি পরেন না ধুতি এসব এজেন্ডা হবে না! লড়াই হবে শিক্ষার ও কাজের দাবীতে। কাজ, রুটি, রুজির জন্য। এই শর্ততেই মাঠের দখল নেবে মূল এজেন্ডার কারিগররা।” তিনি আরও বলেন “এই লড়াই টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু মাঝে মাঝে সিরাজের মতো খেলোয়াড় নামাতে হয়। যারা তিন দিনে খেলা শেষ করে দিতে পারে। ছাত্র যুবরা সেই মনোভাব নিয়ে নেমেছে।” মানে ক্যাপ্টেনের মতই পেপটক দিলেন উপস্থিত জনতাকে। দিলেন নীতি নৈতিকতার পাঠও। তৃণমূল সরকারের কাটমানিরাজকে বললেন “রাজনীতি মানে ২৫-৭৫ ভাগ নয়।” সেইসঙ্গে যোগ করলেন “কারা বলে বামপন্থীরা শূন্য। ওঁরা বামেদের ভয় পান। আমাদের রাগ নেই। ভয় নেই। কিন্তু আশঙ্কা রয়েছে, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ রুজিরুটির কথা বলছে কি না!” তারপরই লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে বললেন “বিজেপি সব বেচে দিচ্ছে। এরা রেল, জঙ্গল, নদী নালা সব বিক্রি করছে। দেশ বেচার কাজ যখন হয় তখন আমাদের কাজ দেশ বাঁচানোর।”

কিন্তু এতকিছুর পরেও ব্রিগেডের নস্টালজিক বাম জনতা জ্যোতি বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের খোঁজে। কারণ এনারা তো ভাষণ দিতেন না। মঞ্চ থেকেই উপস্থিত জনতাকে এনারা সাবলীল ভাষায় আলাপচারিতায় কি করতে হবে,কেন করতে হবে বোঝাতেন,আগামীর পথ নির্দেশ বাতলে দিতেন। আর তাই ‘রণক্লান্ত’ ক্যাপ্টেনের পর আবির্ভাব হলেন ব্রিগেডিয়ার সেলিম। তিনি একাধারে সিপিআই(এম)র রাজ্য সম্পাদক, পলিটব্যুরো মেম্বার এবং ডিঅয়াইএফআই প্রাক্তনী। বহু ব্রিগেড দেখেছেন। ভাষণ দিয়ে বহু ব্রিগেড কাঁপিয়েছেন। আজও সেটাই করলেন।

অসাধারণ বাগ্মীতায় শেষ পর্বের প্রায় আধ ঘন্টা চল্লিশ মিনিট একাই উপস্থিত লাখো জনতাকে মাঠে ধরে রাখলেন। দিদি-মোদি সেটিং, ১০০ দিনের কাজ চালু করায় বামপন্থীদের ভূমিকা, মোদির সেই ১০০ দিনের কাজকে গর্ত খোঁড়ার কাজ বলে দাগিয়ে দেওয়া, জি-২০ সম্মেলনে মমতাকে মোদির বিশেষ আমন্ত্রণ সবই উঠে এল ভাষণে। এমনকি দিল্লির বুলডোজার রাজনীতি থেকে মণিপুরের গণহত্যা অথবা উত্তরপ্রদেশের যোগীরাজ সবর্ত্রই কথার মায়াজালে অবাধে ঘুরে বেড়ালেন তিনি। উপস্থিত জনতা মাঠে ঠায় বসে থেকে তা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে মীনাক্ষীদের দেখিয়ে বললেন ‘বাংলার ভূতকে তাড়াবে এই যৌবনের দূতেরা’। দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও ছাড় দিলেন না, উপস্থিত জনতাকে বললেন “৫৬ নয়, ৩৫৬ নয়, মুষ্টিবদ্ধ হাত আপনারা যদি আকাশের দিকে তুলে ধরেন, মাথা উঁচু করে শপথ নেন, বাংলাকে বাঁচাতে, আমাদের শিল্প, কৃষ্টি, ঘর, মা-বোনদের ইজ্জত, ঐতিহ্য, ইতিহাস রক্ষার জন্য যদি এককাট্টা হন, কোনও দিল্লি পারবে না দেশকে বেচে দিতে।” এরপরই আসে তার সেই মাঠ কাঁপানো উক্তি “মেহনতি মানুষের কোন হিন্দু মুসলিম নেই।” তিনি বলেন “বামপন্থা দুর্বল হয়েছে বলা হচ্ছে। আসলে মেহনতি মানুষের ঐক্য দুর্বল হয়েছে।” এভাবেই একজন প্রকৃত ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মত মীনাক্ষীদের ইনসাফ যাত্রা ও ইনসাফ ব্রিগেডকে পৌঁছে দিলেন কাঙ্খিত গন্তব্যে। আর তাই আমাদের প্রতিবেদনের নামকরণ ক্যাপ্টেনের ব্রিগেডে ব্রিগেডিয়ার সেলিম।

চুম্বকে আজকের ব্রিগেডের পাওনা হলো এক, কে বড় চোর তাই নিয়ে তৃণমূল- বিজেপির তু-তু-ম্যায়-ম্যায় থেকে বেরিয়ে অনেকদিন পর শোনা গেল শিক্ষা ও কাজের দাবী, দৈনন্দিন জীবনের রুটি-রুজির লড়াইয়ের বয়ান। দুই, লুঙ্গি-টুপি, গীতাপাঠ-চন্ডীপাঠের প্রতিযোগিতা দূরে সরিয়ে জানা গেল মেহনতি জনতার হিন্দু-মুসলমান নেই। আর তিন, বাম নেতারা অনেকদিন পর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে বিজেপি আর তৃণমূল দুজনকেই এক বন্ধনীতে রেখে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়ে গেলেন যা বহুদিন পর জনসমক্ষে এত্তবড় মঞ্চে জনতা দেখতে পেলো।

আর শেষ লগ্নে নস্টালজিক জনতার উদ্দেশ্যে মঞ্চ থেকে পাঠ হলো রবি ঠাকুরের কবিতা আঁকড়ে ধরে বাংলা ও বাঙালির আবেগ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বার্তা -‘যেখানে ডাক পড়ে,জীবন-মরণ ঝড়ে, আমরা প্রস্তুত’। আপাতত ‘ইনসাফ’ এর লড়াই হিট। কিন্তু বামেদের যৌবনের দূতেরা ঠিক কতটা প্রস্তুত তা দেখবার ও বোঝবার জন্য আমাদের চোখ থাকবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস