বোঁচকার দিকে / Birds of a feather flock together
‘‘এই যে আজকে এত বড় সমাবেশ, আপনারা আমার কথা লিখে রাখুন, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে আবার কিছু একটা করবে। ২১ জুলাই আমাদের সমাবেশ হল। ২২ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেওয়া হল। ২২ জুলাই কেন? কেন ২৩ জুলাই নয়। কেন ২৪ জুলাই নয়?’’
“পার্থ চোর কিনা সেটা বিচার হবে। তাই বলে কেষ্ট চোর, ববিও চোর, অরূপও চোর, অভিষেকও চোর, মমতা ব্যানার্জিও চোর, মেয়ো রোডও চোর, রেড রোডও চোর? আর তোমরা সব সাধু?”
“পার্থর দোষ হলে মমতাকে টেনে আনবে, ববির ব্যাপার হলেও মমতা ব্যানার্জিকে টেনে আনবে…!”
‘‘কেষ্টর মতো হেল্পফুল ছেলে আমি খুব কম দেখেছি।’’
‘‘এই তো আজকের সভায় অভিষেক খুব ভাল বক্তৃতা করেছে। এ বার হয়তো আজ অথবা কাল ওকে কোনও সংস্থা নোটিস ধরাবে। অভিষেককে তো আগেও দু’বার নোটিস ধরিয়েছে। এমনকি, নোটিস ধরিয়েছে ওর বউকেও। কিন্তু এ বার তো মনে হয় ওর দু’বছরের ছেলেকেও নোটিস ধরাবে। ওকেও নোটিস ধরিয়ে দেখুক দু’বছরের ছেলেটাও কতটা শক্ত হয়েছে।’’
“হঠাৎ যদি কাল দেখেন ববির অত সম্পত্তি পাওয়া গেছে, তাই ববিকে অ্যারেস্ট করবে, বুঝবেন সব সাজানো। টোটালটাই সাজানো।”
এই ছিল চুম্বকে আজকে শাসকদলের ছাত্র সমাবেশের বার্তা! শুনলাম সমাবেশে ঠাসাঠাসি কালো মাথার ভিড়। তা এই ভিড়টা কি বার্তা পেল!
সারাটাক্ষণ শুধুই চোর, চুরি আর ধরা পড়বার আশঙ্কা! ভাষণের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি দাওয়া নিয়ে এক লাইনও কোন নেতা-নেত্রী বলেছেন বলে শাসকের অতি সহৃদয় বন্ধুও দাবি করতে পারবেন না।
প্রথমসারির সবকটা সংবাদমাধ্যমও একযোগে আমাদের যা জানালো তা হল, নেত্রী খোলস ছেড়ে বেরোতে বলছেন! স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে দল ও নেতাদের দিকে চোর-চোর রব ধেয়ে এলেই প্রতিরোধ করতে হবে। কিন্তু তারাও আজকের ছাত্র সমাবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সংক্রান্ত বা কর্ম সংস্থান সম্পর্কে কোন দাবি দাওয়া নিয়ে ইতিবাচক কোন প্রতিশ্রুতি বা আলোচনা হয়েছে এমনটা বলতে পারছে না।
এমনকি বিগত পরীক্ষার মরশুমে অফ-লাইন পরীক্ষা দেওয়াতে অনীহা প্রকাশ করে এক শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমেছিলেন যাদের পিছনে শাসকদলের প্রচ্ছন্ন মদত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এব্যাপারেও সর্বোচ্চ নেতৃত্বের তরফে কঠিন নিয়মানুবর্তিতার সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়ার আদর্শ দিন ছিল আজ। তাছাড়া স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি নিয়ে বেআইনি ভাবে যে দেদার টাকা তোলা হয়, সংশ্লিষ্ট শাসক ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংসদের নেতাদের মাধ্যমে তাতেও লাগাম টানবার বার্তা দেওয়া যেত। ফিরিস্তি দেওয়া যেত কর্মসংস্থানের যে সব সুযোগ রাজ্যে ইতিমধ্যেই রয়েছে তার বা দু-চারকথা বলা যেত নতুন নতুন যে সব সুযোগ তৈরি হতে চলেছে আগামী দিনগুলিতে তা নিয়েও। কিন্তু না ! সেসব কিছু নেই!
কেন নেই? জিজ্ঞেস করাতে আমাদের এক সহৃদয় বন্ধু জানালেন সবসময় “চোরের মন বোঁচকার দিকে” থাকায়, “ঠাকুর ঘরে কে” বললে নাকি “আমি তো কলা খাইনি” জাতীয় উত্তরই সে দিয়ে ফেলে।
আর সেই সূত্র মেনেই প্রাথমিকতা পেল গরু পাচার/কয়লা পাচার ইত্যাদি অসাধু কাজকর্ম এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানোউতর। যা শুনলে অবধারিতভাবে মনে হবে আমার দলের নেতাকে গরু পাচার কান্ডে গ্রেপ্তার করলে কি হবে, সেই নেতার মেয়ে-বউ বা ড্রাইভার-দেহরক্ষীদের নামে-বেনামে বিপুল কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেলে কি হবে, একাজে আমরা একা নই, আমাদের একা চোর বলবেন না, এই কাজে বিএসএফ তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জড়িত! বরং আমাদের যে নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে সে খুবই হেল্পফুল! তবে সেই নেতা বাংলা ও বাঙালীর উন্নয়নে ঠিক কি কি হেল্প করেছেন সেটা কোন অজ্ঞাতকারণে উহ্য রইল! তবে এরপরও দাঁড়িয়ে রইল ছাত্রছাত্রীদের ভিড়টা। কারণ একদল দুষ্টু লোকের দাবি ভিড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় তাদের বাবা-কাকা, দাদা-দিদিরা সংখ্যার ভারি ছিলেন। আর সেটা দেখেই সুচারুভাবে যে বার্তাটা দেওয়ার চেষ্টা হল, সেটা হল চুরি জোচ্চুরির দায়ে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে, খোলস থেকে বেড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করবার বার্তা। পুলিশ এলে মনে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আদালত রায় দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ দাগী অপরাধী নয়। এমনকি পার্থও নয়!
আশাকরি উপস্থিত গুরুজনরা তাদের বাড়ির কচি-কাঁচাদের কাছে এমন দুর্মূল্য বার্তা পৌঁছে দিয়ে লড়াকু মানসিকতা নিয়ে চৌর্য্যবৃত্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করবেন। কারণ ধরা পড়লে বা বিপদে পড়লে কিন্তু দল পাশে দাঁড়াবে না, নিজের লড়াই নিজেকে লড়তে হবে। যাঁরা আমাদের কথা বিশ্বাস করছেন না, তাঁদেরকে জানিয়ে দিই, আজই কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার পরিজনের অস্বাভাবিক সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়েও একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই মমতা আজ মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর পরিবারের ছয় ভাই ও দুই বোন রয়েছে। তাঁরা সবাই এখন আলাদা থাকেন, কিন্তু কোনও উৎসব হলে তাঁরা এখন একত্রিত হন। এটুকুই সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের।
মানে বার্তাটা স্পষ্ট! এই সমস্ত পরিজনদের সম্পত্তিতে কোন গরমিল পাওয়া গেলে, মুখ্যমন্ত্রী তার দায় নেবেন না। কারণ তিনি এসব দেখভাল করেন না, জানেন না।
শুধু ভাইপো বড়ই আদরের! তার জন্য এক্সট্রা কয়েক মাইল হাঁটাই যায়। এক্সট্রা কিছু গা-গরম করা কথা বলাই যায়।
আর আছে ববি। এর হয়ে দুকথা না বললেই নয়। হাজারহোক মাননীয়ার মন্ত্রীসভার সংখ্যালঘু মুখ। তিনি স্পষ্ট জানালেন ওকেও নাকি “সাজানো” ঘটনাতে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। সব পূর্বপরিকল্পিত।
আর এসব দেখেই বাজারে কানাঘুষো শুরু হয়েছে, এবারে পুজোর কেনাকাটার ফাঁকে নাকি “ববি ২.০” দেখা যাবে! আর তারপর নাকি আসতে চলেছে “পরিবার ২.০”, তবে তাতে বুম্বা দা বা মিঠুন থাকবে না এই যা!
ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস
তথ্যসূত্র
a) https://www.anandabazar.com/west-bengal/this-time-abhishek-banerjees-two-year-old-son-will-also-be-noticed-said-mamata-banerjee-dgtl/cid/1366229
b) https://www.thewall.in/news/partha-chatterjee-will-be-judged-if-he-is-guilty-how-dare-they-say-abhishek-is-guilty-says-mamata-banerjee/?utm_source=pushnotification_feedify&utm_medium=webpush_feedify&utm_campaign=
c) https://www.anandabazar.com/west-bengal/tmc-mp-abhishek-banerjee-slams-home-minister-amit-shah-in-tmcpsd-meeting-dgtl/cid/1366215
d) https://www.anandabazar.com/west-bengal/abhishek-banerjee-says-after-tmcps-successful-rally-central-agency-may-get-active-again-dgtl/cid/1366217
e) https://www.thewall.in/news/mamata-banerjee-said-that-all-of-this-conspiracy-of-bjp/?utm_source=pushnotification_feedify&utm_medium=webpush_feedify&utm_campaign=
আশরাফ আলি সেখ
খুব সুন্দর লেখা। ভাল লগলো খুব।