ঝোলা থেকে বেরোলো বেড়াল / The Paper Tiger

আমাদের দেশের মিডিয়ার বেহাল বিক্রি হয়ে যাওয়া দশাটা আর চোখে দেখা যাচ্ছে না। ভোটটা ত্রিপুরার মত উত্তর-পূর্বের ছোট অঙ্গরাজ্যের, তাই সেভাবে সামনে এল না। কিন্তু সত্যিটা হল এই যে, বঙ্গ মিডিয়ায় ত্রিপুরার উপনির্বাচন ঘিরে রাজ্যের শাসকদলকে যেভাবে পরিকল্পিত ভাবে ফুটেজ খাওয়ানো হচ্ছিল, তাতে বাংলার বৃহৎ অংশের জনগণ ভাবছিলেন ত্রিপুরাতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এর আগে ঠিক একই কায়দায় আমাদের রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে ৭ থেকে ৭৭ পৌঁছে দিতে তারা সক্ষম হয়েছে। কাজেই সেই একইভাবে ত্রিপুরাতেও সলতে পাকানোর কাজ চলছিল। বলা হচ্ছিল এটাই নাকি ত্রিপুরার আগামী বিধানসভা ভোটের সেমিফাইনাল! আর সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে “অভিষেক” হতে চলেছে।

কিন্তু ত্রিপুরার মানুষ তো আর বাংলার টিভি চ্যানেল/খবরের কাগজ পড়েন না। তাই বেড়ালকে বাঘ ভাবেননি। আর সেটাই ফলাফল সামনে আসতেই দিনের আলোর মত পরিষ্কার, ২০২৩ এর রাজ্য বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের তেমন কোন ভবিষ্যৎ নেই, যদি না তারা ঘোড়া কেনাবেচা করে সুদীপ রায় বর্মনদের মত একগুচ্ছ দলবদলু ঘোড়াদের নিজের আস্তাবলে ধরে আনতে না পারেন! কারণ এই উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে জুটেছে মাত্র ২.৮৫% ভোট। সেখানে বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস পেয়েছে যথাক্রমে ২২% ও ২০% ভোট। কাজেই শাসকের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা তো দূর অস্ত, প্রধান বিরোধী হওয়ার থেকেও তৃণমূল কংগ্রেস শত যোজন দূরে। বামেরা এখনও ত্রিপুরা রাজ্যে দ্বিতীয় বড় শক্তি।

কেন্দ্রবিজেপি কংগ্রেস বামফ্রন্ট তৃণমূলনির্দলনোটা
আগরতলা৩৫.৫৭%৪৩.৪৬%১৬.৯৭%২.১০% ০.৪৭%১.০২%
যুবরাজনগর৫১.৮৩% ৩.৯৮%৩৯.২০%২.৯৮% ০.৯৩%১.০৯%
সুরমা৪২.৩৪%২১.৩৬%৩.৪০%৩০.৭০%১.০০%
টাউন বরদোয়ালী৫১.৬৩%৩৩.২৯%১০.১৫%২.৯৬% ০.৫০%১.০৮%
সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান দেখতে ডান থেকে বামে স্ক্রল করুন

এখন এই রকম বাস্তব পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলার মিডিয়া কেন শাসক তৃণমূলের হয়ে লাফালাফি করল, সেটা আলাদা করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। দেশের মিডিয়াও কেন বিজেপির হয়ে গলা ফাটায়, সেটা দেশের বিভিন্ন মিডিয়া ব্যারনদের বিজেপির টিকিটে সাংসদ হওয়ার মধ্যেই নিহিত আছে। কিন্তু এমনও একদিন আসবে যেদিন এই সমস্ত শাসক পদলেহন করা মিডিয়া অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। কারণ মিডিয়া নয়, মানুষই ইতিহাস রচনা করে। এই যে চ্যানেলে-কাগজে শাসক বন্দনা চলছে, মানুষের মগজে শাসক ও বিরোধী কারা হবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে দেওয়ার খেলা চলছে, এই খেলাও একদিন শেষ হবে। মনে রাখতে হবে, সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্ব তাঁদের নির্ভিক সাংবাদিকতার মধ্যেই নিহিত আছে। এমনিতেই সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদমাধ্যমগুলোর কফিন তৈরি করে ফেলেছে, পয়সা খেয়ে গুটিকয় রাজনৈতিক দলের স্তাবকতা আসলে সেই কফিনেরই পেরেক মাত্র।

কাজেই নিজেদের বাঘ ভাবাটা বন্ধ করুন। আপনারা সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে খবর পরিবেশন করুন। মানুষ জানে, জীবনের চোখে চোখ রেখে কাউকে ভয় না পেয়ে এগিয়ে যেতে। এভাবেই মানব সভ্যতা এগিয়েছে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস