পয়সা দো ডিগ্রি লো / The Whitepaper

কোড়া কাগজ বা সাদা খাতা, এই মুহূর্তে সমাজে এমন এক কঠিন অসুখ যা সবাইকে ভুগিয়ে তুলেছে। পশ্চিমবঙ্গের SSC কেলেঙ্কারি ও ভারতের NEET কেলেঙ্কারি দুটোই সমাজে সৃষ্ট এবং আলোড়িত দুর্নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এদিকে, সাধারণ মানুষের অনেকেই সবকিছু দেখে-বুঝে কেবল “ওরা সব সাফ করে দিল” অথবা “আমরা কিছুই পাইলাম না” বলে চুপ করে থেকেছেন, যেন কোথাও কিছুই হয়নি।

ধরা যাক, SSC কেলেঙ্কারির একজন প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছেন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তার দায়িত্ব ছিল শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করা, কিন্তু তিনি তা না করে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফলে শিক্ষকের পদে নিয়োগ হলেন ওনার গিন্নির জামাইবাবুর বন্ধু। দুর্নীতির এমন চক্রে ধরা পড়েন কেউ কেউ। বাকিরা প্রয়োজন মত দল পাল্টে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বসে বাগড়ম্বর টিআরপি বাড়িয়ে চলেন দিনের পর দিন।

অন্যদিকে, NEET কেলেঙ্কারিতে প্রশ্নফাঁস হল অনেকটা কাব্যিকভাবে। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র পেতে রীতিমত “পিসি সরকারের জাদু” ব্যবহার হল। একদিন সকালে, মেধাবী ছাত্র দিলীপ যখন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ দেখা গেল তার পরম বন্ধু শুভেন্দু তার পকেট থেকে প্রশ্নপত্র বের করে বলছে, “এটা নে বন্ধু, পরীক্ষার আগে একটু দেখে নিস।”

এতসব কেলেঙ্কারির পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্থিতাবস্থা কেন? কারণ তারা এই দুর্নীতির সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। একেবারে “গেলো গেলো” রব তুলে কোন লাভ হবে না, তাই চুপ করে বসে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন তারা। এছাড়া, তারা জানেন যে প্রশাসন তাঁরা নির্বাচিত করেছেন, তারা কথায় কথায় বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই করবে না, আর তাদের প্রতিবাদ সময়ের সাথে সাথে কেবল আকাশে বাতাসে মিশে যাবে। যেমন ব্যাপম দূর্নীতি বা সারদা-নারদা তদন্ত।

এখন বলুন, যখন মানুষের বিশ্বাসের জায়গা এমন দুর্বল হয়ে গেছে যে তারা দুর্নীতিকে “গা সওয়া” বলে মনে করছেন, তখন তাদের জাগানো অত্যন্ত কঠিন। তবে সবসময় একটু আশা থাকে। আপোষহীন এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সঠিক সময় আর সামান্য বিশ্বাস থাকলে হয়তো এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু যতদিন না আমরা সকলে মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামব, ততদিন এই স্থিতাবস্থা থেকেই যাবে। তাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে, না হলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে আমরা কি উপহার রেখে যাচ্ছি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই!

কোনো এক গোপাল বলেছিলেন, “হোয়াট বেঙ্গল থিংক্স টুডে, ইন্ডিয়া থিংক্স টুমরো।” আর আজ কপালের নাম গোপাল। বাঙালী এখন ভাবেই না, কাজেই গোটা দেশকে ভাবানো বাঙালীর সাধ্যের বাইরে। সবই ভবিতব্য হিসেবে বাঙালী মেনে নিয়েছে। গোলেমালে মাল কামানো এখন বহু বাঙালীর নেশা ও পেশা। মাল যেদিকে, বাঙালী সেদিকে। বঙ্গ “অস্মিতা” তাই এখন মাল কামাও লাইফ বানাও।

দিদি দিয়েছে সাদা খাতা জমা দিয়ে পাশ করা শিক্ষক। দাদা দিচ্ছে যথেচ্ছ পরিমাণে গ্রেস মার্ক পাইয়ে দিয়ে পাশ করা ডাক্তার। কিন্তু সবার বাড়ির ছেলে মেয়ে তো SSC-NEET পরীক্ষায় বসে না। তাই ফেলো কড়ি মাখো তেলের জয় জয়কার সর্বত্র। আর এই অভ্যেস একবার লাগালে, তা ছাড়ানো বেজায় কঠিন।

বেলাশেষে একটি কথা বলে যাই, সেটিং সবসময় আলোচনা করে হয় না। ওটা কোইন্সিডেন্টালি সমমনস্কদের মধ্যে এমনি এমনি হয়েই যায়। আর সাধারণ মানুষের প্রাপ্তির ঝুলিতে থাকে অশিক্ষিত শিক্ষক ও Doctored Doctors।

প্রতিবেদনের নামটা হিন্দিতে দিয়েছি। কারণ সিপিআই(এম) নাকি ইংরাজী তুলে দিয়েছিল। তাই যদি বুঝতে না পারেন… তাই হিন্দীতে।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস