আকাশকুসুম / Perception-ology

সম্ভাবনার শিল্প কাহারে কয়, তাহা আপনাদের নুতন করিয়া বলিবার কিছু নাই। চারিদিক সম্ভাবনাময়। সপ্তাহখানেক আগে যাহা হইবে বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিল ভারতবাসী, তাহাই আজ অট্টহাসির উদ্রেক ঘটাইতেছে। যাহার গ্যারান্টি কাল ছিল ৪০০, তাহারাই আজ ২৪০। কিছু কাল পূর্বে যে সর্বভারতীয় দলের ৪০টি আসনে জয়লাভ করিবার সম্ভবনা দেখা যাইতেছিল না, তাহারা আজ ৯৯। আর যিনি প্রথম সেই সম্ভাবনার প্রসঙ্গ তুলিয়াছিলেন, তিনি অবশেষে নিজ বাগানের ফুল সস্নেহে তুলিয়া দিয়াছেন ৯৯-এর হাতে। এই প্রসঙ্গে অবধারিত ভাবে বলিতে পারা যায়, আজ যাহা আকাশকুসুম, তাহাই কাল ধ্রুব সত্য। এই ভাবেই দেশে প্রতিনিয়ত পালটাইতেছে রাজনৈতিক আঙ্গিক।

এমনই এক আকাশকুসুম ভাবনার উদ্রেক হইয়াছে রাইজ অফ ভয়েসসের সদর দপ্তরে। প্রসঙ্গ অযোধ্যা।

গত মাঘে সাড়ম্বরে দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধিত হইয়াছিল ফৈজাবাদ লোকসভার অন্তর্গত অযোধ্যার অসম্পূর্ণ রাম মন্দির। গোটা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা উদ্বেলিত হইয়াছিল সেই আনন্দে। কিন্তু হায়! কয়েকমাস কাটিতে না কাটিতে এক মাঘের শীতের সেই আনন্দ আজ পর্যবসিত হইয়াছে চরম দুঃখে।

কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত অযোধ্যা নগরীতে পরাজিত অসম্পূর্ণ রাম মন্দিরের উদ্বোধকের দল, ভারতীয় জনতা পার্টিকে। তাহাদের ছাপাইয়া ফৈজাবাদ লোকসভায় বিজয়ী হইয়াছে ইন্ডিয়া জোটের দল, সমাজবাদী পার্টি। যাহা ২০২৪ ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনে সম্ভবত প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

ইতিমধ্যে এই ফলাফল আসিবার পর প্রায় এক পক্ষকাল কাটিয়া গিয়াছে। অদূর ভবিষ্যতে যদি সমাজবাদী পার্টির বিজয়ী প্রার্থীকে সাথে লইয়া ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য দলগুলি অযোধ্যা রাম মন্দির দর্শনে যান, সেক্ষেত্রে কি হইতে পারে, তাহা কি কেহ ভাবিয়া দেখিয়াছেন?

দেশের কয়েকটি ধর্মস্থান ব্যতীত, প্রায় সকল ধর্মস্থানেই জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে প্রবেশ অবাধ, সেক্ষেত্রে ইহা এমন কিছু অসম্ভব নহে। এই প্রবন্ধে আগেই উল্লেখ করা হইয়াছে, আজ যাহা আকাশকুসুম, তাহাই আগামীকাল ধ্রুব সত্য।

ফৈজাবাদ লোকসভার অন্তর্গত অযোধ্যার রাম মন্দির এক অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান, যাহা ভারতের ইতিহাস ও রাজনীতির সহিত গভীরভাবে জড়াইয়া গিয়াছে। যদি ইন্ডিয়া জোটের নেতা-নেত্রীবর্গ সেই পবিত্র স্থানে অযোধ্যাসহ দেশের ২৩৪ কেন্দ্রের জয় উদযাপন করিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তাহা হইলে চারিদিক হইতে নিশ্চিত প্রতিক্রিয়া আসিতে বাধ্য।

ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া:

ধর্মীয় সৌহার্দ্য:
ইন্ডিয়া জোটের জয় উদযাপন একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতে পারে, যদি অযোধ্যার মন্দির এবং সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত মসজিদ কমিটির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দলের নেতারা একত্রিত হইয়া দেশের মানুষের ভাবাবেগকে সম্মানিত করেন, সেক্ষেত্রে ইহা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হইতে পারে।

রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন:
ইন্ডিয়া জোট হিসেবে এই ধরনের উদযাপন তাহাদের শক্তি ও ঐক্যের প্রদর্শন করিতে পারে।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া:

ফৈজাবাদের বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া:
ফৈজাবাদ লোকসভার বর্তমান বিরোধী দল, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তাহাদের সমর্থকরা এই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিবার চেষ্টা করিতে পারেন, এবং যাহা নতুন সংঘাতের সৃষ্টি করিতে পারে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত:
কিছু মানুষ এই ঘটনাটিকে বিশেষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে দেখিতে পারেন। অযোধ্যার ন্যায় সংবেদনশীল স্থানে দেশের বিরোধী দলগুলির এই ধরনের উদযাপন সংঘাতের সৃষ্টি করিতে পারে, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

মিডিয়া ও জনমতের প্রতিক্রিয়া:

গণমাধ্যম এই ঘটনাটিকে রাম মন্দিরের উদ্বোধনের ন্যায় বিশালাকায় করিয়া জনসমক্ষে তুলিয়া ধরিতে পারে, এবং যাহা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ ও নুতন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

এছাড়াও এই ঘটনা ঘটিলে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হইতে পারে। কিছু মানুষ ইহা দেখিয়া জয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হইতে পারেন, কেহ বেদনার বালুচরের অতলে নিমজ্জিত হইতে পারেন।

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: অযোধ্যার ন্যায় সংবেদনশীল স্থানে যেকোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, যাহাতে কোনরূপ অশান্তি বা বিরোধ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি না হয়।

ধন্যবাদান্তে
রাইজ অফ ভয়েসেস